অবশেষ অপেক্ষার অবসান৷ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এবার ট্রাম্প-ম্যার্কেল বৈঠক৷ কী হবে? কেমন হবে বিপরীত মেরুর দুই রাজনীতিবিদের প্রথম সাক্ষাৎ?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler/R. Sachs
বিজ্ঞাপন
প্রথম সাক্ষাৎ বলেই কৌতূহলটা বেশি৷ নানান সম্ভাবনা এবং আশঙ্কার উঁকিঝুঁকিও বেশি৷ ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স'-এর বার্লিন কার্যালয়ের প্রধান জোসেফ জ্যানিং মনে করেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি এখনকার মতো জটিল আগে কখনো হয়নি৷'' আর জটিলতার অনেকটাই তৈরি হয়েছে ধনকুবের থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও হয়ে যাওয়ার কারণে৷
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের অবশ্য এর আগে দু-দু'জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ প্রথমে জর্জ ডাব্লিউ বুশ৷ তারপর বারাক ওবামা৷ দু'জন দুই ঘরানার রাজনীতিবিদ হলেও তাঁদের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার আলোচনা এগিয়ে নিতে ম্যার্কেলের অসুবিধে হয়নি৷ কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন৷ কারণ, প্রথমত, আগের দুই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি কাজকর্মের অভিজ্ঞতা ছিল, ট্রাম্পের তা একেবারেই নেই৷ দ্বিতীয়ত, ম্যার্কেল যেখানে তাঁর ধৈর্যশীলতা আর স্বল্পভাষী স্বভাবের জন্য প্রশংসিত, সেখানে ট্রাম্পের অবস্থান পুরোপুরি উল্টো দিকে৷ বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট সব বিষয়েই খুব তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং তাঁর প্রতিক্রিয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুব আক্রমণাত্মক৷
ম্যার্কেল ও মার্কিন প্রেসিডেন্টদের রসায়ন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির বিশেষ সম্পর্কের ভিত্তি যথেষ্ট মজবুত হলেও শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কের রসায়নের উপর তার বিবর্তন অনেকটাই নির্ভর করে৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর ক্ষমতাকালে চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেখা পেলেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
প্রথম সাক্ষাৎ
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ সে সময়ে জার্মান চ্যান্সেলর ছিলেন গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার৷
ছবি: AP
চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট
২০০৮ সালের জুন মাসে বার্লিনের কাছে মেসেব্যার্গ-এ জার্মান সরকারের অতিথি নিবাসে মিলিত হয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ৷ বুশ দুই দিনের সফরে জার্মানি এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Bergmann
পারিবারিক পরিবেশে বুশ-ম্যার্কেল
২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় জর্জ ডাব্লিউ বুশ ম্যার্কেলকে নিজের খামারবাড়িতে স্বাগত জানান৷ স্ত্রী লরা ও ম্যার্কেলের স্বামী ড. ইওয়াখিম সাউয়ারকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়েছিলেন বুশ৷
ছবি: AP
উষ্ণতার বহিঃপ্রকাশ
২০০৮ সালেই রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে জর্জ ডাব্লিউ বুশ আচমকা ম্যার্কেল-এর কাঁধ মালিশ করে বসেন৷ তাঁর এই স্বতঃস্ফূর্ত উষ্ণতার প্রকাশে ম্যার্কেল অবশ্য কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন৷
নতুন সম্পর্ক
২০০৯ সালে জার্মানির বাডেন বাডেন শহরে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ ম্যার্কেল তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
ম্যার্কেল-ওবামা রসায়ন
একই বছর ওয়াশিংটন সফরে জান ম্যার্কেল৷ ধীরে ধীরে ওবামা ও ম্যার্কেলের ব্যক্তিগত উষ্ণতা গড়ে উঠতে শুরু করে৷
ছবি: AP
বিশেষ সম্মান
২০১১ সালে ওয়াশিংটন সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘মেডেল অফ ফ্রিডম’ হাতে পান আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু তার ঠিক পরে এনএসএ কেলেঙ্কারির ফলে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে ম্যার্কেলের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন পরিস্থিতি
২০১৫ সালে বাভেরিয়ার মনোরম পরিবেশে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন ওবামা৷ ততদিনে ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে বেড়ে চলা সংঘাতের কারণে রাশিয়া একঘরে হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Kappeler
আবেগঘন বিদায়
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যকালের শেষ পর্যায়ে বার্লিন সফরে আসেন বারাক ওবামা৷ পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে তিনি ম্যার্কেলের নাম উল্লেখ করেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
নতুন চ্যালেঞ্জ
২০১৭ সালটি অ্যামেরিকা ও জার্মানি – দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে ক্ষমতায় এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ম্যার্কেলও আবার ক্ষমতায় এলেন।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler/R. Sachs
বিরোধ
২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের আমলে অ্যামেরিকা ও জার্মানির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। ন্যাটো নিয়ে ট্রাম্প ও ম্যার্কেলের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ট্রাম্পের অ্যামেরিকা ফার্স্ট নীতিও ম্যার্কেল মানতে পারেননি। জার্মানি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Vucci
বাইডেনের আমলে
২০২১ সালে জি৭ বৈঠকের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ম্যার্কেলের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। এবার ম্যার্কেল অ্যামেরিকা গেছেন। চ্যান্সেলার হিসাবে তার সম্ভবত এটাই শেষ সফর। বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে করবেন তিনি। সেখানে কি সম্পর্কের বরফ গলবে?
ছবি: Adam Schultz/White House/Planet Pix/Zuma/picture alliance
12 ছবি1 | 12
তো এমন বিপরীত প্রকৃতির এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় কী কী প্রাপ্তির আশা করছেন ম্যার্কেল? জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হার্পারের মতে, ম্যার্কেল প্রথমে নিশ্চয়ই চাইবেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কাজ করার মতো স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে৷ জোসেফ জ্যানিং মনে করেন, জার্মান চ্যান্সেলর ট্রাম্পকে আসন্ন জি-টোয়েন্টি সম্মেলন সম্পর্কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন৷ এছাড়া ইইউ সম্পর্কে ট্রাম্পের মনোভাব পরিবর্তনেরও চেষ্টা করতে পারেন তিনি৷
ট্রাম্প কয়েকবার পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন, ব্রাসেলসের মাধ্যমে না গিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা উচিত৷ এছাড়া ব্রেক্সিটেরও কড়া সমর্থক ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর আমন্ত্রণে যে কয়েকজন বিদেশি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন তার মধ্যে ‘ব্রেক্সিটের স্থপতি' নাইজেল ফারাজও ছিলেন৷