বুরকিনা ফাসোতে এমন প্রত্যন্ত এলাকা আছে যেখানে সাধারণ রেডিও অনুষ্ঠান শোনা যায় না৷ জার্মানির সংস্থা জিআইজেডের অর্থায়নে চারটি এলাকায় একটি পাইলট প্রকল্প চলছে, যার মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি সংক্রান্ত এফএম অনুষ্ঠান শুনতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
চার এলাকা একটি বামা গ্রাম৷ সেখানকার কৃষকরা তাদের ফোনে রেডিও অনুষ্ঠান শুনতে পারেন, যেখানে চারটি ভাষায় কৃষি সংক্রান্ত তথ্য পরিবেশন করা হয়৷ ‘ট্রান্সমিশন এয়া এ ট্যার' নামের ঐ অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের কৃষিকাজ সংশ্লিষ্ট বাস্তব পরামর্শ দেয়া হয়৷
কৃষক আদিদজাতা কুলিবালি বলছেন, ‘‘রেডিও অনুষ্ঠানের কারণে সার কীভাবে ভালোভাবে প্রয়োগ করা যায় তা জানতে পেরেছি৷’’ আরেক কৃষক জাকারিয়া ঐদ্রাগো বলেন, ‘‘আমরা ‘পকেট এফএম' সম্পর্কে শুনেছি এবং কীভাবে কাজ করে জেনেছি৷ খুব ভালো উদ্যোগ৷ সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে, মাত্র কয়েক ক্লিকের মাধ্যমে পুরনো অনুষ্ঠান শোনা যায়৷ এটা দারুণ একটা ফিচার৷’’
এর পেছনের প্রযুক্তিটা সাধারণ৷ পোর্টেবল রেডিও ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে কৃষকরা বিনামূল্যে অনুষ্ঠান শুনতে পারেন৷ এর জন্য ডাটা কিংবা সিম কার্ড প্রয়োজন হয় না৷ যেটা জরুরি, সেটা হচ্ছে ছয় কিলোমিটারের মধ্যে থাকা৷
প্রকল্পের অন্যতম পার্টনার রেডিও স্টেশন বামা পিলের অনুষ্ঠান ধানখেতের মধ্যে শোনা যায়৷ কিছু অনুষ্ঠান পরে অন-ডিমান্ডেও শোনা যায়৷ ফলে যারা সরাসরি শুনতে পারেন না কিংবা যাদের রেডিও নেই তারাও অনুষ্ঠান শুনতে পারেন৷ কৃষকেরা ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন৷
রেডিও বামা পিলের মডারেটর কাইক কোনে বলেন, ‘‘গাছ লাগানোর আগে মাটি কীভাবে তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে আমরা কথা বলি৷ এছাড়া খেত ও পানিপথের মধ্যে কতখানি দূরত্ব রাখতে হবে সে নিয়েও কথা হয়৷ কীটনাশকের ব্যবহার, মাটিতে এর প্রভাব এবং গাছের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়েও আলোচনা করি আমরা৷’’
আফ্রিকার গ্রামে কৃষকদের বন্ধু এফএম
04:02
কৃষকরা কী বিষয়ে জানতে আগ্রহী, তা বুঝতে অনুষ্ঠানের প্রোডিউসাররা নিয়মিত কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন৷ যেমন এই কৃষকেরা বীজ বা বেশি ফলন দেয় এমন সার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী৷ মাটি কীভাবে রক্ষা করা যায় তাও তারা জানতে চান৷
প্রকল্পের প্রধান উসেনি বানসি বলেন, ‘‘যারা নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তারা আমাদের সেগুলো জানান৷ তারা বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন৷ প্রায়ই তারা আমাদের এমন মানুষদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে বলেন, যারা নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ৷ অর্থাৎ আমাদের অনুষ্ঠানের উপকরণের উপর বামার কৃষকদের ভালো প্রভাব আছে৷’’
প্রকল্পের যন্ত্রপাতি জার্মানির এক পার্টনারের কাছ থেকে এসেছে৷ জার্মানির উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড এতে অর্থায়ন করেছে৷ দরিদ্র মানুষ বাস করে এবং যেখানে রেডিও শোনা যায় না, এমন জায়গায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়৷ মিডিয়া ইন কোঅপারেশন অ্যাণ্ড ট্রানজিশন কর্মকর্তা জেরেমি উইলিয়াম বাতিওনো বলেন, ‘‘আমরা বন্দোকুই, বামা, ডিবুগু ও ক্যাসকেড অঞ্চলে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি৷ এটা এত সফল হয়েছে যে, আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসের মধ্যে আমরা পুরো বুর্কিনা ফাসোতে এটা চালু করতে চাই৷’’
ভবিষ্যতে ভিডিও ক্লিপও বানানো হবে - যেটা ইন্টারনেট ছাড়াই দেখা যাবে৷ সবজির রোগ ও কীভাবে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সে বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানের শ্যুটিং এখন চলছে৷ তবে যতই মাল্টি-মিডিয়ার ব্যবহার হোক না কেন, পকেট এফএম সবসময় কৃষকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, এমন বিষয় নিয়ে কথা বলে যাবে৷
কুলিবালি, গেবহার্ট/জেডএইচ
করোনায় কৃষির বদল
শিল্প থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ যত খাত সবই বদলে যাচ্ছে এক মহামারির প্রকোপে৷ বাদ যাচ্ছে না কৃষিও৷ এতদিন ধরে যে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে৷ কৃষির বড় ধরনের বদল ঘটার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রাণিজ শিল্পের সংকট
কোভিড ১৯ এর উৎপত্তি কিভাবে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু এর আগে সোয়াইন ফ্লু আর বার্ড ফ্লুতে শুকর আর মুরগি খামারে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমেছিল৷ বৃহদাকারে প্রাণীজ মাংস উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে মহামরির ঝুঁকি বাড়ার একটি সম্পর্কের সন্দেহ অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে৷ এমন অবস্থায় এই ধরনের শিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবনারও সময় এসেছে৷
ছবি: picture alliance/Augenklick/Kunz
কসাইখানার পরিবেশে প্রশ্ন
মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের পরিবেশ আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই মহামারিতে৷ জার্মানিতে এমন বেশ কয়েকটি কারখানা থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে৷ এমনকি দুইটি শহরকে এ কারণে নতুন করে লকডাউনের আওতায় আনতে হয়েছে৷ ট্যোনিস গ্রুপ এর একটি কসাইখানার ১৫৫০ জন আক্রান্ত হওয়ায় সব কর্মীদেরই কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে৷ এই শিল্পটির জন্য নীতিমালা কঠোর করার প্রস্তাবও উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
বন্যপ্রাণীর খামারে কড়াকড়ি
বিশেষজ্ঞদের ধারণা চীনের উহানের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটেছিল৷ এরিমধ্যে চীন বন্যপ্রাণী বেচাকেনায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে, বন্যপ্রাণীর প্রায় ২০ হাজার খামার বন্ধ করে দিয়েছে৷ এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোও৷ বন্যপ্রাণীর বদলে তাদেরকে চাষাবাদ, মুরগী বা শুকর পালনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
কৃষি বদলের ডাক
চলতি মহামারিতে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷ বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন শিল্পের বদলে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনে জোর দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷ শ্রমিক স্বল্পতাসহ নানা কারণে তৈরি হওয়া নতুন সংকটটির সঙ্গে কৃষকরা কিভাবে খাপ খাওয়াবেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগর কৃষির সম্ভাবনা
উন্নত দেশগুলোতে মানুষ বড় একটি সময় ঘরে থাকার কারণে সময় কাটানোর জন্য কৃষিতে ঝুঁকেছেন৷ ভবিষ্যতের জন্য যা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বলা হচ্ছে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষই শহরে বসবাস করবেন৷ আর তখন নগর কৃষির গুরুত্ব আরো বাড়বে৷ এর ফলে প্রথাগত কৃষির উপর চাপ যেমন কমবে, তেমনি খাদ্য পরিবহনের পেছনে জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহারও হ্রাস পাবে৷
ছবি: Imago/UIG
দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাতে পারে৷ এজন্য খাদ্যের উৎপাদনও কয়েক গুণ বাড়াতে হবে, চাপ পড়বে ভূমির উপরে৷ এর একটি সমাধান হতে পারে নগর কৃষি৷ মানুষের বাঁচার জন্য খাদ্য যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রকৃতিও৷ সামনের দিনে অবশিষ্ট প্রকৃতি কিভাবে রক্ষা করা যাবে তা নিয়ে ভাবার সময়ও চলে এসেছে৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
মাংসের বদলে নিরামিষ
মাংসের বাজার ঘিরে স্বাস্থ্য ঝুঁকির উদ্বেগ বাড়ায় চীনে এখন উদ্ভিজ্জ পণ্যের চাহিদা বাড়ছে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলোতেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে৷ সামনের দিনে ভোক্তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনটি অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Neibergall
হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা
কোভিড-১৯ এর মহামারি উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্যনিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলছে৷ জাতিসংঘও এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে৷ জরুরি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে জমি সুরক্ষার উপরও জোর দিচ্ছে তারা৷ পাশাপাশি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা এবং ঝুঁকিতে থাকা ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য সহায়তার সুপারিশ করছেন বিশেষজ্ঞরা৷