প্রতি আট জনে একজন নারী শিশুকালেই যৌন নিপীড়নের শিকার
১২ অক্টোবর ২০২৪
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সারা পৃথিবীতে এ মুহূর্তে জীবিত নারীদের ৩৭ কোটি মেয়ে শিশু ও নারী ১৮ বছর বয়স হবার আগেই ধর্ষণ বা কোনো ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে৷ ১০ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রতি ৮ জনে ১ জন জীবিত মেয়ে শিশু ও নারী ১৮ বছর বয়সের আগে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বিশ্বব্যাপী যার সংখ্যা প্রায় ৩৭ কোটি৷
ইউনিসেফ বলছে, যৌন সহিংসতার বিষয়টি ভৌগলিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সীমানা পেরিয়ে গেছে৷ যদি মৌখিক ও অনলাইন নিপীড়নের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়, তাহলে ভিকটিমের সংখ্যাটি বর্তমানে ৬৫ কোটি, বা প্রতি পাঁচজনে একজন৷
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ পরিস্থিতি পুরো বিশ্বের৷ এর মধ্যে সাব-সাহারান আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি মেয়ে শিশু আক্রান্ত হয়েছে৷ সংখ্যাটি ৭.৯ কোটি৷ এছাড়া পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৭.৫ কোটি এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ৬.৮ কোটি৷
গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভঙ্গুর, সেখানে যৌন সহিংসতা বিশেষভাবে বেশি৷ এমনকি ছেলেশিশুরাও বাদ পড়েনি৷
এগারো জনের মধ্যে একজন ছেলে শিশু ও পুরুষ তাদের শৈশবকালে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপি ২৪ কোটি থেকে ৩১ কোটির মধ্যে৷ আর অনলাইন ও মৌখিক যৌন সহিংসতাকে বিবেচনায় নেয়া হলে ভুক্তভোগি ছেলে শিশুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ কোটি থেকে ৫৩ কোটির মধ্যে৷
প্রতিবেদনটির জন্য ইউনিসেফ ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১২০ টি দেশের তথ্য সংগ্রহ করেছে৷
ডিএজে/জেডএ (ইউনিসেফ)
ছেলেদের খেলনা, মেয়েদের খেলনা
বাচ্চাদের খেলনা কেনার জন্য যে কোনো বড় দোকান বা সুপারস্টোরের ঠিক কোন অংশে ছেলেদের আর কোথায় মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে – সেটা রঙ দেখলেই বোঝা যায়৷ কিন্তু এতে করে কি লিঙ্গবিষম্য করা হচ্ছে না?
ছবি: Screenshot Lego Shop
গোলাপি মানেই...
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন৷ ছবিতে একটি সুপারস্টোরের যে অংশ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে গেলে বাচ্চা মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে৷ চারদিকে গোলাপি রঙয়ের ছড়াছড়িই সেটা বলে দিচ্ছে৷ ছেলেদের খেলনার অংশটি হলো নীল৷ খেলনার রঙে এই ভিন্নতার কারণে অনেকদিন ধরেই লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ উঠছিল৷ তারই সূত্র ধরে মার্কিন সুপারস্টোর চেন ‘টার্গেট’ সম্প্রতি এই নিয়ম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: cc-by-Josh Puetz
রঙ আর থাকবে না
গোলাপি আর নীলের এই খেলায় আর অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘টার্গেট’৷ টুইটারে ‘গার্লস বিল্ডিং সেট্স’ শীর্ষক প্রচারণা আর এ বিষয়ে একটি পিটিশনের পর, টার্গেট বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা এখন থেকে স্টোরগুলোয় রঙ ব্যবহার করে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করবে না৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে টার্গেট৷
ছবি: AP
তবে বার্বি থাকছে...
টার্গেটের এই ঘোষণায় অবশ্য বার্বির উল্লেখ নেই৷ এর মানে, খেলনা হিসেবে ১৯৫৯ সাল থেকে মেয়ে চরিত্রের সমার্থক হয়ে ওঠা বার্বির বিক্রি বন্ধ করবে না তারা৷ বার্বির মাধ্যমে কোমলমতি মেয়ে শিশুদের মধ্যে একটি অবাস্তব নারী দেহের চিত্র তুলে ধরার সমালোচনা আছে বহুদিন ধরেই৷ অবশ্য বার্বির কিছু ইতিবাচক দিকও আছে৷ যেমন চিকিৎসক, মহাকাশবিজ্ঞানী, শিক্ষক – এ সব পেশার বার্বির মধ্য দিয়ে মেয়েদের আত্মনির্ভরতার কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিঙ্গ নিরপেক্ষ বাজারজাতকরণ
এর আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের ‘টয়েস আর আস’ লিঙ্গ নির্ভর বাজারজাতকরণ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল৷ তারও আগে ২০১২ সালে ব্রিটিশ এই সুপারস্টোর তাদের সুইডেনে প্রকাশিত বড়দিনের ক্যাটালগে লিঙ্গ নিরপেক্ষ ছবি ব্যবহার করেছিল, যেমন উপরের ছবিটি৷
ছবি: top-toy.com
শুধু খেলনা নয়, ক্যান্ডিতেও
ছবিটি ভালো করে খেয়াল করুন৷ হাইহিল জুতা, নেল পলিশের বোতল দেখতে পাচ্ছেন? অথচ এটি কিন্তু ‘হারিবো’-র ফ্যান্টাসি সিরিজের একটি ক্যান্ডির প্যাকেট, যেখানে ডাইনোসর, গাড়ি ইত্যাদির ছবি থাকা উচিত ছিল৷ কিন্তু শুধু মেয়েদের জন্য (ছবিতে দেখুন পিংক এডিশন) বলেই এই ব্যবস্থা!
ছবি: DW/C. Bleiker
স্লিম, সুন্দরী
‘অ্যামেরিকাস নেক্সট টপ মডেল’-এর মতো প্রতিযোগিতাগুলো মেয়েদের মনে করিয়ে দেয়, মডেল মানেই স্লিম ও সুন্দর হতে হবে৷ জার্মান খেলনা প্রস্তুতকারক ‘প্লেমোবিল’ মেয়ে বাচ্চাদের জন্য এই ধরণের প্রতিযোগিতা খেলার মতো খেলনা নিয়ে এসেছে৷ আজকাল ছেলে মডেল বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলেও ছেলে শিশুদের জন্য এমন কোনো খেলনা এখনও বাজারে আনেনি প্রেমোবিল৷
ছবি: Screenshot playmobil.de
সাত বছরের মেয়ে বাচ্চার অভিযোগের পর
৭ বছরের শিশু শার্লটে বেনজামিন একবার ‘লেগো’-র কাছে এই বলে অভিযোগ জানিয়েছিল যে, তাদের খেলনার নারী চরিত্ররা শুধু বাসায় বসে থাকে, বিচে যায় আর শপিং করে৷ এরপর লেগো ২০১৪ সালে ‘রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ নামে একটি খেলনা বের করে যেখানে মেয়েদের বিজ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়৷ বাজারের আসার কিছুদিনের মধ্যেই সেটি বিক্রি হয়ে যায়৷ এর মাধ্যমে ক্রেতাদের মনোভাবও বোঝা গেছে৷ অন্য কোম্পানিগুলো সেটি অনুসরণ করতে পারে৷