চীনের হুমকির মুখে পড়ে প্রতিরক্ষা-খরচ অনেকটাই বাড়াচ্ছে তাইওয়ান। নতুন যুদ্ধবিমানও কিনবে তারা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার তাইওয়ান সরকার প্রতিরক্ষা খাতে খরচ আরো এক হাজার ৯৪০ কোটি ডলার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
সম্প্রতি তাইওয়ানকে ঘিরে চীনসবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া করার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
তাইপেই কী বলছে?
তাইওয়ানের এক মুখপাত্র বলেছেন, জাতীয় সুরক্ষা বাড়াবার জন্য প্রতি বছর প্রতিরক্ষায় ১৯ শতাংশ খরচ বাড়ানো হবে। ২০১৭ থেকে অবশ্য প্রতিরক্ষায় খরচ বাড়ানোর পরিমাণ ছিল চার শতাংশের কম। ফলে প্রতিরক্ষাখাতে রেকর্ড খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাড়তি অর্থের বড় পরিমাণ যুদ্ধবিমান-সহ হাই টেক অস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার করা হবে। ডিরেক্টর জেনারেল অফ বাজেট ও স্ট্যাটেসটিক্স মন্ত্রী বলেছেন, অপারেশনাল খরচ মেটানোর জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করা হবে।
ভয়াবহ যুদ্ধমহড়ায় চীন
তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে চলছে মহড়া। মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে জাপানের সমুদ্রেও।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture alliance
পেলোসির সফরের জবাব
মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে এলে তার ফল ভালো হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল চীন। এবার কার্যত তাইওয়ান ঘিরে ধরে তারা সামরিক মহড়া শুরু করেছে। চীনের দাবি, রুটিন সামরিক মহড়া চলছে। কিন্তু যেভাবে তারা এই মহড়া শুরু করেছে, তাতে চিন্তিত তাইপেই।
ছবি: Issei Kato/REUTERS
চীনের মহড়া
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টা থেকে চীন এই মহড়া শুরু করেছে। জল, স্থল এবং আকাশে মহড়া চলছে। একের পর এক যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর উপর দিয়ে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে উড়ে গেছে। যুদ্ধ জাহাজ কার্যত ঘিরে রেখেছে তাইওয়ানকে। তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধজাহাজ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Hong Wei /Xinhua/IMAGO
লাগাতার গোলাবারুদ
নৌ এবং স্থলসেনা লাগাতার গোলাবারুদ ছুঁড়ছে বলে অভিযোগ। একের পর এক ব্যালেস্টিক মিসাইলও তাইওয়ান প্রণালীতে সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সামান্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই তা তাইওয়ানের মূলভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে। তাইওয়ান প্রমালী চীনের মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানকে আলাদা করেছে।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture alliance
স্থলসেনার মহড়া
মহড়ায় নেমেছে চীনের স্থলসেনাও। চীন লিবারেশন আর্মি অবশ্য জানিয়েছে, এটি তাদের রুটিন মহড়া। মূল ভূখণ্ড থেকে সমুদ্র লক্ষ্য করে মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছে।
ছবি: CCTV/AP/picture alliance
জাপানের সমুদ্রে মিসাইল
অন্যদিকে জাপানের অভিযোগ, সমুদ্রে অবস্থিত জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোনে প্রপেলড মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বস্তুত, তাইওয়ান থেকে জাপানে গেছেন ন্যান্সি পেলোসি। তার যাত্রার অব্যবহিত পরেই ওই মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বুঝিয়ে দিয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের জবাবেই তারা একাজ করছে।
ছবি: Hector Retamal/AFP
তাইপেইয়ের অভিযোগ
তাইপেই জানিয়েছে, তাইওয়ানের উপর দিয়েও মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। তাইওয়ান পার করে যা জলে গিয়ে পড়েছে। গোটা তাইওয়ানে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
ছবি: Hector Retamal/AFP
তাইওয়ান সংকট
সম্প্রতি তাইওয়ান সফরে গেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার পেলোসি। গত ২৫ বছরে এই পদমর্যাদার কোনো মার্কিন রাজনীতিক তাইওয়ানে যাননি। বস্তুত, তাইওয়ানের সঙ্গে অ্যামেরিকার সুসম্পর্ক থাকলেও দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাইওয়ান স্বশাসিত একটি অঞ্চল। চীনের একাধিপত্য তারা মেনে নেয় না। গত কয়েক বছরে চীন তাইওয়ান এবং হংকংয়ের উপর চাপ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পেলোসির তাইওয়ান সফর।
ছবি: Kyodo/dpa/picture alliance
চীনের হুমকি
চীন আগেই জানিয়ে রেখেছিল, পেলোসি এলে তার ফল ভালো হবে না। চীনের সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে পেলোসি তাইওয়ান যান। তারপরেই ভয়াবহ সেনা মহড়া শুরু করেছে চীন। তাইওয়ানের কার্যত নাকের ডগায় একাজ করা হচ্ছে।
ছবি: EASTERN THEATRE COMMAND/REUTERS
8 ছবি1 | 8
তিনি জানিয়েছেন, ''আমরা দেশের সুরক্ষাকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। সেজন্যই এই অর্থবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।'' তিনি বলেছেন, ''চীনের হুমকির মোকাবিলায় যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে রাখতে হয়েছে। তার জ্বালানি ও রক্ষনাবেক্ষণের একটা খরচ আছে।''
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এখন তা পার্লামেন্টকে অনুমোদন করতে হবে।
তাইওয়ান কেন ভয় পাচ্ছে?
সম্প্রতি মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে যান। তিনি ফিরে যাওয়ার পরই চীন তাইওয়ানকে ঘিরে ধরে সামরিক কুচকাওয়াজ করে। চীনের নৌ, বিমান ও স্থলবাহিনী কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
চীন ও তাইওয়ান, কার কত সামরিক শক্তি
চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। তাইওয়ানে যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দেখে নেয়া যাক, চীন ও তাইওয়ান কার সামরিক শক্তি কেমন।
ছবি: Li Tao/Xinhua/Imago Images
জনসংখ্যার নিরিখে
চীনের জনসংখ্যা ১৩৯ কোটি ৮০ লাখ। তাইওয়ানের জনসংখ্যা মাত্র দুই কোটি ৩৬ লাখ। জনসংখ্যার বিচারে চীন ও তাইওয়ানের কোনো তুলনাই চলে না। উপরের ছবিটি চীনের একটি স্টেশনের।
ছবি: Ji Haixin/HPIC/dpa/picture alliance
প্রতিরক্ষা বাজেট
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার, ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী, সামরিক খাতে চীন বিপুল খরচ করে। খুব কম দেশই এতটা খরচ করে বা করতে পারে। চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট হলো ২৩ হাজার কোটি ডলার। সেই তুলনায় তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বাজেট এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের সেনার।
ছবি: Ann Wang/REUTERS
সেনার সংখ্যা
চীনের সক্রিয় সেনার সংখ্যা ২০ লাখ। আর তাইওয়ানের এক লাখ ৭০ হাজার মাত্র। ফলে সেনাসংখ্যার হিসাবেও চীন ও তাইওয়ানের কোনো তুলনা চলে না। উপরের ছবিটি চীনের সেনার প্যারেডের।
ছবি: Kevin Frayer/Getty Images
কার কাছে কত ট্যাঙ্ক
চীনের কাছে আছে পাঁচ হাজার ২৫০টি ট্যাঙ্ক। আর তাইওয়ানের কাছে এক হাজার ১১০টি। ফলে তুলনা অসম। উপরে চীনের ট্যাঙ্কের ছবি।
ছবি: Jeff Widener/AP Photo/picture alliance
যুদ্ধবিমানের সংখ্যা
চীনের কাছে তিন হাজার ২৮৫টি যুদ্ধবিমান আছে। তাইওয়ানের কাছে আছে মাত্র ৭৪১টি। তবে তাইওয়ানের কাছে এফ ১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে।ছবিতে তাইওয়ানের এফ ১৬ যুদ্ধবিমান।
ছবি: Daniel Ceng Shou-Yi/Zuma/picture alliance
নৌবহরের সংখ্যা
চীনের নৌবহর ৭৭৭টি। তাইওয়ানের মাত্র ১৭৭টি। উপরে চীনের যুদ্ধজাহাজের ছবি।
ছবি: picture-alliance/ dpa
প্রশান্ত মহাসাগরে কে কত খরচ করে
ট্রেন্ডস ইন ওয়ার্ল্ড মিলিটারি এক্সপেন্ডিচার ২০২১ অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি খরচ করে অ্যামেরিকা, ৮০ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন। তারা ২৯ হাজার কোটি ডলার খরচ করে। তাইওয়ান সেখানে খরচ করে এক হাজার তিনশ কোটি ডলার। তবে তারা সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের থেকে বেশি অর্থ খরচ করে। উপরের ছবিতে প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ।
ছবি: ASSOCIATED PRESS/picture alliance
কাকে বাছবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলি
যদি এরকম পরিস্থিতি আসে, বাধ্য হয়ে কাউকে সমর্থন করতে হচ্ছে, তাহলে কাকে সমর্থন করবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলি? দ্য স্টেট অফ সাউথইস্ট এশিয়া ২০২২ জানাচ্ছে, লাও, কম্বোডিয়া ও ব্রুনেই নিশ্চিতভাবে চীনের দিকে যাবে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন্স, মিয়ানমারের অ্যামেরিকার দিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
ছবি: U.S. Navy/ZUMAPRESS.com/picture alliance
8 ছবি1 | 8
চীনের বক্তব্য ছিল, অ্যামেরিকা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে, যা তারা মেনে নেবে না। তাইওয়ানকে নিজেদের অভিন্ন অংশ মনে করে চীন। তাদের দাবি, বিশ্বের বাকি সব দেশকে 'এক চীন' নীতি নিয়ে চলতে হবে এবং তাইওয়ানকে আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না।
১৯৪৯ থেকে তাইওয়ান তাদের আলাদা অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। তারা স্বাধীনভাবে সরকার চালাচ্ছে। কিন্তু চীনের দাবি, অন্য কোনো দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে সরকারি স্তরে যোগাযোগ রাখতে পারবে না। তারা তাইওয়ান দখল করতে সামরিক অভিযানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয় না।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়ও চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে ঠেকাতে অসম যুদ্ধ করার জন্য তৈরি।
২০২১ সালে চীনের যুদ্ধবিমান বারবার তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোনের ভিতরে ঢুকেছে।