প্রতিবাদকারীরা সেনা হত্যা করেছে: পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর
৩০ জুলাই ২০২৪
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে, দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর গোয়াদরে প্রতিবাদকারীরা সোমবার একটি মিছিল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে অন্তত একজন সেনাকে হত্যা এবং ১৬ জনকে আহত করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
একটি জাতীয়তাবাদী জাতিগত বালুচ আন্দোলন গত কয়েকদিন ধরে বন্দর নগরীটির মহাসড়ক অবরোধ করে তাদের গ্রেপ্তারকৃত সদস্যদের মুক্তি দাবি করছে৷ তাদের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের আন্দোলনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে৷
সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, প্রতিবাদকারীরা তাদেরকে পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত সেনা সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা করেছে৷ ‘‘সহিংস প্রতিবাদকারীদের বিনা প্ররোচনায় হামলায় একজন সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬ সৈনিক আহত হয়েছেন,'' এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বাহিনীটি৷
এদিকে, বালুচ আন্দোলনের নেতা বেবার্গ বালুচ জানিয়েছেন যে, সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছিল৷ সেসময় নারী এবং শিশুসহ অনেকে আহত হন৷
তবে সেনাবাহিনীর উল্লেখ করা হতাহতের ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি৷
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমের বালুচিস্তান প্রদেশের সঙ্গে ইরান এবং আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে৷ সেখানে বিচ্ছিন্নতবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে৷ এসব গোষ্ঠী দাবি করেছে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের বড় হিস্যা পেতে তারা লড়াই করছে৷
প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা বিদেশি বিনিয়োগকারী একটি দলের সফর বন্ধ করতে ‘ষড়যন্ত্র' করছেন৷ আগামী সপ্তাহে দলটির এই প্রদেশের গোয়াদর শহর সফর করার কথা রয়েছে৷
উল্লেখ্য, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট' প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যার একটি অংশ গোয়াদর বন্দরের উন্নয়ন এবং আরো কিছু প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে৷
এআই/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
ইমরান খানের দল নিষিদ্ধ করতে চায় পাকিস্তান সরকার
দেশটির সরকার বলছে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নিষিদ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দেশটিকে অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ছবি: Rizwan Tabassum/AFP/Getty Images
পিটিআই নিষিদ্ধের তোড়জোড়
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতা তারার জানিয়েছেন, জেলে থাকা ইমরান খানের দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিবে তার সরকার। এরই মধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, "এ ব্যাপারে প্রয়োজনে মন্ত্রিসভা এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শও নেয়া হবে।"
ছবি: Rizwan Tabassum/AFP/Getty Images
কেন এ সিদ্ধান্ত?
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পিটিআইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পক্ষে তার সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে। ইমরান খান এবং তার দলের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, দাঙ্গা উসকে দেয়া এবং রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচার করা। অবশ্য এসব অভিযোগ শুরু থেকেই 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে এসেছেন কারারুদ্ধ ইমরান খান।
ছবি: Banaras Khan/AFP/Getty Images
ইমরান খানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এখনও তিনি কারাগারেই রয়েছেন। ইমরানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার বেশ কয়েকটিতে অভিযোগ গঠনও করা হয়েছে। তবে অনেক মামলাই উচ্চ আদালত খারিজ করেছে, অথবা সাজা দিয়ে ঘোষণা করা রায় বাতিল করেছে। কয়েকদিন আগে তৃতীয় বিয়ে নিয়ে করা এক মামলায় তার সাজা খারিজ করে খালাস দিয়েছে একটি আদালত।
ছবি: Abdul Majeed/AFP
পিটিআই-এর পক্ষে রায়
এ বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনে পিটিআইকে অংশ নেয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হন। তারপরও দলটির ৯৩ জন সদস্য নির্বাচনে জিতে সবচেয়ে বড় বিরোধী গ্রুপ হিসাবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গিয়েছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, অন্তত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অন্তত ২০টি আসন থেকে অন্যায়ভাবে পিটিআইকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo//picture alliance
সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিরোধীদের মন্তব্য
ইমরান খানের উপদেষ্টা জুলফিকার বুখারি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, পিটিআইকে নিষিদ্ধ করা হলে "নিজের পায়েই কুড়াল মারবে সরকার"। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, "সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টও পিটিআইকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বৃহত্তম দল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।"
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
রাজনীতি বিশ্লেষক জাহিদ হুসাইন ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এই পরিকল্পনা "দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে" এবং "সরকারের নিজের পতনের কারণ হতে পারে"। তিনি বলেন, "পাকিস্তানে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ঘটনা খুবই বিরল।" সংবিধান বিশেষজ্ঞ ওসামা মালিক অবশ্য মনে করেন পিটিআই ক্ষমতায় থাকার সময় ইসলামিক চরমপন্থি দল টিএলপিকে নিষিদ্ধ করে নিজেরাই নজির তৈরি করেছে। তবে এর সমাধান সুপ্রিম কোর্টেই হবে বলে মনে করেন তিনি।