প্রত্যাবাসনের ভয়ে রোহিঙ্গারা
২১ আগস্ট ২০১৯সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে দেশ ছেড়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন তারা৷ ডয়চে ভেলের নাওমি কনরাড এবং আরাফাতুল ইসলাম তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷
সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে দেশ ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাছাই করা হয়েছে৷
রোহিঙ্গাদের হাসিমুখের ছবিসহ বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষায় একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, সেখানে রোহিঙ্গাদের নতুন ঘর এবং নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷
একটি লিফলেটে দেখা যায়, একজন নারী একটি কার্ড হাতে নিয়ে আছে, ক্যাপশনে লেখা আছে আমি মিয়ানমারের বাসিন্দা৷ ক্যাম্প অফিসার জানান, মিয়ানমার সরকার এই লিফেলট সরবরাহ করেছে৷
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবংস্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র করা হয়েছে৷ প্রধান সড়কের পাশে ছোট ছোট কিছু দোকান বসানো হয়েছে৷
কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব কম থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে যুবকদের তেমন কিছুই করার থাকে না৷ সহায়তাকর্মীরা চলে যেতে শুরু করলে ক্যাম্পের ভেতরের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন৷ এরপরেও শরণার্থীরা বলেছেন, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া থেকে এখানকার জীবনই ভালো৷
৬০ বছর বয়সী রহুল মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান না৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা আমাদের মেরে ফেলেছে, আমাদের জমি পুড়িয়ে দিয়েছে৷''
অন্ধকার ঘরের মধ্যে আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন ২১ বছর বয়সী নূরের স্ত্রী৷ মিয়ানমারে একটি সব্জির দোকান ছিল নুরের৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার জমির দিকে তাকিয়ে কান্নাকাটি করি, কিন্তু সেখানে আর ফিরে যেতে চাই না৷ আমাকে মেরে ফেলা হতে পারে৷''
কে কীভাবে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য নির্বাচিত করেছে সে বিষয়ে সহায়তাকর্মীরা কিছু জানাতে পারেননি৷ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন এটি মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ বাড়াতে বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ৷
কয়েকটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সরকার ২২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারে পাঠায়, সেখান থেকে ৩ হাজার ৪৫০ জনকে প্রত্যাবাসনের জন্য মনোনীত করা হয়৷
তালিকায় যাদের নাম উঠেছে তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চান কি না তা যাচাই করছে ইউএনএইচসিআর৷ সংস্থাটি বার বার বলছে, জোর করে কাউকেই মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হবে না৷ তবে শরণার্থীরা তাদের এই বক্তব্য বিশ্বাস করতে চাইছেন না৷
ইউএনএইচিসআর এর কর্মকর্তাদের কাছে সাক্ষাৎকারের জন্য নেওয়া হচ্ছিল বেশ কয়েকজন নারীকে৷ কিছু সময়ের জন্য তারা বিক্ষোভ দেখান৷ এরা বলেন, মিয়ানমারে নাগরিকত্বের অধিকার এবং জমি ফিরে না পেলে তারা ফিরে যাবেন না৷ এসময় এক নারী চেঁচিয়ে বলে উঠেন, ‘‘আমাদের ধর্ষণ করা হয়েছে, আমরা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি, আমরা বাড়ি ফিরে যাব না৷''
একজন নারী তার ঘোমটা টেনে বলেন, ‘‘যদি আপনারা আমাদের ফিরে যেতে বাধ্য করেন তবে আমরা আত্মহত্যা করব৷''
একজন পুলিশ সদস্য নারীদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন এবং বলছিলেন, সরকার কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমার ফেরত পাঠাবে না৷ এসময় একজন তার শার্ট ছিড়ে বুক দেখিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে বলেন, ‘‘যদি আমাকে ফিরে যেতে হয়, তবে এখনই আমাকে গুলি কর৷''
নাওমি কনরাড ও আরাফাতুল ইসলাম/এসআই