প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে না, রাজ্যকে সাত দফা দাবি চিকিৎসকদের
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
রাজ্য সরকার তাদের প্রতিশ্রুতিপূরণ করছে না অভিযোগ করে মুখ্যসচিবের কাছে সাত দফা দাবি ই মেইল করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সকালে জুনিয়র ডাক্তাররা এই ই মেইল মুখ্যসচিবের কাছে পাঠান। তারা এখন রাজ্য সরকারের জবাবের অপেক্ষায় আছেন। প্রয়োজন হলে তারা যে আবার আন্দোলনে নামবেন, সেকথাও জানাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তারা মুখ্যসচিবের কাছে যে দাবিগুলি করেছেন, তার মধ্যে আছে, থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে অনুসন্ধান কমিটি করতে হবে। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও আবাসিক চিকিৎসকদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করতে হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সাতটি কাজের দিনের মধ্যে মেডিক্যাল কাউন্সিল ও হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচার নিয়ে কমিটি করতে হবে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে সব মেডিক্যাল কলেজে নজরদারি কমিটি করতে হবে। বদলি নীতি স্বচ্ছ্ব করতে হবে।
অভিযুক্তদেরতাড়াকরলেনজুনিয়রডাক্তাররা
আরজি করে থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতিতে অভিযুক্ত ১২জন চিকিৎসককে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। হুমকি দেয়া এবং থ্রেট সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি তাদের ডেকে পাঠায়। যাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে চিকিৎসক ছাড়াও চিকিৎসাকর্মীরাও ছিলেন।
আরজি করে ৫১ জনের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচারের অভিযোগ আছে। অভিযুক্তদের দফায় দফায় ডেকে পাঠিয়ে তাদের বক্তব্য শোনা হচ্ছে। বুধবার এমনই ১২ জনকে ডেকে পাঠানো হয়।
তারা যখন ঢুকছিলেন তখনই জুনিয়র ডাক্তাররা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাদের লক্ষ্য করে চোর চোর স্লোগানও দেয়া হয়। কিন্তু তারা যখন তদন্ত কমিটির কাছে নিজেদের কথা বলে বেরোচ্ছেন তখন উত্তেজনা প্রবল হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই ধস্তাধস্তি হয় বলে অভিযোগ। কয়েকজন অভিযুক্তের জামা ছিঁড়ে যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তাদের নিয়ে বের হয়ে যান। জুনিয়র ডাক্তাররা অভিযুক্তদের তাড়া করেন বলে অভিযোগ।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, তারা কাউতে মারেননি। কারো জামাও ছেঁড়েননি। অভিযুক্তরাই নিজেদের জামা ছিঁড়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।
রাতেবৈঠক
রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা বৈঠকে বসেন। তারপর দেবাশিস হালদার বলেন, রোগী, পরিষেবা ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকার গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে চলছে। এরকম চলতে থাকলে তারা আন্দোলনকে আরো তীব্র করবেন।
তাদের দাবি, রাজ্য সরকার তাদের দাবিপূরণের ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তারা এই দাবি নিয়ে আবার বৈঠকে বসতে চান।
জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কর্মবিরতি তুলে নেয়ার পর তাদের অনেক সদস্য প্রতিহিংসার মুখে পড়েছেন। যারা রাতদখলের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হচ্ছে। সব মামলা তুলে নিতে হবে। এই ধরনের কাজ বন্ধ করতে হবে। না হলে, তারা আন্দোলন আরো তীব্র করবেন।
রাজনীতিনয়
জুনিয়র ডাক্তাররা বুধবার জানিয়েছেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে তাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে দেবেন না। দেবাশিস হালদার বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলি প্রথম থেকেই আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চাইছে। আমরা একাধিকবার জানিয়েছি, হাথরস, কাঠুয়া, উন্নাওতে যারা ধর্ষকদের মালা পরিয়েছেন, তারা আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে পারবেন না। আমরা দেব না। জনগণও দেবে না।
আংশিকভাবে কাজে ফিরেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা, কেমন আছে আরজি কর?
আরজি কর হাসপাতালে আবার রোগীদের প্রচণ্ড ভিড়৷ জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে ফিরেছেন, প্রতিবাদেও আছেন৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিক্ষোভস্থলের সামনে শুধু পুলিশ
এতদিন ধরে এই বিক্ষোভস্থলে বসে থাকতেন জুনিয়র ডাক্তাররা৷ নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা৷ প্রতিদিন বিক্ষোভ দেখাতেন৷ পরে লালবাজারের কাছে একদিন এবং স্বাস্থ্যভবনের কাছে বেশ কিছুদিন রাস্তায় বসে তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ আরজি করের বিক্ষোভস্থল এখন ফাঁকা৷ জুনিয়র ডাক্তাররা জরুরি বিভাগে কাজে যোগ দিয়েছেন৷ বিক্ষোভস্থলের সামনে বসে আছেন পুলিশ কর্মীরা৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
লম্বা লাইন
অনেক বিভাগেই চোখে পড়েছে এই লম্বা লাইন৷ প্রচুর মানুষ এসেছেন ডাক্তার দেখাতে৷ তাদের লম্বা লাইন পড়ছে বিভিন্ন বিভাগের সামনে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ব্যস্ততার ছবি
জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেয়ার পর আরজি করে রোগীদের ভিড় আবার বেড়ে গেছে৷ দ্রুত রোগীদের ভিতরে ঢোকানোর কাজ চলছে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রতীকী মেরুদণ্ডের ছবির পাশে
জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভে বারবার এসেছে প্রতীকী মেরুদণ্ড৷ কখনো তাদের হাতে ছিল এই মেরুদণ্ড৷ কখনো তারা মেরুদণ্ডের ছবি এঁকেছেন৷ সেরকমই একটা ছবির পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রোগী ও তাদের আত্মীয়রা৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
‘দ্রুত অপারেশন হয়েছে’
রীনা হালদার জানিয়েছেন যে, তার মাথায় সিস্ট হয়েছিল৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করা হয়৷ তিনি খুব ভালো পরিষেবা পেয়েছেন৷ রীনা খুশি৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হতাশ রোগী
বারাসত থেকে এসেছিলেন তুলসী ঘোষ৷ তিনি জানিয়েছেন, শরীরের রক্ত কমে যাওয়ায় আরজি করে ভর্তি হতে এসেছেন৷ এসে দেখলেন যে মেডিসিন ওয়ার্ডে মাত্র দুজন ডাক্তার আছেন৷ বহু মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন চিকিৎসার জন্য৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সমস্যা হয়নি
কলকাতার বাগমারি থেকে আসে রঘুনাথ সাহার অভিজ্ঞতা, ‘‘আমি ডাক্তার দেখাতে এসছিলাম৷ ভালো পরিষেবা পেয়েছি৷ কোনো সমস্যা হয়নি৷’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফিরে যাচ্ছেন
সুমন পাল মধ্যমগ্রামে থাকেন৷ তিনি জানিয়েছেন, তার মা ডিমেনশিয়ার রোগী৷ অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন৷ কিন্তু এখানে এসে দেখেন, ডাক্তারের অভাব৷ কেউ সহযোগিতা করছে না৷ মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মশাল মিছিল
জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তারা কাজে যোগ দিলেও প্রতিবাদ চলবে৷ গত সপ্তাহান্তে মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন তারা৷ এই মশাল মিছিল শুরু হলো হাইল্যান্ড পার্ক থেকে৷ শেষ হলো শ্যামবাজারে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
৪২ কিলোমিটার পথ
হাইল্যান্ড পার্ক থেকে শ্যামবাজারে যে পথ ধরে মশাল মিছিল এলো, তার দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার৷ গোটা পথে সারারাত মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদ করলেন৷ জুনিয়র ডাক্তাররা তো ছিলেনই, তাছাড়া ছিলেন সিনিয়র ডাক্তার, সাধারণ মানুষ, তারকারাও৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আসুক যত বৃষ্টি, ঝড়...
মাঝখানে ঝড়-বৃষ্টিও হয়৷ কিন্তু তাতেও মানুষ কোথাও যাননি৷ বরং স্লোগান বদলে যায়৷ সকলে বলতে শুরু করেন, ‘আসুক যত বৃষ্টি ঝড়/জাস্টিস ফর আরজি কর’৷ পরে বৃষ্টি থেমে যায়৷ মশাল তার গন্তব্যের দিকে যেতে থাকে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিক্ষোভে সামিল
তাদের চলতে অসুবিধা হয়৷ লাঠি নিয়ে, ওয়াকার নিয়ে হাঁটেন৷ তাসত্ত্বেও প্রতিবাদে সামিল এই বয়স্ক মানুষরাও৷ সব বয়সের সব শ্রেণির মানুষের এই সম্মিলিত প্রতিবাদের জোরেই তো কেঁপে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাত বদল হয়
মশাল হাতে নিয়ে এগোচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ কিছুটা দূর পরপর সেই মশাল হাতবদল হচ্ছে৷ নতুন মানুষের হাতে উঠছে মশাল৷ মশাল তো একটা প্রতীক, আসলে, এভাবেই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে৷ এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আগুন জ্বালো
রাত আড়াইটে৷ শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সেই বিখ্যাত মূর্তির আশপাশে মশাল জ্বলছে৷ একটু দূরেই আরজি কর৷ যেখানে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার ন্যায় পাওয়ার জন্য পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন হাজার হাজার মানুষ৷ সেই গভীর রাতে রাস্তার সোডিয়াম ভেপারের আলোর থেকে অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মশালের আলো৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
14 ছবি1 | 14
তার অভিযোগ,ওই দলের কিছু নেতা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মহালয়ায় নির্যাতিতার জন্য আমরা তর্পণ করব বলে মিথ্যা খবর ছড়িয়েছেন। এই কর্মসূচির সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের যোগ নেই। আমরা প্রথম থেকে রাজনীতিকদের প্রত্যাখ্যান করেছি। ভবিষ্যতেও করব।