আগের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা তাঁদের প্রেমিক বা স্বামীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷ কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে, এরা ছাড়া পরিবারের অন্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের হাতেও যৌন হয়রানির ঘটনা বহু নারীর জীবনে ঘটে থাকে৷
বিজ্ঞাপন
এই প্রথম পুরো বিশ্বে নারীর যৌন হয়রানি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে বুধবার৷ প্রতিবেদনের লেখকরা বলেছেন, তথ্যভাণ্ডারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফাঁক থাকা সত্ত্বেও একটা ব্যাপার পরিষ্কার৷ আর তা হলো, নারীদের যৌন হয়রানির বিষয়টি এমন একটি সমস্যা যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে৷
৫৬টি দেশের নারীদের সাক্ষাৎকার এবং বিভিন্ন ঘটনা তদন্ত করে গবেষকরা এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন৷ ৭.২ শতাংশ নারী যাঁদের বয়স ১৫ বছরের বেশি, তাঁরা সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, জীবনে অন্তত একবার তাঁরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং সেই জঘণ্য কাজটি হয়েছে প্রেমিক বা স্বামী ছাড়াও পরিবারের অন্য আত্মীয়দের হাতে৷
জার্মানিতে পতিতাবৃত্তির বিরোধিতা
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে জার্মানির ভবিষ্যত সরকার৷ নারী অধিকার কর্মীরা চান আইন করে এই পেশায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক৷
ছবি: AFP/Getty Images
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে জার্মানির ভবিষ্যত সরকার৷ রক্ষণশীল এবং সামাজিক গণতন্ত্রকামী যে দুটো দলের সমন্বয়ে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তারাই আইনটি পুনর্বিবেচনার পক্ষে৷
ছবি: Isabel Winarsch
বৈধ পেশা
জার্মানিতে পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ ২০০২ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি এবং গ্রিন পার্টি জার্মানিতে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়ে একটি আইন পাস করে৷ এরপর থেকে এটি একটি বৈধ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে৷ যৌনকর্মীরা চাইলেই সামাজিক বিমা পেতে পারে এবং কোনো খদ্দের অর্থ না দিলে আদালতের দারস্থ হতে পারে৷
ছবি: imago/EQ Images
কোটি কোটি টাকার লেনদেন
জার্মান কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে কেবল পতিতাবৃত্তিতেই লেনদেন হয় ১৫শ কোটি ইউরো৷ তবে ঠিক কত নারী এই পেশায় জড়িত তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ধারণা করা হয় অন্তত ৪ লাখ নারী এ পেশায় জড়িত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অর্ধেক অভিবাসী
প্রায় চার লাখ যৌনকর্মীর অর্ধেকই এসেছে বিভিন্ন দেশ থেকে৷ অর্থাৎ জার্মানিতে তারা অভিবাসী৷ অনেককে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হয়েছে৷ এখন তারা আর চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারছে না৷ আবার কেউ রয়েছেন যারা কেবল অর্থ রোজগারের আশায় এই পথ বেছে নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance / rolf kremming
নিবন্ধিত না হওয়া
যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বেশিরভাগই নিবন্ধিত নন এবং তাদের কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই৷ কেন্দ্রীয় পেশাজীবী সংস্থা বলছে, শতকরা মাত্র ৪৪ জন যৌনকর্মী সামাজিক বিমা করেছেন৷
ছবি: Reuters
নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি
নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, বেশিরভাগ নারীই নিজের ইচ্ছায় এই পেশায় আসেন না৷ ইউরোপের পূর্বাঞ্চল থেকে অনেক নারীদের জোর করে এই ব্যবসায় নামানো হয়৷ তারা এটাকে আধুনিক দাসপ্রথা হিসেবে উল্লেখ করে এই পেশায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন৷ সেইসাথে আইনটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ফ্রান্সের পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্সে গত কয়েক দশক ধরেই যৌন পল্লি এবং যৌন ব্যবসা দুটোই নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ খদ্দেরদের হাতেনাতে ধরতে পারলে ১,৫০০ ইউরো জরিমানা ধার্য করে আইন করেছে সরকার৷ সমালোচকরা বলছেন, এর অর্থ নারীরা খদ্দেরদের সেবা দিতে প্রস্তুত, কিন্তু খদ্দেররা তা নিতে পারবে না৷ তাই বিলটি নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/rolf kremming
সুইডেনের আইনে ফ্রান্স
ফ্রান্স এই আইন করেছে মূলত সুইডেনের আইন পর্যালোচনা করে৷ সেখানে ১৯৯৯ সাল থেকে যৌন ব্যবসার খদ্দেরদের শাস্তির আওতায় আনা হয়৷ সেসময় সুইডেনে পতিতাবৃত্তির বৈধতা দেয়া হয়৷ তবে এর ফলে এইসব পতিতাদের উপর নির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে বলে জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন হাসপাতালের একজন নার্স৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
যৌন হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সাহারা অধ্যুষিত আফ্রিকায়৷ মহাদেশের মধ্যাঞ্চলে ২১ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৭.৪ শতাংশ যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে৷ তবে আফ্রিকার এই হার আপনাকে বিস্মিত না করলেও উন্নত দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেরে পরিসংখ্যান চমকে দেবে৷ সেখানে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির হার ১৬.৪ শতাংশ৷
গবেষকরা দক্ষিণ এশিয়া, অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতে এ হার অত্যন্ত কম দেখেছেন, মাত্র ৩.৩ শতাংশ এবং উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে এ হার ৪.৫ শতাংশ৷ এছাড়া পূর্ব ইউরোপের তিনটি দেশে যৌন হয়রানির মাত্রা কম৷ লিথুয়ানিয়া, ইউক্রেন এবং আজারবাইজানে এই হার ৬.৯ শতাংশ৷ পশ্চিমে এই মাত্রা অনেক বেশি, প্রায় ১১.৫ শতাংশ৷ আর উত্তর অ্যামেরিকায় যৌন হয়রানির মাত্রা আরো বিস্ময়কর, ১৩ শতাংশ৷
সাউথ আফ্রিকান মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের সদস্য এবং এই প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক নাঈমা আব্রাহাম জানান, গবেষণা থেকে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে পুরো বিশ্বে নারীদের ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
তিনি আরো জানান, ‘‘সঠিক তথ্য পেলে হয়ত দেখা যাবে কয়েকটি অঞ্চল, যেমন দক্ষিণ এশিয়ায় যৌন হয়রানি বা সহিংসতার মাত্রা আরো বেশি৷'' সংবাদ সংস্থা এএফপিকে একটি ই-মেলে গবেষণার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানিয়েছেন নাঈমা৷ তিনি বলেছেন, ইউরোপ, ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নর্থ অ্যামেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তথ্য সঠিক হলেও দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর ও মধ্য আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের তথ্যগুলোতে অবশ্যই ফাঁক রয়েছে৷