প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে জার্মানিকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ
২৪ আগস্ট ২০১৯
প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে জার্মানিকে চাপ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ অন্যথায় জার্মানি থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ারও হুমকি দিয়েছে দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
ন্যাটোতে অর্থায়ন নিয়ে বার্লিন এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে জার্মানিতে অবস্থানরত কিছু সেনা প্রত্যাহার করার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন সেনা ঘাঁটির জন্য সম্ভাব্য নতুন অবস্থান হিসেবে পোল্যান্ডকে চিহ্নিত করেছে তারা৷
ওয়াশিংটনের এসব হুমকিকে আমলে নিচ্ছেন না জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ গত সপ্তাহে তা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি৷ তবে জার্মানির সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করেন ম্যার্কেল৷
জার্মানিতে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে গত সাত বছরে অন্তত ২৪৩ মিলিয়ন ইউরো সহযোগিতা দিয়েছে জার্মান সরকার৷
ইউরোপের মধ্যে জার্মানি একমাত্র দেশ যেখানে বেশি সংখ্যক মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে৷ ৩৫ হাজার মার্কিন সেনার পাশাপাশি ১৭ হাজার বেসামরিক মার্কিন নাগরিক আছে জার্মানিতে৷ মার্কিন সেনা ঘাঁটি ঘিরে কর্মরত আছে অন্তত ১২ হাজার জার্মান নাগরিক৷
জার্মান সেনাবাহিনীর যত কেলেঙ্কারি
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতে, ২০১৭ সাল ভয়ঙ্কর, বিভৎস, ভয়াবহ এবং খারাপ বছর৷ নিজের সেনাবাহিনীকে সমর্থন না করে বরং তাদের কেলেঙ্কারি তুলে ধরে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি৷ জেনে নিন জার্মান সেনাবাহিনীর কেলেঙ্কারির কথা৷
ছবি: picture alliance/akg-images
এক ভুয়া শরণার্থী
সিরীয় শরণার্থী সেজে এক জার্মান সেনা কর্মকর্তা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল৷ সমান্তরাল এক দ্বিতীয় জীবন শুরু করেছিলেন ফ্রাংকো৷ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরীয় শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত হন তিনি৷ তার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের উপর হামলার দোষ চাপানো৷ ২০১৪ সাল থেকেই ফ্রাংকো’র ডানপন্থি আচরণের কথা জানতেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা৷ এাই ফ্রাংকো ধরা পড়ার থেকে জার্মান সেনাবাহিনিকে শুরু হয় বিতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
বাড রাইশেনহাল পর্বতে রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানি
ডানপন্থি সন্ত্রাসী আচরণের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য সেনাবাহিনী বর্তমানে ২৭৫ টি মামলার তদন্ত করছে৷ চলতি বছরের মার্চে জনগণ একজন ল্যান্স করপোরালের কথা জানতে পারেন, যিনি কয়েক মাস ধরে বাভেরিয়া পর্বতের রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যৌন নীপিড়ন করা হয়েছে৷ এ ঘটনার জন্য ১৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
নারীদের পোল ড্যান্সে বাধ্য করা
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সবচেয়ে বড় যে কেলেঙ্কারির কথা বলেছেন তাহলো, ফুলেনডর্ফে স্টাওফের সেনাঘাঁটির ভয়াবহ ঘটনা৷ জানুয়ারিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের নগ্ন করা ও যৌনতা প্রকাশ পায় এমন আচরণ করতে বাধ্য করেছিলেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, সেগুলো ভিডিও করা হয়েছিল৷ সদ্য নিয়োগ পাওয়া নারীদের ‘এনট্র্যান্স পরীক্ষা’র অংশ হিসেবে পোল ড্যান্সে বাধ্য করা হয়েছিল৷ একারণে সেনাবাহিনীর শীর্ষ প্রশিক্ষক কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Warnack
ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদের অনেক ঘটনার তদন্ত চলছে
জার্মান সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি কমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সাল জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য মোটেই ভালো বছর ছিল না৷ ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদ বা ‘জার্মানির মুক্ত গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক চেতনার লঙ্ঘন’ এর মোট ৬০টি অভিযোগের ঘটনা পাওয়া গেছে৷ এমনকি সেনারা নিজেদের নাৎসি চেতনা নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করে, নাৎসি সংগীত শোনে ও নাৎসি স্যালুটও দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
জাহাজে মৃত্যু
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত এসব কেলেঙ্কারি নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি সেনাবাহিনী৷ ২০১০ সালের একটি ঘটনা জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে, তা হলো, গর্ক ফক-এ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় ২৫ বছরের এক সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা৷ প্রশিক্ষণের সময় ঐ নারী জাহাজের পাল থেকে নীচে পড়ে মারা যান৷ ফলে অন্যান্য ক্যাডেটরা পালে উঠতে আর রাজি হননি৷ পরে ঐ প্রশিক্ষণ বাতিল করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Rehder
জার্মান সেনাবাহিনীর জন্ম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি সেনাবাহিনী রাখার পক্ষে ছিল না৷ পশ্চিম জার্মানিতে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে৷ পুনরেকত্রীকরণের পর পূর্ব জামানির সেনাবাহিনী থেকে ২০ হাজার সদস্য নেয় কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী৷ ১৯৯৯ সালে যখন জার্মান সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সংঘাতে (কসোভো যুদ্ধ) জড়িয়ে পড়ে, তখন এতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়৷ এর আগ পর্যন্ত কেবল বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল৷
ছবি: picture alliance/akg-images
বাধ্যতামূলক সেবা নয়
বর্তমানে জার্মান সেনাবাহিনীতে সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২০০৷ ২০১৭ সালের মার্চের হিসেব অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর মোট সদস্যের ১১.৪ শতাংশ নারী৷ ২০১১ সাল পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনীতে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল৷ এই মেয়াদকাল ছিল ৯ থেকে ১৮ মাস৷ বর্তমানে তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়৷ তবে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির কারণে এই আবেদনে তাদের সাড়া দেয়াটা সত্যিই কঠিন৷