সোমবার বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর কিছু পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে গৃহহীন ও শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৫৩ লক্ষ, যা একটি নতুন রেকর্ড৷
বিজ্ঞাপন
‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস' নামে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বলছে, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৮ লক্ষ৷
২০১৫ সালে বিশ্বের প্রতি ১১৩ জন মানুষের মধ্যে একজন হয় শরণার্থী না হয় বিভিন্ন কারণে নিজ দেশেই ঘরছাড়া অবস্থায় ছিলেন৷
গৃহহীনদের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা দুই কোটি ১৩ লক্ষ৷ আর নিজে দেশে ঘরছাড়া হয়েছেন চার কোটি আট লক্ষ মানুষ৷
ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র মেলিসা ফ্লেমিং তাঁর টুইটে জানিয়েছেন, গত বছর প্রতি মিনিটে ২৪ জন মানুষ গৃহহীন হয়েছেন৷ ২০০৫ সালে সংখ্যাটি ছিল ছয় জন৷
সবচেয়ে বেশি শরণার্থী
শরণার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিক ফিলিস্তিনের৷ সংখ্যাটি ৫০ লক্ষের বেশি৷ ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির কারণে যে ফিলিস্তিনিরা পালিয়েছেন তাঁরা সহ তাঁদের বংশধররা আছেন এই তালিকায়৷ ফিলিস্তিনিদের পর সবচেয়ে বেশি শরণার্থী হয়েছেন সিরিয়ার নাগরিকরা৷ তাঁদের সংখ্যা ৪৯ লক্ষ৷ তালিকায় এরপর আছেন আফগান (২৭ লক্ষ) ও সোমালীয়রা (১১ লক্ষ)৷
শরণার্থীদের অর্ধেকই শিশু!
জাতিসংঘ বলছে, গত বছর যতজন শরণার্থী ছিলেন তাদের মধ্যে ৫১ শতাংশই শিশু৷ এদের অনেককে বাবা-মা থেকে আলাদা করা হয়েছে, কেউ আবার একাই দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে৷ ২০১৫ সালে প্রায় ৯৮ হাজার চারশ সঙ্গিহীন শিশু আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে৷
অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটছেন শরণার্থীরা
অন্তত দু’হাজারের মতো শরণার্থী গ্রিসের ইডোমেনি ক্যাম্প ছেড়ে চার ঘণ্টার মতো হেঁটে ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশে সক্ষম হয়েছে৷ এ জন্য তাদের একটি নদী পাড়ি দিতে হয়েছে, যেখানে তলিয়ে গেছেন অন্তত তিনজন শরণার্থী৷
ছবি: DW/D.Tosidis
কোনো এক উপায়ের সন্ধানে
শিশু, পরিবারসহ শত শত শরণার্থী ইডোমিনি শরণার্থী শিবির থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন সোমবার সকালে৷ উদ্দেশ্য গ্রিস-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের কোন অরক্ষিত অংশ থেকে ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশ করা৷
ছবি: DW/D.Tosidis
সাহসিকতার পরিচয়
ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশের আশায় এক উত্তাল নদী এভাবে পাড়ি দিয়েছেন শরণার্থীরা৷ কাঁটাতারের বেড়া নেই সীমান্তের এমন অংশ খুঁজে পেতে তাদের প্রানান্ত চেষ্টা৷
ছবি: DW/D.Tosidis
ভয়, আতঙ্ক
উত্তাল নদী পাড় হতে গিয়ে ভয় পাওয়া এক অল্প বয়সি শরণার্থীকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন অন্য শরণার্থীরা৷
গ্রিক সীমান্তের গ্রাম চামিলোর, যেটি কিনা সীমান্ত থেকে মাত্র এক দশমিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে, বাসিন্দারা এভাবেই পানি দিয়ে সহায়তা করেছেন লম্বা পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করা শরণার্থীদের৷
ছবি: DW/D.Tosidis
চরম দুর্দশা
ক্লান্ত এবং দুর্বল শরণার্থীরা নদী পাড় হতে গিয়ে চরম দুর্দশায় পতিত হন৷
ছবি: DW/D.Tosidis
সতর্ক বার্তা
শরণার্থীদের মিছিল দেখার পর সম্ভবত পুলিশকে ফোন করেন ডানের এই স্থানীয় বাসিন্দা৷
ছবি: DW/D.Tosidis
সেনাবাহিনীর হুমকি
ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তে শরণার্থীদের প্রথমাংশ প্রবেশের কিছু পরেই সেখানে হাজির হন সেদেশের সেনাবাহিনী৷
ছবি: DW/D.Tosidis
মার খাওয়া এবং পোড়া
এক আফগান শরণার্থী দাবি করেছেন, ম্যাসিডোনিয়ার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পিটিয়েছে এবং গাল পুড়ে দিয়েছে৷
ছবি: DW/D.Tosidis
9 ছবি1 | 9
আশ্রয়ের আবেদন সবচেয়ে বেশি জার্মানিতে
গত বছর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে সবচেয়ে বেশি৷ চার লক্ষ ৪১ হাজার নয়শটি৷ তালিকায় এরপর আছে যুক্তরাষ্ট্র (এক লক্ষ ৭২ হাজার)৷ সুইডেন আর রাশিয়াতেও দেড় লক্ষের বেশি আবেদন পড়েছে৷
সবচেয়ে বেশি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক
গত বছর তুরস্ক প্রায় ২৫ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷ এদের প্রায় সবাই সিরীয় নাগরিক৷ এরপর আছে পাকিস্তান (১৬ লক্ষ) ও লেবানন (১১ লক্ষ)৷
সিরিয়া থেকে যেভাবে জার্মানিতে এসেছে একটি পরিবার
জীবন বাঁচাতে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন অনেক শরণার্থী৷ জার্মানির ইমিগ্রেশন সেন্টার সেসব মানুষের সংগ্রাম নিয়ে আয়োজন করেছে একটি প্রদর্শনীর৷ সেখানেই জানা গেলো কোটো পরিবারের বেঁচে থাকার গল্প৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
আলেপ্পোয় সুখি সংসার
২০১৬ সালে তোলা কোটা পরিবারের ছবি৷ খলিল, তাঁর স্ত্রী হামিদা, সন্তান মান্নান, ডোলোভান, আয়াজ এবং নের্ভানা৷ তখন সিরিয়ায় কোনো গৃহযুদ্ধ ছিল না, ছিল না ধ্বংসলীলা৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত
সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর সময় খলিল কোটো সেদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি শাখার প্রধান ছিলেন৷ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর চাকুরি হারান এই ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার৷ একসময় খাদ্য এবং পানির অভাব প্রকট হতে থাকে৷ ২০১৪ সালের এপ্রিলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তারা তুরস্ক চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে খলিলের মা বাস করতেন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
ধাপে ধাপে আগানো
খলিল তুরস্কে কোনো কাজ খুঁজে পাননি৷ তাই ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাঁর পরিবার জার্মানিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন৷ খলিলের ভাই ইউরোপে বাস করেন৷ তিনিই পরিবারটিকে জার্মানিতে আসতে উৎসাহ যোগান৷ শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসার পথে বুলগেরিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে ছয় মাস কাটান কোটো পরিবার৷ এই চামচটি সেই শিবিরের এক স্মৃতিচিহ্ন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
জার্মানিতে স্বাগতম
অবশেষে জার্মানিতে কোটো পরিবার৷ জার্মানির উত্তরের শহর ব্রেমেনে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ সেখানকার এক নারী খলিলকে এই জিন্সের প্যান্টটি দিয়েছেন, জার্মানিতে পাওয়া তাঁর প্রথম পোশাক এটি৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
খলিলের সন্তানরা এখন জার্মান স্কুলে যাচ্ছেন৷ আর খলিল এবং তাঁর স্ত্রী হামিদা শিখছেন জার্মান৷ ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার জার্মানিতে একটি চাকরি পাবেন বলে আশা করছেন৷ সিরিয়ায় ফেলে আসা অতীত মাঝে মাঝে মনে করে আনন্দ খোঁজেন তারা৷ আয়াজের সিরিয়ার স্কুলের আইডি কার্ড এটি৷