1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিবাদী চিকিৎসকের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ রাজ্য

২৩ জানুয়ারি ২০২৫

আরজি কর কেন্দ্রিক আন্দোলনের সামনের অংশে রয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের মধ্যে অন্যতম মুখ আশফাকুল্লা নাইয়া। তার বাড়িতে পুলিশি অভিযান আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ভারতের কলকাতার জুনিয়র চিকিৎসক আশফাকুল্লা নাইয়া
আরজি কর নিয়ে আন্দোলনের অন্যতম মুখ আশফাকুল্লা নাইয়ার বাড়িতে পুলিশি অভিযান আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছেছবি: Satyajit Shaw/DW

নাইয়ার বিরুদ্ধে গত ৯ জানুয়ারি বিধাননগরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তাতে বলা হয়, এমবিবিএস পাশ হলেও তিনি প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে নাকি ব্যবহার করছেন ‘এমএস ইএনটি' ডিগ্রি। অর্থাৎ আরজি করের চিকিৎসক আশফাকুল্লা ভুয়ো ডিগ্রি ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ।

আশফাকউল্লার বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি

সামাজিক মাধ্যমে নাইয়ার নাম সম্বলিত একটি ক্লিনিকের প্রচারপত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা যায়, চিকিৎসকের নামের পাশে বিশেষজ্ঞের ডিগ্রি লেখা রয়েছে।

এরই তদন্তে গত সপ্তাহে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নাইয়ার বাড়িতে যায় পুলিশ। কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানা রামতনুনগর এলাকায় চিকিৎসকের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। একই ইস্যুতে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছেও একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তা নিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আশফাকুল্লাকে চিঠি দেওয়া হয়। সাতদিনের মধ্যে তাকে দেখা করতে বলেছে কাউন্সিল। 

পুলিশের পক্ষ থেকেও মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি এমবিবিএস এবং এমএস ইএনটি কি না। কাউন্সিল জানিয়ে দিয়েছে, তিনি এমবিবিএস। ইএনটি অর্থাৎ নাক কান গলার বিশেষ শাখা যার বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য পৃথক পড়াশোনা করতে হয় ডাক্তারি পড়ুয়াদের। এমএস-এর অর্থ মাস্টার অফ সার্জারি, অর্থাৎ যারা এই ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিধাননগর থানায় অভিযোগকারীর দাবি, এমন কোনো ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণ নাইয়ার নেই।

প্রতিহিংসার পাল্টা দাবি 

ভুয়ো ডিগ্রির অভিযোগ ও বাড়িতে পুলিশি অভিযানকে সন্ত্রাসের তকমা দিয়েছেন আশফাকুল্লা। আঙুল তুলেছেন পুলিশের দিকে। তিনি বলেন, "আমি বিধাননগর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে থাকি। আমার কাছে না এসে, পুলিশ কেন ১০০ কিলোমিটার দূরে আমার বাড়িতে গেলো, বুঝতে পারছি না। এখন ভয় পাচ্ছি, বাড়ির ভিতরে পুলিশ কিছু রেখে দিয়ে, আমার নামে যেন দোষ না চাপিয়ে দেয়।"

বিধাননগরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অনীশ সরকারের বক্তব্য, "আশফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তের জন্য আদালত থেকে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েই পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল।"

এটা যে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত অভিযোগ, সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে: অনিন্দ্য মণ্ডল

This browser does not support the audio element.

একে পুলিশি সন্ত্রাস আখ্যা দিয়েছে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। আরজি করের ধর্না মঞ্চে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। আন্দোলনকারী চিকিৎসক অনিন্দ্য মণ্ডল ডিডাব্লিউকে বলেন, "আরজি কর আন্দোলন দুনিয়ার নজর কেড়েছে। যারা এই আন্দোলনের নেতা, তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। নাইয়া কোথাও নিজেকে বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেননি। আদালত এই প্রশ্নটাই তুলেছে। এটা যে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত অভিযোগ, সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।"

আরজি করের চিকিৎসক পড়ুয়া আশফাকুল্লাকে ধর্না মঞ্চ, মিছিল থেকে শুরু করে টেলিভিশন বিতর্কে নিয়মিত দেখতে পাওয়া যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে চিকিৎসকদের যে প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিল, সেই দলের সদস্য ছিলেন আশফাকুল্লা।

আদালতের মন্তব্য 

পুলিশের নোটিস পেয়ে গ্রেপ্তারি এড়াতে নাইয়া কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান। বুধবার এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে। সেখানে প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা।

যে ক্লিনিকের প্রচারপত্র সামনে আসায় বিতর্ক, সেটি নিয়েই আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েন রাজ্যের আইনজীবী। বিচারপতি বলেন, "এমন কোনো প্রেসক্রিপশন বা লেটারহেড পাওয়া যায়নি যেখানে অভিযুক্ত নিজেকে ইএনটি বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেছেন।" তিনি জানতে চান, যে বিজ্ঞাপনে তথাকথিত ভুয়ো ডিগ্রি লেখা রয়েছে, সেটা কোথা থেকে পুলিশ পেয়েছে। 

রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "সামাজিক মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করে এই প্রচারপত্র তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।" এই জবাবে বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি ঘোষ বলেন, "একটা অভিযোগ হাতে এলো আর তার ভিত্তিতে গবেষণা শুরু হয়ে গেলো! এভাবে তদন্ত করা যায় কি? তার ভাষায়, "এক পাতার একটা অভিযোগ পেলেন, আর এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে দিলেন! তথ্যপ্রমাণ কোথায়?"

রাজ্যের আইনজীবীর বক্তব্য, ''বিবেচনা করার মতো অপরাধ হয়েছে বলে তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের প্রেসক্রিপশন অভিযুক্ত চিকিৎসক ব্যবহার করেছেন। সুতরাং তিনি জানতেন, কী ডিগ্রি তার নামের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছিল।" এজন্য ক্লিনিকে তল্লাশির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সরকারি কৌঁসুলি।

যদিও এদিনের শুনানির পর নাইয়াকে স্বস্তি দিয়েছেন বিচারপতি। এই মামলায় পুলিশি তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তিনি। আগামী ছয় সপ্তাহ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিচারপতি বলেছেন, "আপনারা সাধারণ মানুষের অভিভাবক। কিন্তু রাজ্য যদি তার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের উপর প্রয়োগ করা শুরু করে, তা হলে তারা কোথায় যাবেন।"

আদালতের পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়ে সিনিয়র চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। মেডিক্যাল কাউন্সিল অভিযোগটি খতিয়ে দেখছে। কিন্তু এটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরই তার বাড়িতে পুলিশ গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। চিকিৎসক যে ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত সেখানে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেত। কিন্তু এভাবে পুলিশ পাঠিয়ে দেওয়া বিরল ঘটনা। এর কঠোর নিন্দা করছি। এরপর আদালত যা পদক্ষেপ নেবে, আমরা মেনে নেব।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ