প্রবল চাপের মুখে সোমবার সরাসরি উগ্র দক্ষিণপন্থি ও নব্য-নাৎসিদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার তাদের প্রতি নরম মনোভাব দেখালেন৷ বললেন, সব পক্ষই হিংসার জন্য দায়ী৷
বিজ্ঞাপন
কু-ক্লাক্স-ক্ল্যান, নব্য নাৎসি ও শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যবাদী ‘হোয়াইট সুপ্রিম্যাসি' গোষ্ঠীগুলি শনিবার ভার্জিনিয়া রাজ্যের শার্লটসভিল শহরে যে হিংস্র তাণ্ডব চালিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে দলমতনির্বিশেষে গোটা দেশ যখন সরব খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নরম সুরে ‘উপস্থিত সব পক্ষ'-কেই হিংসালীলার জন্য দায়ী করেন৷
এই বক্তব্যের পর কু-ক্লাক্স-ক্ল্যান নেতা ডেভিড ডিউক সরাসরি প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান৷
দুই দিন পর প্রবল চাপের মুখে তিনি অনেকটা বাধ্য হয়ে সরাসরি নাম করে কু-ক্লাক্স-ক্ল্যান, নব্য নাৎসি ও ‘হোয়াইট সুপ্রিম্যাসি' গোষ্ঠীগুলির সমালোচনা করেন৷
কিন্তু তাঁর দুই দিনের নীরবতার কারণে লাগাতার সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে আবার তাঁর আগের বক্তব্যে ফিরে গিয়ে বলেন, ঘটনার সময়ে উগ্র দক্ষিণপন্থিরা ছাড়াও বামপন্থি গোষ্ঠীগুলিও সক্রিয় ছিল৷ দুই পক্ষই হিংসার আশ্রয় নিয়েছিল৷ তাই তিনি পক্ষপাত না করে সবার ঢালাও সমালোচনা করছেন৷
উল্লেখ্য, শনিবার শার্লটসভিল শহরে একাধিক উগ্র দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠীর সমাবেশে অনেকেই অস্ত্রশস্ত্র ও হেলমেট সহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল৷ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পালটা মিছিলেও অনেকে সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল৷ এক উগ্র দক্ষিণপন্থি গাড়ি নিয়ে প্রতিবাদকারীদের মিছিলে ধাক্কা মারে৷ ফলে এক নারী নিহত ও ১৯ জন আহত হয়৷ এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মী নিহত হয়৷
এই ঘটনার জের ধরে বিরোধী ডেমোক্র্যাট ও ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের একাধিক নেতা উগ্র দক্ষিণপন্থিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন৷ ‘নিরপেক্ষ' হতে গিয়ে ট্রাম্প আদতে সরাসরি সশস্ত্র উগ্র দক্ষিণপন্থিদের পক্ষ নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন সেনেটে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা চাক শুমার৷
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক টুইট-বার্তায় বলেন, ‘‘কেউ জন্ম থেকে ত্বকের রং, ধর্ম বা অন্য পরিচয়ের ভিত্তিতে অন্যদের ঘৃণা করতে শেখে না৷'' তাঁর এই বার্তা মঙ্গলবারের মধ্যে টুইটারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ‘লাইক' পেয়েছে৷
ট্রাম্প-এর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে একের পর এক সদস্য হোয়াইট হাউসের এক উপদেষ্টা গোষ্ঠী থেকে পদত্যাগ করছেন৷ শিল্প জগতের তিন সদস্য মার্কিন উৎপাদনকারী পরিষদ ত্যাগ করার পর শ্রমিক সংগঠনের নেতা রাচার্ড ট্রামকাও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷