1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিভাধর নারী নেত্রী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মমতাজ

২ জুলাই ২০১১

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছাত্রী জীবনের সংগ্রামী কর্মকাণ্ডের নিকটতম সঙ্গী মমতাজ বেগম৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি তৈরির কাজে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের ভেতরে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বীর নারী৷

Title 1 : Prof. Momtaz Begum, Freiheitskämpferin, Dhaka, Bangladesch Bildunterschrift: Prof. Momtaz Begum, Freiheitskämpferin, Dhaka, Bangladesch Text: Prof. Momtaz Begum, Freiheitskämpferin, Dhaka, Bangladesch Datum: 09.11.2009 Eigentumsrecht: Prof. Momtaz Begum, Dhaka, Bangladesch Stichwort: Prof,, Momtaz, Begum, Freiheitskämpferin, Dhaka, Bangladesch, Freedom, Fighter, War, Liberation, Bangladesh, 1971,
মমতাজ বেগমছবি: Momtaz Begum

১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ভর্তি হন মমতাজ৷ সেসময় স্নাতক - সম্মান কোর্সের ছাত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা৷ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা দেওয়ার আগে মমতাজ ছিলেন কুমিল্লা মহিলা কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট৷ আর অন্যদিকে, আজকের জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট৷ ফলে এই দুই সংগ্রামী নেত্রী একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আন্দোলনকে চাঙ্গা করে তোলেন৷ তাঁরাই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেন৷ সেই থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন মমতাজ৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বাড়ি মরিচা হাউসে মহিলাদের সামরিক ও প্রাথমিক পরিচর্যার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন মমতাজ৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী - বিএসএফ'এর সদর দপ্তরে অস্ত্র চালনা এবং যুদ্ধ পরিচালনার উপর প্রশিক্ষণ নেন৷ এসব বিষয়ে অন্যান্যদের নানা স্থানে প্রশিক্ষণ প্রদানও করেন তিনি৷ ২৫শে মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংস হামলা ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর৷ ‘মহিলা সংঘ' নামে একটি সেবা সংগঠনের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করেন তিনি৷

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একত্রে সংগ্রাম ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মমতাজছবি: Picture-alliance/dpa

ঘটনাবহুল মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলির অসংখ্য ঘটনার মধ্যে কয়েকটি তুলে ধরেন ডয়চে ভেলের কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘১২ এপ্রিল উপর থেকে নির্দেশ আসল কুমিল্লা সেনানিবাসের সাথে ঢাকার সংযোগকারী ইলিয়ট গঞ্জের সেতুটি ধ্বংস করার৷ আমার ভাই আজিজুর রহমান এবং ছাত্রলীগের নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে এই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো৷ আমাদের কসবার বাসায় বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা আসলেন৷ আমি এই অপারেশনের জন্য দু'টি সরকারি দপ্তর থেকে দু'টি মটর সাইকেল সংগ্রহ করে দিলাম৷ তারা সেই মটর সাইকেলে করে রাতের আঁধারে ইলিয়ট গঞ্জ সেতু এবং পাশের আরেকটি সেতু উড়িয়ে দিল৷ সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটিই প্রথম বিশেষ অভিযান ছিল৷ এ খবর পাক সেনাদের কাছে পৌঁছার পরদিনই পাক সেনারা আমাদের গ্রামে হানা দিল৷ আমাদের চোখের সামনে বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল এবং গ্রামের মানুষজনের উপর নৃশংস অত্যাচার শুরু করল৷''

মু্ক্তিযুদ্ধের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছাত্রলীগের একদল সাহসী তরুণকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা মুজিব বাহিনী৷ এই বাহিনীর পরিচলানা পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন মমতাজ বেগম৷ তাই এই দলের তরুণ যোদ্ধাদের স্মৃতি খুব করে নাড়া দেয় মমতাজের মন৷ তিনি বলেন, ‘‘একদিন মুজিব বাহিনীর সদস্য একদল ছাত্র ভেতরে অপারেশনে যাচ্ছে৷ তারা আমার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বলল, আমরা ভেতরে যুদ্ধের জন্য যাচ্ছি৷ দোয়া করবেন৷ কারণ শহীদ হয়েও যেতে পারি৷ তাদের অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি৷ পথেই তারা পাক সেনাদের সামনে পড়ে যায়৷ সেখানে আবু, সাফু, মোজাম্মেল নামে তিনটি কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হলো৷ তারা পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেল৷ আমি আর তাদের মুখ দেখতে পাইনি৷ এছাড়া প্রশিক্ষণ নিয়ে আবু তাহের নামে আরো একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে আসল৷ সে বলল, আপা আসি, স্বাধীন দেশে আবার আপনার সঙ্গে দেখা হবে৷ তাদের বিদায় দিয়ে আমি কেবল বাসায় গিয়েছি৷ বিকেলেই খবর আসল যে, বোমা বিস্ফোরণে আবু তাহের আহত৷ আমাদের জিপে করে তাকে নিয়ে আসা হলো৷ তোয়ালে দিয়ে তার মাথা ঢাকা৷ রক্তে ভেসে যাচ্ছে৷ শেষ পর্যন্ত দেশ স্বাধীন হলো৷ আমি দেশে ফিরলাম৷ কিন্তু আবু তাহেরকে তো ত্রিপুরা রাজ্যেই রেখে আসতে হলো৷''

এমনই অসংখ্য করুণ পরিস্থিতি পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন মমতাজের মতো বীর নারী-পুরুষ৷ তবে স্বাধীনতার পরও থেমে যাননি মমতাজ৷ চালিয়ে যাচ্ছেন দেশ ও জাতি গড়ার কাজ৷ অধ্যাপনা, রাজনীতি এবং আইন পেশার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন তিনি৷ ২০০৯ সালের ১২ই মার্চ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ