জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন দূষণের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরেছে৷ সেখানে বলা হচ্ছে, বিশ্বে প্রতি চার জনে একজন দূষণের কারণে মারা যাচ্ছেন৷ এখনই এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে সামনে ভয়াবহ বিপদ৷
বিজ্ঞাপন
কেনিয়ার নাইরোবিতে চলা পাঁচদিনব্যাপী জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে বুধবার গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট আউটলুক নামে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷ গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরিতে ছয় বছর ধরে কাজ করেছেন ৭০টি দেশের ২৫০ জন গবেষক৷ তাঁরা দেখার চেষ্টা করেছেন যে, জনস্বাস্থ্যের ওপর দূষণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশের প্রভাব কতটা৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বে যত রোগ ও মৃত্যু তার প্রায় ২৫ ভাগের কারণ পরিবেশের দুরবস্থা'৷
এর মধ্যে সবচেয়ে ওপরে আছে বায়ুদূষণ৷ এর কারণে বছরে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়৷ এরপর পানিদূষণ ও সুপেয় পানির অভাবে ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগে মারা যান আরো ১৪ লাখ মানুষ৷
তাদের হিসেব অনুযায়ী, শুধু ২০১৫ সালেই ৯০ লাখ মানুষ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মারা গেছেন৷
গবেষণায় বলা হয়েছে, জরুরি পদক্ষেপ না নেয়া হলে ২০৫০ সালের মধ্যে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার আরো অসংখ্য মানুষ মারা যাবেন৷ গরিব দেশগুলো বেশি ভুক্তভোগী হবে৷ গবেষণায় করা সুপারিশে বৈশ্বিক অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হয়৷
নাইজেরিয়ার বোতল বাড়ি
প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে এবং বেকারত্ব দূর করতে নতুন এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে নাইজেরিয়া৷ প্রকল্পের আওতায় প্লাস্টিক বোতল এবং বালি দিয়ে বানানো হচ্ছে বাসাবাড়ি৷ এই বাড়িগুলো পরিবেশসম্মত এবং দীর্ঘস্থায়ী৷
ছবি: DW/G. Hilse
আফ্রিকার বৃহত্তম বোতল বাড়ি
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ হচ্ছে এই বাড়ি৷ প্লাস্টিক, বালি ও কংক্রিট মিশিয়ে তৈরি এই বাড়িই মহাদেশটিতে সবচেয়ে বড়৷ এখন পর্যন্ত বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৬ হাজারেরও বেশি পলিথিলিন টেরেফথালেট বোতল৷ বোতলগুলো বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে,অনেকে স্বেচ্ছায় দানও করেছেন৷
ছবি: DW/G. Hilse
ভিন্ন ধরনের রিসাইক্লিং
প্রায় ১৯ কোটি মানুষের দেশটিতে প্লাস্টিক একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ প্লাস্টিক বোতল মাঝেমধ্যেই দেশটির শহরগুলোর পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে৷ বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরো বাজে রূপ নেয়৷ বছরে উৎপাদিত ৩ দশমিক ২ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশটিতে নেই তেমন কার্যকর ব্যবস্থা৷ ফলে রিসাইক্লিং যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে৷
ছবি: DW/G. Hilse
প্রকল্পের উদ্যোক্তা
নির্মাণ প্রকৌশলী ইয়াহিয়া আহমেদ জার্মানিতে ২৭ বছর ধরে বাস করেছেন, চাকরিও করেছেন৷ নিজের দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকায় বানানো এ ধরনের কিছু বাড়ি থেকেই এই ধারণা পান আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানিতে এক বন্ধু আমাকে এ বুদ্ধি দেয়৷ ভাবলাম, নাইজেরিয়াতে এটা কাজে লাগানো যায়৷’’
ছবি: DW/G. Hilse
বেকারত্ব নিরসন
নাইজেরিয়ার ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের এক চতুর্থাংশেরই কোনো নিয়মিত আয় নেই৷ অনেককেই শেষ পর্যন্ত জীবনধারণে বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি বা চুরি৷ আহমেদ বলছেন, ‘‘এদের অনেকে রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়, কেউ জড়িয়ে পড়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে৷ এজন্য তাঁদের বিকল্প উপায় দিতে হবে৷’’
ছবি: DW/G. Hilse
সাধারণ কিন্তু কার্যকর
নির্মাণ প্রক্রিয়া বিস্ময়করভাবে সহজ৷ প্লাস্টিকের খালি বোতল বালি এবং পাথরকুঁচি দিয়ে ভর্তি করা হয়৷ এরপর নাইলনের দড়ি দিয়ে বেঁধে সেগুলোকে একটার ওপর একটা সাজিয়ে কাদা দিয়ে আটকে দেয়া হয়৷ এই পদ্ধতি যে শুধু পরিবেশবান্ধব তাই নয়, খরচও অনেক কম৷ এতে নির্মাণ খরচ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব৷
ছবি: DW/G. Hilse
প্রশিক্ষণ, দক্ষতা
ইটের বাড়ি বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সিইবা৷ কিন্তু গত সাত বছর ধরে তিনি ইটের বদলে বাড়ি বানাচ্ছেন বোতল দিয়ে৷ ডয়চে ভেলেকে সিইবা বলেন, ‘‘প্রথমে বোতল দিয়ে বাড়ি বানাতে খুব অস্বস্তি লাগতো৷ কিন্তু একবার কৌশল শিখে গেলে সব সহজ হয়ে যায়৷’’
ছবি: DW/G. Hilse
বুলেটপ্রফ এবং ভূমিকম্প-প্রতিরোধী
বোতল বাড়ির আরেক বড় সুবিধা- স্থায়ীত্ব৷ বালিভর্তি বোতলগুলো প্রায় অবিনশ্বরই বলা চলে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার হন্ডুরাসে বানানো এমন কিছু বাড়ি ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পেও অক্ষত ছিল৷ নির্মাতাদের দাবি, এই বাড়িগুলো বুলেটপ্রুফ৷
ছবি: DW/G. Hilse
অসীম সৃষ্টিশীলতা
আবুজা প্রকল্পে নানা আকারের ও বর্ণের প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়৷ ফলে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইনে বাড়ি বানাতেও কোনো বাধা নেই৷ উত্তর নাইজেরিয়ার ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্যের সাথে নানা রং ও নকশা মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে অপূর্ব কিছু বাড়ি৷
ছবি: DW/G. Hilse
দক্ষ প্রশিক্ষক
জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সাত বছর আগে নাইজেরিয়ার কিছু নির্মাণ শ্রমিককে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন আহমেদ৷ তাঁর সেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন পরিণত হয়েছেন দক্ষ প্রশিক্ষকে৷ এখন বোতল বাড়ি নির্মাণকাজে আগ্হীদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে৷
ছবি: DW/G. Hilse
9 ছবি1 | 9
গবেষণার কো-চেয়ার জয়িতা গুপ্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘একটা স্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ে তুলতে পারলে এটা যে শুধু বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখবে তা নয়, এটা দরিদ্রতম দেশগুলোর জীবনমানেরও উন্নয়ন করবে, কারণ তাঁরা পরিষ্কার বাতাস ও পানির ওপর নির্ভরশীল৷''
এস্তোনিয়ার পরিবেশমন্ত্রী ও নাইরোবি সম্মেলনের সভাপতি সিম কিসলার বলেন, ‘‘এখন আমরা ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি চাইছি, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে ভবিষ্যতে আমাদের আন্তর্জাতিক আইন করার দরকার হবে৷''
জাতিসংঘের পরিবেশ বিভাগের প্রধান জয়েস এমসুয়া বলেন, প্রবৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে পরিবেশ যে সরাসরি যুক্ত, তা পরিষ্কার৷ তাই দেরি না করে এখনই ব্যবস্থা নেবার ওপর জোর দেন তিনি৷