‘প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট' ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনি প্রচার অভিযানেই ঘোষণা করেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করবেন৷ দৃশ্যত সেটা ফাঁকা হুমকি ছিল না৷
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প এবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যাতে তিনি বলছেন, ২০১৭ সালের ২০শে জানুয়ারি, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর কর্মকালের প্রথম দিনে তিনি কী কী নির্দেশ দেবেন৷ তার মধ্যে থাকবে টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি থেকে পশ্চাদপসারণের বিষয়টিও৷ এটা ঘটবে প্রেসিডেন্সিয়াল এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে৷ ইতিপূর্বে ট্রাম্প বারোটি দেশের এই বাণিজ্য চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে চাকুরি বিনষ্ট করার একটি ‘বিপর্যয়' বলে অভিহিত করেছেন৷
ট্রাম্প তাঁর ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘‘আমি আমার ট্রানজিশন টিমকে সেই সব নির্বাহী পদক্ষেপের একটা তালিকা তৈরি করতে বলেছি, যা আমরা প্রথম দিনেই নিতে পারব৷ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ থেকে প্রত্যাহার করার অভিপ্রায়ের নোটিশ দেব৷'' ঐ টিপিপি বাণিজ্য চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘একটি সম্ভাব্য বিপর্যয়' বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷ তিনি জানান, ‘‘তার পরিবর্তে আমরা ন্যায্য, দ্বিপাক্ষিক সব বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করব, যা অ্যামেরিকায় চাকরি ও শিল্প ফিরিয়ে আনবে৷''
প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার কর্মকালের একটি বড় কর্মকাণ্ড ছিল এই টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি৷ ওবামা চেয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে৷ এছাড়া টিপিপির পর ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে টিটিআইপি ইত্যাদি উত্তরোত্তর বাণিজ্য চুক্তির পরিকল্পনাও ছিল৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বহু ভোটারের ধারণা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে বহু চাকুরি বিদেশে আউটসোর্স করা হচ্ছে, তার জন্য এই সব আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিই দায়ী৷
ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে৷ তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া টিপিপি অর্থহীন হয়ে পড়বে৷ টিপিপি নেতৃবর্গ সপ্তাহান্তে লিমায় মিলিত হন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে টিপিপিকে বলবৎ করার ব্যাপারে সেখানেও কোনো আলোচন হয়নি, বলে আবে জানান৷ অপরদিকে তিনি বলেন যে, চুক্তিটি নিয়ে পুনরায় আলাপ-আলোচনা চালানোর কোনো প্রশ্ন ওঠে না৷
ট্রাম্প তাঁর ভিডিও বার্তায় অভিবাসন নিয়েও মন্তব্য করেছেন৷ ‘‘অভিবাসনের ক্ষেত্রে যেসব ভিসা কর্মসূচির ফলে মার্কিন শ্রমিকরা তাদের চাকুরি হারাচ্ছে, আমি শ্রম মন্ত্রণালয়কে সেই সব ভিসা কর্মসূচি পরীক্ষা করে দেখতে বলব,'' এই হলো ট্রাম্পের ঘোষণা৷
অনুরূপভাবে জ্বালানি শক্তির ক্ষেত্রে পরিবেশগত উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ফ্র্যাকিং সংক্রান্ত নিয়মাবলীসহ যাবতীয় ‘‘চাকুরি-খাওয়া বাধানিষেধ'' বাতিল করবেন৷
এসি/এসিবি (এএফপি, এপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
ট্রাম্পকে নিয়ে কার্টুন: না হেসে উপায় কী!
ট্রাম্পের জয়ে বিশ্ব জুড়ে কার্টুনিস্টদের পোয়াবারো
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Cortez
মেক্সিকোয় ট্রাম্পের জন্য ‘দেয়াল’
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প৷ তাই অলঙ্করণ শিল্পী আর্টুরো কেম্চস মেক্সিকো সিটির ক্যারিকেচার মিউজিয়ামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন৷ কেম্চস ইবেরো-অ্যামেরিকান ইউনিয়ন অফ গ্র্যফিক হিউমরিস্টস সমিতির সভাপতি৷ প্রদর্শনীর জন্য তিনি তাঁর সতীর্থদের কাছ থেকে শত শত ড্রয়িং পেয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Cortez
২০১৭ সাল থেকে ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী
‘ট্রাম্প: এ ওয়াল অফ ক্যারিকেচার্স’ প্রদর্শনীটির উদ্বোধন হয় গত অক্টোবর মাসে৷ ইউরোপীয় শিল্পীরাও এই প্রদর্শনীতে অবদান রেখেছেন৷ অনেক কার্টুনে নাৎসিদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে৷ সাড়া জাগানো প্রদর্শনীটি ২০১৭ সালের সূচনায় অন্যান্য শহরে যাবে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে দেখানো হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Cortez
ফ্যাশন গুরু কার্ল লাগারফেল্ডও কম যান না
ট্রাম্প সম্পর্কে ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল লাগারফেল্ড লিখেছেন, ‘‘রাজনীতিতেও উনি মহিলাদের দিকে এমনভাবে তাকান যেন ঘোড়ার ব্যাপারি৷’’ কার্টুনের মাঝখানে যে মূর্তিটিকে রেখেছেন, তিনি হলেন জার্মানির দক্ষিণ ঘেঁষা এএফডি দলের প্রধান ফ্রাউকে পেট্রি৷ পেট্রিরও নাকি কার্টুনটা ভালো লেগেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Frankfurter Allgemeine Magazin
#হেয়ারফোর্সওয়ান
ট্রাম্পের চুল নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা গোড়া থেকেই চলেছে৷ কোথায় নরওয়ের কোন মাঠে খড় পড়ে রয়েছে, তার ছবি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পরচুলোর খামার’ হিসেবে ইন্টারনেট মাতিয়েছে৷ কাজেই মার্ক নাইট মার্কিন প্রেসিডেন্টের এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানকেও ট্রাম্পের হেয়ারস্টাইলে সজ্জিত করেছেন৷
ছবি: Twitter/@Knightcartoons
আফ্রিকান দৃষ্টিকোণ
আব্দুলকরিম বাবা আমিনু নাইজেরিয়ার একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিল্প সমালোচক ও অলঙ্করণ শিল্পী৷ তাঁর কার্টুনের ক্যাপশন হলো, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গদের ঘৃণা করেন বলে আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাব৷ তারপর তিনি এই দেশ নিয়ে যা খুশি করুন!’’
ছবি: DW/Abdulkareem Baba Aminu
স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ক্যানাডার দ্বারস্থ
কার্টুনিস্ট ইগ্রেক-এর ট্রাম্প-বিরোধী কার্টুনগুলোতে প্রায়ই স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দেখা পাওয়া যায়৷ এখানে ট্রাম্পের জয়ের পর ‘লিবার্টি’ বা স্বাধীনতা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন৷ টুইটারে ইংরেজিতে @ইগ্রেক দেখুন৷
ছবি: Twitter/@ygreck
যে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারে
বেলজিয়ামের অলঙ্করণ শিল্পী লেকটরর (টুইটারে ইংরেজিতে @লেকটরর) ট্রাম্পকে নিয়ে অনেক কার্টুন এঁকেছেন৷ এই কার্টুনটার বক্তব্য হলো, ‘‘যে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারে’’, এই কথাটার মানে মাত্র আট বছরে কিভাবে বদলে গেছে...
ছবি: Twitter/@lectrr
দেয়াল লিখন
স্পেনের বার্সেলোনায় ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে এই গ্র্যাফিটির উদয়: চোয়াড়ে চেহারার এক গুণ্ডা প্রকৃতির মানুষ৷ সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে ‘অর্ধেক পৃথিবী নির্বাক’, লিখেছিলেন স্প্যানিশ দৈনিক ‘এল পাইস’-এর এক কলামনিস্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Lago
গুয়ের মাছি
পথশিল্পী হানস্কি যখন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই কার্টুনটি আঁকেন, ট্রাম্প তখনো রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পাননি৷ নিউইয়র্কের লোয়ার ইস্ট সাইডের একটি শপিং এলাকার দেয়ালে স্প্রে করে ছবিটি আঁকা হয় ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Van Tine Dennis
ধর্মের নামে
গাডো আফ্রিকার সবচেয়ে বিখ্যাত কার্টুনিস্টদের অন্যতম৷ ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনি প্রচারণায় বলেছিলেন, ‘‘আমি খ্রিষ্টধর্মের ঐতিহ্য বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি৷’’ তাই গাডো তাঁর কার্টুনে দেখিয়েছেন, ট্রাম্প কিভাবে মুসলিমদের ক্রুশবিদ্ধ করছেন৷