প্রতিরক্ষায় পয়সা ঢালছে ইউরোপ, সুবাতাস স্টার্টআপে
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জার্মানির স্টার্টআপ জগতের অনেক তারকা প্রতিরক্ষা খাতেনবাগত৷ ইউরোপে ক্রমশ বেড়ে ওঠা নিরাপত্তাহীনতা তাদেরকে সাম্প্রতিক সময়ে এক বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছে৷ কিন্তু এই রেকর্ড বিনিয়োগ কতটা কাজে লাগবে?
এআরএক্স রোবোটিক্স ক্ষুদ্রাকৃতির ট্যাংক তৈরি করেছে৷ শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে লেজার সমৃদ্ধ এই যন্ত্রটি আহত সেনার পরিস্থিতিও মূল্যায়ন করতে পারে৷ নবীন এই প্রতিষ্ঠানটিতে সম্প্রতি ৩৩ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছেন একদল ব্যবসায়ী৷
এআরএক্স রোবোটিক্স-এর সিইও মার্ক উইটফেল্ড বলেন, ‘‘আমি যা নিয়ে উদ্বিগ্ন তা হচ্ছে, ইউক্রেনের যুদ্ধই যথেষ্ট নয়৷ ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক এক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করেছে৷ ইউরোপ বুঝতে পেরেছে যে প্রতিরক্ষা ইস্যুতে তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে৷ এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করার উপায় নেই৷''
কোয়ান্টাম সিস্টেমসের এক লাখ আশি হাজার ইউরো মূল্যের ড্রোনের মতো এই ড্রোনের বিপুল চাহিদা রয়েছে৷ তবে সামরিক বাহিনীগুলো এসব কিনবে কি না তা নিশ্চিত না হয়েই উৎপাদন শুরু করেছে স্টার্টআপটি৷
কোয়ান্টাম সিস্টেমস-এর প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মার্টিন কারকোর বলেন, ‘‘আমরা নিজ দায়িত্বে ঝুঁকি নেই৷ আমরা বিক্রির বড় চুক্তির জন্য অপেক্ষার চেয়ে ক্রেতাদের পরামর্শ, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বাজারের হালচাল এবং ইউক্রেন থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে বাজারের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করি৷''
উচ্চপ্রযুক্তির ড্রোনটি একটি নতুন জার্মান সফটওয়্যার টিমের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছে৷ অন্যান্য স্টার্টআপের মতো হ্যাটেকও জানে যে, সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো উদ্ভাবন দ্রুত করতে পারলে তা বাড়তি সুবিধা দেয়৷গতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷
হ্যাটেক-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরিয়ান স্মিডট বলেন, ‘‘আমাদের ক্ষেত্রে বিশেষ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এমনভাবে কোনো কিছু উদ্ভাবন করা, যা ছাড়পত্র পাওয়ার নীতিমালাও অনুসরণ করবে৷ আমরা মূলত উড়ন্ত ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করি৷ অবশ্যই এক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড রয়েছে যা আমাদের অনুসরণ করতে হয়৷ অন্যদিকে এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় না যে প্রচলিত পদ্ধতি তা যত দ্রুত সম্ভব বুঝতে পারবে৷ ফলে আমরা উভয় সংকটে পড়ি৷''
জার্মান সশস্ত্র বাহিনীর কোনো কিছু কিনতে কয়েক বছর লেগে যায় যা স্টার্টআপগুলোর জন্য সুবিধাজনক নয়৷ একটি সিদ্ধান্ত নিতে যে সময় দরকার হয় সেই সময়ের মধ্যে অনেক স্টার্টআপের অর্থসংকট শুরু হয়ে যায়৷ আর এসব পণ্যের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীই মূলত প্রথম ক্রেতা৷
ইউনিভার্সিটি অব দ্য বুন্ডেসভার-এর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ইউলিয়ান ভের্নার বলেন, ‘‘এবং এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই স্টার্টআপগুলো অর্থ আয় করতে পারে না৷ মানে, তারা বিনিয়োগাকারীদেরকেও উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আরো অর্থ দিতে বলতে পারে না৷ আর একারণেই আমাদের নতুন কর্মপন্থা বের করা দরকার৷''
নতুন কর্মপন্থার আরেকটি দিক হচ্ছে পণ্যের সব খুচরা যন্ত্রাংশ জার্মানি বা ইউরোপে প্রস্তুত করতে হবে৷ বর্তমানে অনেক কিছু বাইরে থেকে আসে যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সুবিধাজনক নয়৷
ইউলিয়ান ভের্নার বলেন, ‘‘বিশেষ করে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা এমন সব দেশের উপর নির্ভর করতে পারি না যারা কৌশলগতভাবে প্রতিপক্ষ৷ এটা হবে ভয়াবহ এবং অদূরদর্শী ব্যাপার৷ ফলে আমাদের সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো এবং উৎপাদন দ্রুত ইউরোপে নিশ্চিত করতে হবে৷''
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সহায়তায় উদ্ভাবনকে পূর্ণতা দিতে হবে৷ এতে করে কর্মপন্থা আরো কার্যকর হবে এবং জার্মানির স্টার্টআপগুলোরও ব্যবসা বাড়বে৷
প্রতিবেদন: মিলশিয়েডস স্মিডট/এআই