ছাত্রদলের সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।ছবি: Arafatul Islam/DW
বিজ্ঞাপন
লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রদল।
তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত বাংলাদেশে জনগণ আর বিভেদ–বিরোধ ও প্রতিহিংসা–প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না। জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চায়।
ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে উচ্চকিত বিএনপি আগামী দিনে মানবিক মানুষ তৈরির রাজনীতি শুরু করতে চায় বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ''বিএনপির আগামী দিনের নীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার রাজনীতি। বিএনপির নীতি আজকের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার রাজনীতি। মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত কর্মমূখী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রাজনীতি।''
‘ফ্যাসিস্ট চক্র' শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ''তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছে।''
এর আগে সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ''ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, সারা দেশের মানুষ সে অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, তার আগে বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছেন, তাঁদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।''
বক্তব্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, "আমাদের পাশের দেশে ভারতবর্ষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা আশ্রয় নিয়েছে তার লোকবল নিয়ে। সেখান থেকে সে মাঝেমধ্যেই হুমকি দিচ্ছে যে তারা বাংলাদেশে আক্রমণ করবে। শুধু তাই নয়, এখানে তারা বিভিন্নভাবে গোলযোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।"
এ ধরনের তৎপরতার মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশে বিভক্তি সৃষ্টি করার।'
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, "আজকের এই সমাবেশ থেকে আমাদের শপথ নিতে হবে যে আমরা কোনো দিনই শেখ হাসিনাকে আর এই দেশে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ দেব না। শপথ নিতে হবে যে আমরা কারও কাছে কোনো দিন মাথা নত করবো না। আমরা আমাদের দেশকে নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলবো।"
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবিব উন নবী খান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরীসহ দলটির আরো অনেক নেতা।
বিএনপির চার দশক
৪৬ বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত আছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ এত বছরে কী ছিল দলটির পথচলা?
ছবি: Getty Images/Keystone
প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ এরপর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার৷ সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ পরে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিষ্ঠা
বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল৷ পরে তা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করে দলের যাত্রা করেন জিয়াউর রহমান৷
ছবি: imago/United Archives International
নির্বাচন ও মৃত্যু
জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে৷ তখন মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জেতে৷ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/Keystone
খালেদার রাজনীতিতে আসা
জিয়ার মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের আহ্ববানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন৷ ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন৷ ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন৷ ১৯৮৪ সালের ১০মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷
ছবি: AP
এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া
জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন৷ তবে তাঁকে হটিয়ে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন৷ বিএনপি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই আন্দোলনে বেগম জিয়া ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দু’জনই ছিলেন, যদিও আপোষহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
সরকার গঠন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদে মাত্র ৪৫ দিন টিকতে পারে সেই সরকার৷
ছবি: AP
শেষবার সরকারে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জিতে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷এই সরকারই ছিল বিএনপির শেষ সরকার৷ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর নানা বিতর্ক ও ঘটনার প্রেক্ষাপটে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর৷ সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়কেই জেলে যেতেও হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দু’জনই ছাড়া পান৷
ছবি: Getty Images
জোটের রাজনীতি
বিএনপি এ পর্যন্ত বারবার জোট করেছে৷ প্রথম সাতদলীয় জোট করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে৷ এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ গড়ে চারদলীয় জোট৷ পরবর্তীতে জোটে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সেটি ঠেকে বিশ দলীয় জোটে৷
ছবি: bdnews24.com
রাজনৈতিক ভুল ও কারাগারে খালেদা
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলার কারণে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷