প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে
১৫ জুলাই ২০১৮আগেও জয় পেয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের মেয়েরা৷ কিন্তু সেই সাফল্য ধারাবাহিক ছিল না৷ এখন রীতিমতো ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই শুধু না, মাঝারি মানের দলগুলো দাঁড়াতেই পারছে না বাংলার বাঘিনীদের সামনে৷ হেসে-খেলে হারিয়ে সালমা-জাহানারারা বুঝিয়ে দিচ্ছেন ব্যবধান কতটুকু৷
সবশেষ বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলতে নেদারল্যান্ডসে আসার পর রীতিমতো সবাই সমীহ করে কথা বলেন বাংলাদেশ দলকে নিয়ে৷ সরেজমিনে ডয়চে ভেলে যখন সেখানে ক্রিকেট অফিসিয়ালদের সঙ্গে কথা বলেছে, তখন তাঁদের সবার মুখে কেবল প্রশংসাই ছিল বাংলার মেয়েদের জন্য৷ এমনকি ডাচ সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলাপচারিতার সময় এই প্রতিবেদককে তাঁরা বলেছেন, ‘‘তোমাদের দল তো অনেক এগিয়ে৷''
কথাটি আমস্টারডাম ও উট্রেশটের গ্রাউন্ডে দিবালোকের মতো আরো স্পষ্ট করে দিলেন মেয়েরা৷ গ্রুপে পাপুয়া নিউগিনি, আরব আমিরাত, এমনকি স্বাগতিক নেদারল্যান্ডসকে রীতিমতো নাচিয়ে ছেড়েছেন তাঁরা৷ তার আগে আরেক শক্তিশালী দল আয়ারল্যান্ডকেও তাদের মাটিতে সিরিজ হারিয়েছেন৷ এসব সাফল্যের ধারাবাহিকতাকে মেয়েদের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন বলেই মনে করেন সফররত দলটির ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, এশিয়াকাপ জয়ই মেয়েদের ক্রিকেটের টার্নিং পয়েন্ট৷
‘‘আমরা যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ শেষ করি, তখনও আত্মবিশ্বাসের অনেক ঘাটতি ছিল৷ আমরা সেসব নিয়ে তখন কাজ করি৷ এশিয়া কাপেও শুরুটা তেমন ভালো হয়নি৷ কিন্তু মেয়েরা বিশ্বাস করেছিল যে, তারা কিছু একটা করতে পারবে৷''
তিনি মনে করেন, এই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েই মেয়েরা একের পর এক সাফল্য তুলে আনছে৷ ‘‘প্রথমে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম তাদের ওপর৷ এরপর জয় পাওয়া শুরু হলে মেয়েরাই নিজেদের ওপর বিশ্বাস করতে শিখেছে৷''
অধিনায়ক সালমা খাতুনও মনে করেন যে, বোলিং ভালো করলেও তাঁদের ব্যাটিং আগে ভালো হচ্ছিল না৷ ‘‘আমরা এখন ব্যাটিং, বোলিং দুক্ষেত্রেই ভালো করছি৷ ফিল্ডিংয়ে কিছুটা ঘাটতি এখনো আছে৷ আমরা এর ওপর কাজ করছি৷ ফিল্ডিং আরেকটু ভালো করতে পারলে আরো সফলতা পাবো৷'' ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন তিনি৷
এক্ষেত্রে আরো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ওপর জোর দেন তিনি৷ বলেন, মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেটও নিয়মিত করতে হবে৷ তবে ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম যতই আত্মবিশ্বাসের কথা বলুন, এটা সত্যি যে, এশিয়া কাপ ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলার আগে এবার এশিয়া কাপের আগে ১৪ মাস কোনো খেলা ছিল না মেয়েদের৷ স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তখন রীতিমতো হতাশায় ভুগেছেন এই মেয়েরাই৷ অভিভাবকশূন্যতা কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে মেয়েদের ক্রিকেটকে৷
যেহেতু এশিয়া কাপে ভালো ফলই শুধু করেননি, দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা এনে দিয়েছেন, এখন তাই টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের৷
ম্যানেজারও অবশ্য অস্বীকার করেননি বিষয়টি৷ ‘‘ভালো ফল করতে হবে৷ তাহলেই তো সবার নজর পড়বে৷''
বিসিবি যে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বেতন বাড়িয়েছে, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি৷
এদিকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, মেয়েদের জন্য আলাদা অ্যাকাডেমি করা হবে৷ এমনিতে বিসিবির অ্যাকাডেমিতে ছেলেদের ভিড়ে মেয়েরা জায়গাই পান না, তাই এই অ্যাকাডেমি করা খুবই দরকার৷
সালমা বলেন, ‘‘বিসিবির প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, খুব শিগগিরই নিয়মিত ঘরোয়া টুর্নামেন্ট করা হবে৷''
শুধু তাই নয়, পূর্ণ পরিচর্যা না পেলেও নিজেদর পরিশ্রম দিয়েই আন্তর্জাতিক লিগগুলোতেও জায়গা করে নিচ্ছেন মেয়েরা৷ রুমানা ও কোবরা এরই মধ্যে বিগ ব্যাশে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা বলছিলেন রুমানা আহমেদ৷
‘‘দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য ওরা বিগ ব্যাশের মতো খেলা আয়োজন করছে, দেখে খুবই ভালো লেগেছে৷''
সেখান থেকে নতুন অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানালেন রুমানা৷ ‘‘ওদের কন্ডিশন সম্পূর্ণ আলাদা৷ ওদের খেলার ধরনও আলাদা৷ ওরা পাওয়ার ক্রিকেট খেলে৷''
রুমানা বলেন, ‘‘ক্রিকেটে, সেটা ছেলেদের হোক বা মেয়েদের, এখন স্লো খেলার কোনো সুযোগ নেই৷ পাওয়ার দিয়ে খেলতে হয়৷ এটাই শিখেছি৷''
এশিয়া, ইউরোপই শুধু নয়, এই মেয়েরা বিশ্বজয় করবেন একদিন৷ সেজন্য তাঁরা তাঁদের সবটুকু ঢেলে দিচ্ছেন৷ কিন্তু ক্রিকেটের অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে তাঁদের নিয়ে৷ যেসব প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিয়েছেন, সেগুলো রক্ষা করতে হবে৷ তাহলেই বাংলাদেশের পতাকা শিখরে উঠবে হয়ত এই মেয়েদের হাত ধরেই৷
প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? লিখুন আমাদের, নীচের ঘরে৷