অতীতের সভ্যতার হারানো নিদর্শন আবার ফিরে পাবার আশা এতকাল অবাস্তব মনে হতো৷ এবার আধুনিক লেজার প্রযুক্তির সাহায্যে সেই রহস্য উন্মোচনের কাজ অনেক সহজ হয়ে উঠেছে৷ রোমান আমলে নির্মিত এক বিশাল এলাকা আবার জীবন্ত হয়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
অতীতের রহস্য সমাধানের লক্ষ্যে গবেষকরা আকাশে পাড়ি দিচ্ছেন৷ আধুনিক লেজার প্রযুক্তির কল্যাণে সেখান থেকে অচেনা নির্মাণ কাঠামো চিহ্নিত করা সম্ভব৷ লেজার স্ক্যানার গাছপালা, ঝোপঝাড়, ঘাসের আড়ালে জমি দেখতে পায়৷ সেটাই হলো কৌশল৷
এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ইউরোপের একদা সবচেয়ে বড় নির্মাণের নিদর্শন নতুন করে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাইমেস-এ রোমান আমলের সেই সীমান্ত প্রাচীর অনেক জায়গায় অদৃশ্য হয়ে পড়েছিল৷ প্রত্নতাত্ত্বিক মার্টিন শাইখ বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না, এমন ফ্ল্যাট চিহ্নও ফুটে ওঠে৷ লেজার স্ক্যানের মাধ্যমে অবশ্য তা অত্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়৷ অবশিষ্ট অংশ চোখে পড়ে৷ হয়তো মাটির ১০ সেন্টিমিটার উপরে থাকা সত্ত্বেও তা জঙ্গলে ঢেকে যায়৷ তার উপর দাঁড়ালে এমনকি বিশেষজ্ঞও সেটি চিনতে পারেন না৷''
ইউনেস্কোর নতুন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটস
প্রকৃতি ও মানবসংস্কৃতি থেকে শুরু করে হাজার বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সব কিছু আছে ইউনেস্কোর নতুন তালিকায়৷
ছবি: ICCHTO
হামবুর্গ বন্দরের মালগুদাম ও নৌ-বাণিজ্য কেন্দ্র
‘স্পাইশারস্টাট’ হলো হামবুর্গের প্রথম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷ এলবে নদীর তীরের এই ১৫টি মালগুদাম এই শহরের সমুদ্রযাত্রার ইতিহাস ও তার শিল্পকারখানা সংক্রান্ত স্থাপত্যের পরিচয় বহণ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
প্যালারমো; সেফালু ও মনরেয়ালে-র গির্জা
ইটালিতে এর আগেই ৫০টি বিশ্ব উত্তরাধিকার স্থান ছিল, এবার আরো একটি যোগ হলো: আরব-নর্মান স্থাপত্যের প্যালারমো শহর (ছবি) এবং তার কাছের সেফালু ও মনরেয়ালের ক্যাথিড্রাল৷ এ সব হলো সিসিলি-তে দ্বাদশ শতাব্দীর নর্মান রাজত্বের প্রতীক৷ সে আমলের শাসকরা প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ধারার মধ্যে সংমিশ্রণ এনেছিলেন৷
ছবি: CRICD
ফরাসি আঙুরখেত ও ওয়াইন সেলার
ফ্রান্সের দু’টি বিখ্যাত ওয়াইন তৈরির এলাকাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ বার্গান্ডি-তে আঙুরচাষের ঐতিহ্য মধ্যযুগ যাবৎ৷ দ্বিতীয় যে আঙুরচাষের এলাকাটি নির্বাচিত হয়েছে, সেটি হলো শ্যাম্পেইন – কেন, নাম শুনেই বুঝতে পারছেন৷
নরওয়ের রিউকান ও নোটোডেন শিল্পনগরীগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের ফোর্থ সেতুকেও বিশ্ব উত্তরাধিকার স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে৷ ব্রিজটি স্কটল্যান্ডের ফোর্থ নদীর মোহানায় অবস্থিত৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Milligan
দিয়ারবাকির দুর্গ, সুপ্রাচীন শহর এফেসাস
তুরস্কের দু’টি নতুন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷ এফেসাস-এ গ্রিক দেবতা আর্টেমিস-এর সুবিখ্যাত মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যাবে (ছবি)৷ এই মন্দির হলো বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যগুলির একটি৷ তুরস্কের অন্য হেরিটেজ সাইটটি হলো দিয়ারবাকির দুর্গ ও হেফসেল উদ্যান৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ozturk
সিঙ্গাপুর বোট্যানিক গার্ডেনস
সিঙ্গাপুরও তার প্রথম বিশ্ব উত্তরাধিকারের স্থান পেয়েছে৷ এখানকার বোট্যানিক গার্ডেনে তিন হাজারের বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ, একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য ও একটি অর্কিডের বাগান আছে৷ বোট্যানিক গার্ডেনের ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের৷ প্রতি বছর ৪০ লক্ষের বেশি দর্শক এখানে ভিড় করেন৷
ছবি: picture-alliance/ANN/The Straits Times
প্রাগৈতিহাসিক
ইরানের সুসা ছিল এককালে একটি সমৃদ্ধ শহর৷ খননকার্য চালিয়ে শহরের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে৷ কেরমান প্রদেশের মইমান্ড গ্রামের একটি সুপ্রাচীন গুহাও বিশ্ব উত্তরাধিকারের সম্মান পেয়েছে – যেমন পেয়েছে সৌদি আরবের হা’ইল-এ গুহামানবের অঙ্কনশৈলীর নিদর্শন৷
ছবি: ICCHTO
7 ছবি1 | 7
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বড় এলাকা স্ক্যান করা যায়৷ আলোর গতিতে যন্ত্র মাটি থেকে দূরত্ব পরিমাপ করে৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, সাধারণ গাছপালার নীচে বড় আকারের কোনো কাঠামো আছে কিনা৷ মার্টিন বলেন, ‘‘লাইমিস নিয়ে গবেষণার ১০০ বছরেরও বেশি পুরানো দীর্ঘ ইতিহাস আছে৷ কেউ ভাবে নি, যে নতুন কিছু পাওয়া যাবে৷ তা সত্ত্বেও নতুন টাওয়ার, রক্ষীদের টাওয়ার, কাঠের বাড়িঘরের চিহ্ন উদ্ধার হয়েছে৷ ছোট কিছু দুর্গও আবিষ্কার করা গেছে৷ অর্থাৎ এই তথ্য ঘেঁটে নতুন কিছু পাবার সম্ভাবনা রয়েছে৷''
২,০০০ বছর আগে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বিশাল কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছিলো৷ প্রায় ৯০০ রক্ষীর চৌকি ছাড়াও সেখানে ছিল ১২০টি ছোট-বড় চত্বর৷ এই কাঠামো বহিরাগতদের হামলা মোকাবিলার জন্য নির্দিষ্ট ছিল৷ প্রকৃতি তার প্রায় পুরোটাই গ্রাস করে নিয়েছে৷
লেজার স্ক্যানারের তথ্য না থাকলে তা জানা যেত না৷ তার ভিত্তিতে অচেনা রক্ষীদের টাওয়ার আবার ভার্চুয়াল উপায়ে নির্মাণ করা সম্ভব৷ ধ্বংস হয়ে যাওয়া টাওয়ার অবিকল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেতে পারে৷ গবেষকদের জন্য এ একেবারে নতুন এক অভিজ্ঞতা৷ যেমন এভাবে রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা বলয়ের উপর নতুন করে আলোকপাত করা সম্ভব৷ মার্টিন শাইখ বলেন, ‘‘টাওয়ারগুলির মধ্যে যোগাযোগ, কে কোন এলাকার দায়িত্ব পেয়েছিল – আমাদের কাছে যে থ্রিডি তথ্য রয়েছে, তা থেকে এ সব স্পষ্ট হয় যায়৷ সেই তথ্য দিয়ে প্রত্নতত্ত্বের কাজ আরও গভীরভাবে করার রোমাঞ্চই আলাদা৷