প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষা করলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানবে
সিকদার মো. জুলকারনাইন
৫ এপ্রিল ২০১৭
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিগণিত৷ বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস, জাতিসত্ত্বা বিকাশের সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমা উদঘাটনে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো অনন্য ভূমিকা পালন করছে৷
বিজ্ঞাপন
আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য-বৌদ্ধবিহার, মন্দির, মসজিদ, সাধারণ বসতি, আবাসিক গৃহ, নহবতখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জমিদার প্রাসাদ অথবা রাজপ্রাসাদ, অসংখ্য প্রাচীন পুকুর ও দীঘি শানবাঁধানো ঘাট, পানীয় জলের কুয়া, প্রস্তরলিপি, তাম্রলিপি, মূদ্রা, প্রাচীন পুঁথি-তুলট বা তালপাতায় লেখা, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পোড়ামাটি ও পাথরের ভাস্কর্য, মৃৎপাত্র ইত্যাদি৷
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার এ দেশের ইতিহাস বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি ও সিলেটের চাকলাপুঞ্জিতে পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক হাতিয়ার, মৌর্য যুগে এ অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র মহাস্থানগড় ও উয়ারি-বটেশ্বরে আদি ঐতিহাসিক পর্বের মানুষের বসতি চিহ্ন, নানা ধরনের মৃৎপাত্র, পাথর ও কাঁচের পুঁতি, পোড়ামাটির গুটিকা, স্থাপত্য কাঠামো চিহ্ন, ছাপাঙ্কিত মুদ্রা ইত্যাদি নানা রকম প্রত্ননিদর্শন৷ বরেন্দ্র অঞ্চলে পাল যুগে নির্মিত দক্ষিণ-এশিয়ার অনুপম স্থাপত্যকর্ম সোমপুর মহাবিহার বা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বর্তমানে বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে৷ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মূল মন্দিরের গায়ে পোড়ামাটির ফলকচিত্র এ দেশের মৃৎশিল্পীদের অনুপম শিল্পনৈপুণ্য প্রকাশ করে৷
কেমন আছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো
ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা৷ তবে বেশিরভাগ স্থাপনাই যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে৷ আর যেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেগুলো নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ৷
ছবি: DW/M. Mamun
রূপলাল হাউস
ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে তৈরি হওয়া সুরম্য এই অট্টালিকাটি এখন খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর৷ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের দখলে যাবার পর রূপলাল হাউস ধ্বংসের গোড়ায় পৌঁছেছে৷ ফরাশগঞ্জের স্বরূপ চন্দ্রের দুই পুত্র রূপলাল দাস এবং রঘুনাথ দাস ১৮৪০ সালে এক আর্মেনীয় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পুরোনো একটি ভবন কেনেন৷ পরে কলকাতার স্থপতি নিয়োগ করে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে রূপলাল হাউসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আহসান মঞ্জিল
পুরান ঢাকার আরেক ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিলকে এখন বুড়িগঙ্গা থেকে দেখাই যায় না৷ এর সামনে বসে ফলের বাজার৷ সম্মুখভাগে তাই টিনের বেড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ১৮৩০ সালে ঢাকার নবাব খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের কাছে থেকে পুরনো একটি ভবন কিনে নেন৷ ১৮৭২ সালে নবাব আব্দুল গণি এটিকে নতুন করে নির্মাণ করে তাঁর ছেলে খাজা আহসান উল্লাহর নামে এর নামকরণ করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বড় কাটরা
পুরান ঢাকার চকবাজারে মুঘল আমলের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনাও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে৷ সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়৷ বর্তমানে একটি মাদ্রাসা হয়েছে৷ বেশ কিছু ব্যবসায়ী এ ভবনটি দখল করে আছে৷ স্থাপত্য সৌন্দর্যের বিবেচনায় একসময়ে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি যেন ভগ্নাবশেষ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ছোট কাটরা
ঢাকার চকবাজারে বড় কাটরার কাছেই আরেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ছোট কাটারা৷ শায়েস্তা খানের আমলে আনুমানিক ১৬৬৩ থেকে ১৬৬৪ সালের দিকে এই ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং তা শেষ হয় ১৬৭১ সালে৷ দেখতে অনেকটা বড় কাটরার মতো হলেও এটি আকৃতিতে বড় কাটরার চেয়ে ছোট এবং এ কারণেই হয়তো এর নাম হয়েছিল ছোট কাটরা৷ সংরক্ষণের অভাবে বর্তমানে মুঘল আমলের এ স্থাপনাটিও ধ্বংসপ্রায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
হাজী শাহবাজ মসজিদ
ঢাকার রমনা এলাকায় হাইকোর্টের পিছনে হাজী শাহবাজ মসজিদ সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত পুরাকীর্তি৷ কিন্তু এর পেছনের অংশে আলাদা লোহার ফ্রেম বসানো হয়েছে ছাউনি দেওয়ার জন্য৷ যার ফলে স্থাপনাটির সৌন্দর্য হানি হয়েছে৷ মুঘল শাসনামলে শাহজাদা আযমের সময়কালে ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন কাশ্মীর থেকে বাংলায় আসা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হাজী শাহবাজ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গোয়ালদী শাহী মসজিদ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে গোয়ালদী শাহী মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণার পিলারটি ভবন থেকে খেসে পড়ার উপক্রম হলেও দীর্ঘ দিন চোখ পড়েনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের৷ সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের আমলে মোল্লা হিজাবর খান ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানাম নগর
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার রাজধানী ঐতিহাসিক পানাম নগর৷ ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এই সোনারগাঁওয়ে৷ প্রায় ৫ মিটার চওড়া এবং ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দু’পাশে সুরম্য ৫২টি বাড়ি প্রাচীন এই নগরের অন্যতম আকর্ষণ৷ কিন্তু সঠিক সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ঐতিহাসিক এ শহরটি ধ্বংস হতে চলছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ষাট গম্বুজের মসজিদ
ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের অভ্যন্তরের পাথরের তৈরি পিলারগুলো ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালের এক সংস্কার কাজের সময় সুরক্ষার কথা বলে পলেস্তারার প্রলেপে ঢেকে দেয়া হয়েছিল৷ তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বোধোদয় হওয়ায় সাম্প্রতিক সংস্কারের সময়ে পিলারগুলোর পাথরের উপর থেকে পলেস্তারা তুলে ফেলা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
অযোধ্যার মঠ
বাগেরহাটের যাত্রাপুরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ‘অযোধ্যার মঠ’ কিংবা ‘কোদলা মঠ’৷ মঠের গায়ে গজিয়ে ওঠা বড় বড় পরগাছাগুলোই সংরক্ষিত এ পুরাকীর্তিটির প্রতি সরকারের অবহেলার বড় প্রমাণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
চুনাখোলা মসজিদ
বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনার অংশ চুনাখোলা মসজিদের দেয়ালের ইট খসে পড়ার উপক্রম, দরজা-জানালার গ্রিলও মরিচা ধরে খুলে পড়েছে৷ দীর্ঘদিন সংরক্ষণের ছোঁয়া লাগেনি প্রাচীন এ স্থাপনাটিতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
গোকুল মেধ
বগুড়ার মহাস্থানগড়ের কাছে ঐতিহাসিক ‘গোকুল মেধ’৷ বেহুলার বাসরঘর নামেও এটি পরিচিত৷ বাতি ঝুলানোর জন্য ঐতিহাসিক এ প্রত্নস্থলটির চারপাশ ঘেঁষে বাঁশ বসানো হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বড় বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে তিতাস নদীর তীরে জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরীর সুরম্য প্রাসাদ বড়বাড়িতেও সংস্কারের হাত পড়েনি কখনো৷ ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এ বাড়িটি দখল করে আছে ৪০টিরও বেশি পরিবার৷
ছবি: DW/M. Mamun
চার আনি জমিদার বাড়ি
কোনো রকম সংরক্ষণ না করায় প্রায় ধ্বংসই হয়ে গেছে নাটোরের পুঠিয়ার চার আনি জমিদার বাড়ি৷ পুঠিয়া রাজবাড়ীর শ্যাম সরোবরের দক্ষিণ পাশের এ চার আনি জমিদার বাড়ি ছাড়াও চার আনি কাছারি বাড়িও ধ্বংসের শেষ প্রান্তে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বড় সর্দার বাড়ি
ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ধ্বংসের মহোৎসবের মাঝেও দু-একটি স্থাপনা খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে৷ যেমন ধুরণ সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক বড় সর্দার বাড়ি৷ অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে এ বাড়িটি সংস্কার করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ কোরীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের প্রায় দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তায় করা হয়েছে এ সংস্কার কাজ৷
ছবি: DW/M. Mamun
এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড
বাংলাদেশের যে কোনো সংরক্ষিত পুরাকীর্তি যারা দেখেছেন, এই সাইনবোর্ডটি তাঁদের কাছে বেশ পরিচিত৷ মূল্যবান এই পুরাকীর্তিটি নষ্ট বা ধ্বংস করলে কী শাস্তি হতে পারে তা লিপিবদ্ধ আছে এখানে৷ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ সাইনবোর্ডটি বসিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে৷ প্রতিটি স্থাপনাতেই সংরক্ষণে অবহেলার ছাপ চোখে পড়ে সহজেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
15 ছবি1 | 15
এ দেশে পাথরের সংকটের কারণে নির্মাণ উপকরণ হিসেবে পাথরের বিকল্প হিসেবে পোড়ানো ইট এবং ফলকের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়৷ পাল আমলে বাংলায় বেশ কিছু বিহার স্থাপত্য নির্মিত হয়৷ সীতাকোট বিহার, ভাসুবিহার, জগদ্দল বিহার, শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, হলুদ বিহার, বিক্রমশীলা মহাবিহার ইত্যাদি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এ অঞ্চলে বৌদ্ধ সংস্কৃতি বিকাশের অনন্য উদাহরণ৷
দিনাজপুরের কান্তনগরে মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পুত্র রাজা রামনাথ ১৭০৪ হতে ১৭০২২ সালের মধ্যে নির্মাণ করেন কান্তজীও মন্দির৷ বাংলার পোড়ামাটির শিল্পকর্মের এক বিরল দৃষ্টান্ত এই মন্দিরের দেয়ালে পোড়ামাটির শিল্পকর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি ও তৎকালীন সমাজ চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ শিব মন্দিরটি ১৮২৩ সালে রানী ভুবনময়ী নির্মাণ করেন৷ উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পুঠিয়া রানী সেখানে পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দিরটি নির্মাণ করেন৷ এছাড়া পুঠিয়াতে বড় আহ্নিক মন্দিরটি টেরাকোটার অলংকরণে দোচালা ও চারচালার সংমিশ্রণে তৈরি ত্রি-মন্দির, যেটি এ অঞ্চলের অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷
এছাড়াও বাংলাদেশের নানা জায়গায় অসংখ্য মন্দির স্থাপত্য জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে৷ মন্দিরগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে৷
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রাচীণ মসজিদ স্থাপত্য৷ সুলতানী আমলের অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ৷ সুলতান হুসাইন শাহের সময়কালে (১৪৯৩-১৫১৯) পনেরো গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি নির্মিত হয়৷ ইট ও পাথরের তৈরি এই মসজিদে পোড়ামাটির কারুকাজ রয়েছে৷ রাজশাহীর বাঘায় ১৫২৩ সালে নির্মিত বাঘা মসজিদ গুরুত্বপুর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ এছাড়া মুন্সিগঞ্জের রামপালে মালিক কাফুর ১৪৮৩ সালে বাবা আদম শহীদের নামে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেন৷ রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর থানার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে দেখা যায় আমগ্রাম, কিসমত মারিয়া, কাঠালিয়া ও রইপাড়া গ্রামে মোঘলপরবর্তী যুগের ছয়টি মসজিদ স্থাপত্য৷ বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ৷সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহের শাসনকালে সুফি সাধক সেনাপতি খানজাহান আলী ১৮৪২ থেকে ১৪৫৯ সাল মধ্যে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন৷
‘রাঙ্গামাটির ছাদ’ অপূর্ব সাজেক ভ্যালি
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি সাজেক৷ জায়গাটির অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায়৷ নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা সাজেকের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘রাঙ্গামাটির ছাদ’
সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন৷ সাজেকের পাহাড়চূড়া থেকে রাঙ্গামাটির চারপাশের বড় একটা অংশ দেখা যায় বলে একে ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’ বলা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
আধুনিক রিসোর্ট
মূল সাজেক ভ্যালিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গড়ে তোলা পর্যটন কেন্দ্র৷ ‘রুনময়’ নামে আধুনিক একটি রিসোর্ট আছে এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সাজেক রিসোর্ট
রুইলুই পাড়ায় ‘সাজেক রিসোর্ট’ নামের আধুনিক এ রিসোর্টটিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত৷ এছাড়া রুইলুই পাড়ায় বেশ কিছু সাধারণ মানের রিসোর্ট আছে৷ পর্যটকদের সিংহভাগই থাকেন রুইলুই পাড়ায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ত্রিপুরা সম্প্রদায়
সাজেকের রুইলুই পাড়ায় এক ত্রিপুরা মা ও শিশু৷ রুইলুই পাড়ায় বসবারত নৃ-গোষ্ঠীদের অধিকাংশই ত্রিপুরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘ঝাড়ভোজ’
সাজেক ভ্যালির পাশে ‘ঝাড়ভোজ’ বনভোজন কেন্দ্র৷ জনপ্রতি ২০ টাকা টিকেটে জায়গাটিতে প্রবেশ করতে হয়৷ এখান থেকে চারপাশের পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
যাতায়াত
সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও যাতায়াত সুবিধা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে৷ সেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার৷ যেতে হয় আঁকাবাঁকা সর্পিল পাহাড়ি পথ পেরিয়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘চাঁদের গাড়ি’
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার প্রধান বাহন ‘চাঁদের গাড়ি’৷ পুরনো জিপ গাড়ির স্থানীয় নাম এটি৷ এসব চাঁদের গাড়ীর বেশিরভাগই আশির দশক কিংবা তারও আগের৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘গঙ্গারাম মুখ’
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে বাঘাইহাট বাজারের পরই দেখা মিলবে পাহাড়ী দুই নদীর মিলনস্থল ‘গঙ্গারাম মুখ’৷
ছবি: DW/M. Mamun
কাচালং নদী
অপূর্ব পাহাড়ি নদী কাচালং৷ খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পথে অপূর্ব এ পাহাড়ি নদীটিও দেখা যাবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঘের সঙ্গে মিতালি
পাহাড়ের চূড়ায় বলে সাজেকের সঙ্গে মেঘের মিতালিও দেখা যায়৷ তবে মেঘে ঢাকা সাজেক দেখার আসল সময় আগস্ট-অক্টোবর মাস৷
ছবি: DW/M. Mamun
কংলাক পাহাড়
সাজেকের কংলাক পাহাড়৷ সাজেক ভ্রমণে অবশ্য দ্রষ্টব্য৷ রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের এ কংলাক পাহাড় সাজেকের সর্বোচ্চ জায়গা৷
ছবি: DW/M. Mamun
কংলাক পাড়া
কংলাক পাহাড়ের উপরে কংলাক পাড়া৷ পাহাড়চূড়ার ছোট্ট এ গ্রামটিতে ত্রিপুরা ও লুসাই নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস৷
ছবি: DW/M. Mamun
লুসাই নারী
কংলাক পাহাড়ে পানি নিয়ে ফিরছেন এক লুসাই নারী৷ কংলাক পাহাড়ের নীচে কংলাক ঝরনাই এখানকার মানুষের পানির একমাত্র উৎস৷ এই কংলাক ঝরণার নামেই পাহাড়টিরও নামকরণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
মা ও শিশু
কংলাক পাড়ার একটি বাড়িতে ত্রিপুরা মা ও শিশু৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘জলবুক কটেজ’
সাজেকের কংলাক পাহাড়ের গোড়ায় প্রকৃতির মাঝে ‘জলবুক কটেজ’৷ সাজেকের নিসর্গ উপভোগ করতে হলে এই ইকো কটেজটির কোনো জুড়ি নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘পাইলিংপাড়া’
কংলাক পাহাড়ের নীচে আরেকটি পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্ট একটি গ্রাম ‘পাইলিংপাড়া’৷ ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর ১৪টি পরিবারের বসবাস এই গ্রামে৷
ছবি: DW/M. Mamun
কাপড় বুনন
পাইলিং পাড়ায় কাপড় বুননে ব্যস্ত দুই ত্রিপুরা নারী৷ ত্রিপুরা নারীরা কাপড় বুননে বেশ দক্ষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘হাই স্কুল পাড়া’
কংলাক পাড়ার নিচে আরো একটি পাহাড়ি গ্রাম ‘হাইস্কুল পাড়া’৷ ব্রিটিশ আমলে সেখানে একটি হাই স্কুল থাকলেও এখন আর সেটি নেই৷ তবে গ্রামের নামের সঙ্গে রয়ে গেছে সেই স্কুল৷ কংলাক পাড়া থেকে এ গ্রামটিতে পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জুম চাষ
হাই স্কুল পাড়ায় ২৯টি ত্রিপুরা পরিবারের বসবাস৷ তাদের প্রধান পেশা জুম চাষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক
সাজেকের হাইস্কুল পাড়ায় মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখছেন দুই ত্রিপুরা নারী৷ পাহাড়ি এসব এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক তাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড়ি ছড়া
সাজেকের হাই স্কুল পাড়ার মানুষের পানির চাহিদা মেটায় ছোট্ট এই পাহাড়ি ছড়া৷ বর্ষা মৌসুমে এ ছড়ায় পর্যাপ্ত পানি থাকলেও শীত মৌসুমে তা একেবারেই তলানিতে ঠেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
21 ছবি1 | 21
মুঘল সুবা বাংলার রাজধানী ঢাকায় অনেক স্থাপত্যকীর্তি নির্মিত হয়৷কিন্তু কালের বিবর্তনে খুব কম সংখ্যকই আদিরূপে টিকে আছে৷ টিকে থাকা স্থাপত্যগুলোর মধ্যে মসজিদই প্রধান৷ তবে এ সব পূরনো মসজিদের সামগ্রিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়৷ অপরিকল্পিত সংস্কার ও সম্প্রসারণের কারণে বিনষ্ট হয়েছে অগণিত মসজিদের মূল বৈশিষ্ট্য৷ অনেকক্ষেত্রে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোকে বিলীন করে আধুনিক রূপ দেয়া হয়েছে৷ যেমন ঢাকায় কালের আঘাত সহ্য করে টিকে থাকা সুলতানী আমলের প্রধানতম মসজিদটি হলো বিনত বিবির মসজিদ৷ ঢাকার নারিন্দায় অবস্থিত এই মসজিদটি সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহের শাসনামলে জনৈক মারহামাতের কন্যা বখত বিনত ১৪৫৬ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করেন৷ প্রকৃতপক্ষে নির্মাণকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই দীর্ঘসময় মসজিদের এতটাই পরিবর্তন হয়েছে যে, মসজিদের গায়ে শীলালিপিটিই প্রাচীনত্ব বোঝার একমাত্র সম্বল হয়ে পড়েছে৷ বর্তমানে মসজিদটি ত্রিতল ইমারত, যদিও আদিতে এটি ছিল এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদ৷
অপরিকল্পিত সংস্কার ও সম্প্রসারণে মসজিদের আদিরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত এই মসজিদ৷ এছাড়া মুঘল আমলে ঢাকায় গুরুত্বপুর্ণ স্থান কাওরান বাজারে ১৬৭৭-৭৮ সালে নবাব শায়েস্তা খাঁর প্রধান আমাত্য খাজা অম্বর তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যেটি খাজা অম্বর মসজিদ নামে পরিচিত৷ ১৭০৫ সালে জনৈক খান মোহাম্মাদ মীর্জা লালবাগে খান মোহাম্মাদ মৃধা মসজিদটি নির্মাণ করেন৷ সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত মতিঝিলের দিলখুশা মসজিদটি চিরাচরিত মুঘল স্থাপত্যরীতির তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ৷ মসজিদটি মুলত নবাব সলিমুল্লার ওয়াকফ স্টেটের অধীনে হলেও রাজউকের তত্ত্বাবধানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে সংস্কার কাজ করে আধুনিক মাত্রা দিয়ে মসজিদটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আবেদন নষ্ট করা হয়েছে৷ অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে আরমানিটোলায় মুঘল স্থাপত্যের অন্যান্য মসজিদের ন্যায়ে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট অলংকরণ বর্জিত সাদামাটা একটি মসজিদ নির্মাণ করেন মীর্জা গোলাম পীর৷ গোলাম পীরের মসজিদ নামে পরিচিত সেই মসজিদটি সংস্কারের পরে বর্তমানে ‘তারা মসজিদ' নামে পরিচিত৷
মসজিদের শহর বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য
খুলনার প্রচীন মসজিদের শহর বাগেরহাটের নাম ছিল খলিফাতাবাদ৷ শহরটির প্রতিষ্ঠাতা খান-ই-জাহান ছিলেন এক সাধক পুরুষ৷ ষাট গম্বুজ মসজিদসহ এখানকার নানা প্রাচীন স্থাপনা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় ১৯৮৫ সালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্মাণ কাল ১৪৫৯
খান জাহান আলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তি ষাট গম্বুজ মসজিদ৷ ঐতিহাসিকদের মতে, এই ষাট গম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দেরও কিছু আগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাশিটি গম্বুজ
নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদটিতে মূলত একাশিটি গম্বুজ আছে৷ মসজিদের ছাদে ৭৭টি এবং চারকোণার টাওয়ারে চারটি৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মসজিদের অভ্যন্তরে ষাটটি স্তম্ভ থাকার কারণে এর নাম হয়ত ষাট গম্বুজ৷
ছবি: DW/M. Mamun
অভ্যন্তর ভাগ
ষাট গম্বুজ মসজিদের ভেতরের অংশ৷ এই অংশ অতীতে চুন-শুরকির মিশ্রণে লাল রঙের হলেও, পরবর্তীতে তা পলেস্তরা আরা সাদা রঙের প্রলেপে ঢাকা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢেকে ফেলা হয়েছে কালো পাথর
ষাট গম্বুজ মসজিদের ভেতরের স্তম্ভগুলো ছিল মূলত কালো পাথরের তৈরি৷ উত্তর দিকের একটি স্তম্ভ খালি দর্শনার্থীদের দেখার জন্য রেখে বাকি স্তম্ভগুলোর মূল্যবান কালো পাথর ঢেকে ফেলা হয়েছে সিমেন্টের পলেস্তারার প্রলেপে৷ বাংলাদেশের অনেক প্রাচীন স্থাপনাই এরকম অদক্ষ সংস্কারের নামে ধ্বংস করেছে খোদ সরকারেরই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর!
ছবি: DW/M. Mamun
সিংড়া মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন স্থাপনা সিংড়া মসজিদ৷ইট নির্মিত মসজিদের প্রাচীরগুলি প্রায় সাত ফুট প্রশ্বস্ত৷ মসজিদের পূর্ব দেয়ালে আছে তিনটি প্রবেশপথ৷ প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলংকৃত মিহরাব৷ তবে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং সুসজ্জিত৷ এর নির্মাণ শৈলী বিবেচনা করে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সিংড়া মসজিদের নির্মাণকাল পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি৷
ছবি: DW/M. Mamun
হযরত খানজাহান আলীর সমাধিসৌধ
ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এক গম্বুজ বিশিষ্ট হযরত খানজাহান আলীর সমাধিসৌধ৷ কথিত আছে, হযরত খান জাহান আলী বাগেরহাটে এসেছিলেন ১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দের পরে৷ তিনি প্রথমে দিল্লির সুলতান এবং পরে বাংলার সুলতানের কাছ থেকে সুন্দরবন অঞ্চলের জায়গির লাভ করেন৷ এখানকার গভীর বন কেটে তিনি মুসলিম বসতি গড়ে তোলেন৷ ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর খান জাহান আলীর মৃত্যু হলে, এখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
জিন্দাপীর মসজিদ
হযরত খানজাহান আলীর সমাধির পশ্চিম দিকে ঠাকুর দিঘির পশ্চিম পাড়ে সুন্দরঘোনা গ্রামে ইট নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট জিন্দাপীর মসজিদ৷ মসজিদের পাশেই হযরত খানজাহানের অনুসারী জিন্দাপীরের সমাধি৷ তাঁর নামেই এ মসজিদের নামকরণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
নয় গম্বুজ মসজিদ
খান জাহান আলীর সমাধির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, ঠাকুর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত নয় গম্বুজ মসজিদ৷ ইটের তৈরি এ মসজিদের উপরে নয়টি গম্বুজ রয়েছে৷ পুরো মসজিদের গায়ে পোড়ামাটির কারুকাজ খচিত৷ মসজিদের ছাদ নয়টি নীচু অর্ধ বৃত্তাকার গম্বুজ দিয়ে ঢাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নয় গম্বুজের মিহরাব
নয় গম্বুজ মসজিদের অভ্যন্তরভাগ৷ মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
রণবিজয়পুর মসজিদ
বাগেরহাট শহরের উপকণ্ঠে রণবিজয়পুর গ্রামের ষাটগম্বুজ সড়কে এ মসজিদটি অবস্থিত৷ ফকিরবাড়ি মসজিদ নামেও এর পরিচিতি আছে৷ স্থাপত্যশৈলির বিচারে এটিকে হযরত খান জাহান আলীর সময়কালে (১৪৫৯ সাল) নির্মিত বলে মনে করা হয়৷ ইটের তৈরি এ মসজিদটি বর্গকারে নির্মিত এবং এক কক্ষ বিশিষ্ট৷ রণবিজয়পুর গ্রামের নামেই এ মসজিদের নামকরণ হয়েছে৷ রণবিজয়পুর মসজিদ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ৷
ছবি: DW/M. Mamun
চুনাখোলা মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ধান খেতের মধ্যে অবস্থিত চুনাখোলা মসজিদ৷ বর্গাকৃতির এ মসজিদটি বাইরের দিকে লম্বায় প্রায় ৪০ ফুট এবং ভেতরের দিকে ২৫ ফুট৷ দেয়ালগুলি প্রায় আট ফুট চওড়া৷ কেন্দ্রস্থলের উপরের দিকে রয়েছে বড় একটি গম্বুজ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিবি বেগনী মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে এক গম্বুজ বিশিষ্ট বিবি বেগনী মসজিদ৷ মসজিদটি সিংড়া মসজিদের অনুরূপ হলেও, এর পশ্চিম দেয়ালে মিহরাবের সংখ্যা তিনটি৷ মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
সাবেকডাঙ্গা পুরাকীর্তি
খান জাহান আলীর স্থাপত্য শৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাবেকডাঙ্গা পুরাকীর্তির অবস্থান বাগেরহাট শহরের উপকণ্ঠে সাবেকডাঙ্গা গ্রামে৷ লাল ইটের তৈরি আয়তকার এ ভবনটি একেক পাশে দৈর্ঘ্য ৭.৮৮ মিটার৷ ভবনটির দক্ষিণপাশে কেবল একটি প্রবেশপথ আছে৷ এর ভেতরে আর কোন দরজা, জানালা কিংবা মিহরাব নেই৷ তাই এটিকে মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি৷ জনশ্রুতি আছে খান জাহান আলী তাঁর বিশেষ প্রার্থনার জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
ঢাকার প্রাচীন মসজিদগুলোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় অপরিকল্পিত সংস্কার ও সম্প্রসারণের ফলে মসজিদগুলোর আদিরূপ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিনষ্ট হয়েছে৷ আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রাচীন মসজিদই স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকে৷ ফলে সর্বসাধারণের অসচেতনতায় নানারূপ অপরিকল্পিত সংস্কার ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমে এসব মূল্যবান নিদর্শন বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ এর সাথে যুক্ত হয় সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা, অবহেলা ও নির্লিপ্ততা৷
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রত্যেক জাতির জন্যই অমূল্য সম্পদ৷ এ সম্পদ আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে৷ অথচ আমাদের দেশের এই মূল্যবান নিদর্শন সংরক্ষণের যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি৷ এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের সাক্ষ্যমহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, প্রাচীণ স্থাপত্য কাঠামো ও প্রত্ননিদর্শন৷ এগুলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার কাজটি করে থাকে আমাদের জাদুঘরগুলো৷ যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার জন্য যে জাদুঘর আমাদের রয়েছে সেগুলো এখনো উনিশ শতকে পড়ে আছে৷ এগুলোকে প্রকৃত অর্থে জাদুঘর না বলে উন্মুক্ত গুদাম বলা যায়৷ কারণ এগুলোতে কেবল সারিবদ্ধভাবে নিদর্শনগুলো প্রদর্শণের মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের কাজ৷ কিন্তু জাদুঘরকে আরও বেশি জনগণসম্পৃক্ত করতে হবে৷ নতুন নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে৷ দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সুরক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও জাদুঘরগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে৷ তাহলে নতুন প্রজন্ম দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে৷ ভালোবাসতে জানবে দেশের মুল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে ও এ দেশের আপামর মানুষকে৷
আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে আমাদের ঐতিহ্যর ধারক ও বাহক এ সব অমূল্য নিদর্শন অচিরেই বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে৷ তাই এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার এখনই সময়৷ সে জন্য জনসাধারণকে সচেতন ও সম্পৃক্তকরণ, প্রত্নবস্তু সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট আইনকে যুগোপযোগী করা, পেশাজীবী দক্ষ জনবল তৈরি করা, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণে কাজ করা যেতে পারে৷ সর্বোপরি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সচেতন ভূমিকা গ্রহণের মাধ্যমে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সুরক্ষায়, সংরক্ষণে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেতে পারে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷