একজন আগে ছিলেন ছেলে, লিঙ্গ বদলে হলেন মেয়ে৷ আরেকজন ছিলেন মেয়ে, এখন তিনি ছেলে৷ দেখা একই ক্লিনিকে৷ সেখান থেকেই ভালো লাগা৷ এরপর বিয়ের সিদ্ধান্ত৷
বিজ্ঞাপন
চমকপ্রদ এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মুম্বইতে৷ মঙ্গলবার এই জুটি জানালেন যে, বাগদান সম্পন্ন হয়েছে৷ ঘোষণাও দিলেন, একেবারে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করার৷
এদের একজনের নাম আরাব আপ্পুকুটান৷ জন্মেছিলেন মেয়ে হয়ে৷ কিন্তু এখন লিঙ্গ বদলে ছেলে হয়ে গেছেন৷ আর সুকন্যা কৃষ্ণা জন্মেছিলেন ছেলে হয়ে৷ এখন লিঙ্গ পালটে হয়ে গেছেন মেয়ে৷
বছর তিনেক আগে মুম্বইয়ের একটি লিঙ্গ বদল ক্লিনিকের ওয়েটিং রুমে দেখা৷ দু'জনই এসেছিলেন সার্জারি করতে৷ সেখানেই নাম্বার দেয়া-নেয়া৷ সেদিন থেকেই পরস্পরের প্রতি টানটা উভয়েই খুব বুঝতে পারছিলেন৷
‘‘সুকন্যাকে আইনগতভাবেই বিয়ে করতে চাই৷ আর বাকি জীবনটা ওর সঙ্গে কাটিয়ে দিতে চাই৷'' বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলছিলেন ৪৬ বছর বয়সি আরাব৷
লিঙ্গ বদলের আগের তিন দশকে প্রতি মুহূর্তে নিজের লিঙ্গ পরিচিতি নিয়ে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন তিনি৷
‘‘সরকারি নথিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করা পর্যন্ত অপেক্ষা করব৷ এরপর কেরালায় গিয়ে বিয়ে করব৷'' জানালেন আরাব৷
আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে, তা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন এই জুটি৷
সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ায় বদলে যাবে তাঁদের জীবন
তাইওয়ানের সাংবিধানিক আদালত সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ এশিয়ার মধ্যে এই দেশটিই সর্বপ্রথম সমকামী বিয়েকে বৈধতা দিল৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু যুগলের কথা, এই আইনের ফলে যাদের জীবন বদলে যেতে চলেছে৷
ছবি: Reuters/T. Siu
ডাফনে এবং কেনি
ডাফনে এবং কেনি’র পরিকল্পনা এ বছরের শেষে বিয়ে করার৷ সমকামী, তৃতীয় লিঙ্গ যুগলদের একটি সমাবেশে কেনি ডাফনেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এখন তারা বিয়ের পোশাক-আশাক কী হবে তাই নিয়ে ব্যস্ত৷ তবে নতুন আইন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাইওয়ানে সমকামীরা ‘পার্টনার’ হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারতো৷
ছবি: Reuters/T.Siu
ড্যানিয়েল চো এবং চিন সাই
....তবে তখন তাদের অধিকার সীমিত ছিল৷ এই যুগল জানিয়েছে, ‘‘যতদিন তাইওয়ান সরকার আমাদের সম্পর্ককে বৈধতা দিতে রাজি হয়নি ড্যানিয়েল নিউইয়র্কে চাকরির জন্য গিয়েছিল৷ তবে আমি স্পাউস ভিসার আবেদন করতে পারিনি৷ এই আইন পাস হলে আমরাও বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
হেয়ার লিন এবং চো চিয়া-লিন
হেয়ার লিন একজন প্রকাশক এবং চো চিয়া-লিন একজন লেখক৷ দু’জনই এমন পৃথিবী চান, যা হবে মুক্তচিন্তার মানুষের অভয়ারণ্য৷ লিন বলেছেন, ‘‘২০০৩ সালে আমি যখন প্রথম ‘গে প্যারেডে’ অংশ নেই, তখন কেবল এক হাজার মানুষ এতে যোগ দিয়েছিল৷ কিন্তু সাম্প্রতিককালে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ এতে যোগ দেন৷’’ ‘‘এছাড়া সমকামী শিল্পী, রাজনীতিবিদ, এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও রয়েছেন৷ তাই এ পৃথিবী পরিবর্তন হবে বলে আমার বিশ্বাস-’’ বললেন লিন৷
ছবি: Reuters/T.Siu
সমকামী অধিকার কর্মী চি চিয়া-ওয়েই
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন, যার মন্ত্রিসভায় তৃতীয় লিঙ্গের একজন মন্ত্রী রয়েছেন৷ তিনি টুইটারে জানালেন, ‘‘বৈষম্য দূরীকরণ কেবল একটি সূত্রপাত, এখন প্রয়োজন আলোচনা এবং এ বিষয়ে বোধ জাগ্রত করা৷ সমকামী অধিকার কর্মী চি চিয়া-ওয়েই বললেন, ‘‘তাইওয়ান যদি এই ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না দেখায় তাহলে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখব এবং দেশকে ‘রংধনু’ দেশে পরিণত করবো৷ এমনকি প্রয়োজনে বিপ্লবও করবো৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
ওয়াং ই এবং মেং উ-মেই
বার্ষিক ‘গে প্যারেডের’ জন্য তাইওয়ান বিখ্যাত৷ শিল্পী ওয়াং ই বললেন, ‘‘আপনার কি মনে হয় আমরা এই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে চেয়েছি? বাবা-মা’র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই জটিল ছিল৷ কিন্তু আমার মনে হয়, সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে নিয়ে আলোচনা এমন একটা বিষয়, যা একটা মুক্ত দেশে হওয়া প্রয়োজন৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
হুয়াং চেন-টিং এবং লিন চি-হুয়ান
হুয়াং চেন-টিং এবং লিন চি-হুয়ান এর মতে, ‘‘বিপরীতকামী আর আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ বৈষ্যমের অনেক ধরণ রয়েছে৷ আগে ছিল বর্ণবৈষম্য৷ যে কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর এখন হচ্ছে লিঙ্গের কারণে বৈষম্য, কিন্তু সবাই তো এক, মানুষ৷’’ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষ সমলিঙ্গের বিয়েকে সমর্থন করে৷
ছবি: Reuters/T.Siu
লেবের লি এবং এমিলি চেন
লেবের লি তার সঙ্গী এমিলি এবং তাদের ছেলে মর্ক-কে নিয়ে ইলেনে থাকেন৷ চেন বললেন, ‘‘আমাদের স্বপ্ন ছিল একটা সন্তানের৷ তাই কৃত্রিম পদ্ধতিতে আমরা এই সন্তান নিয়েছি৷ কিন্তু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিল, কেননা, কেবল একজন শুধু সন্তানের মা হিসেবে নিজেকে নিবন্ধিত করতে পারে৷ শিশুটি দুই মায়ের স্নেহে বেড়ে উঠছে৷ একটা পরিবার কীভাবে গড়ে উঠছে সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্ব রয়েছে ভালোবাসার৷’’
ছবি: Reuters/T. Siu
হুয়াং জি-নিং এবং কাং সিন
হুয়াং জি-নিং এবং কাং সিন শিক্ষার্থী৷ তাদের এই সেল্ফি তাওউয়ানে তোলা৷ জি-নিং জানালেন, ‘‘সমলিঙ্গে বিয়ের বিরোধিতাকারীরা বলছেন, তাদের বিরোধিতা করার কারণ হলো, পরবর্তী প্রজন্মকে তারা এর কবল থেকে রক্ষা করতে চায়৷ কিন্তু আমিই তো পরবর্তী প্রজন্ম৷ যারা এখন মৃতপ্রায়, আমাদের কথা না শুনে কেন তাদের কথা কেউ শুনবে ? তাই আমাদের এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত৷’’
ছবি: Reuters/T. Siu
8 ছবি1 | 8
‘‘হিজড়াসহ সব রকমের ট্রান্সজেন্ডাররা প্রতিমুহূর্তে সমাজে নিগৃহীত হন৷ তাদের পরিবারও সব সময় শঙ্কিত থাকেন বিষয়টি নিয়ে৷ কিন্তু সমাজে পরিবর্তন আসা দরকার৷'' বললেন কৃষ্ণা৷
‘হিজড়া'-রা রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হলেও ভারতের রক্ষণশীল সমাজে তাঁরা বৈষম্যের শিকার৷ এই বৈষম্যের কারণে তাঁরা ভিক্ষা বা পতিতাবৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হন৷
অস্ত্রোপচারের পর থেকে আরাবও এমন নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ কাজ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে৷ দুবাইয়ে যেতে চেয়েছিলেন৷ বিধি বাম৷ ভিসা মেলেনি৷
২১ বছর বয়সি কৃষ্ণা জানালেন, মেয়ে হবার বাসনা জানানোর পর তাঁর বাবা-মা-ই তাঁকে হরমোন ইনজেকশন দিতে থাকেন৷ আরাবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানালেন, অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু পিছ পা হননি৷
‘‘মানুষের কটুক্তি ও সমালোচনা শুনলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটার মতো লাগে৷ তাই আমাদের গল্প সবাইকে জানাতে চাই৷ তরুণ ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই৷''
গতানুগতিক হিন্দুমতেইবিয়ে সম্পন্ন করতে চায় এই জুটি৷ বিয়ের পর তাঁরা একটি শিশুও দত্তক নিতে চান৷ ‘‘আমাদের জৈবিক সীমাবদ্ধতা আছে৷ কিন্তু আমরা একটি বাচ্চা চাই৷ তাই দত্তক নেব৷ একটা সুখী ভবিষ্যতের জন্য আমরা সব বদলে দিতে চাই এবং একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবার গঠন করতে চাই৷''
সমকামিতা যে প্রাকৃতিক, তার প্রমাণ এই প্রাণীরা
প্রাণীজগতে সমকামী যুগল একেবারে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার৷ গবেষণায় দেখা গেছে পোকামাকড়, মাছ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে প্রায় ১৫০০ প্রজাতিতে সমকামিতা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
লম্বা গলার জিরাফ
জিরাফদের সমলিঙ্গের মধ্যে ভালোবাসার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ এমনকি গবেষকরা বলছেন, জিরাফদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই সমলিঙ্গের সঙ্গীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়৷
ছবি: imago/Nature Picture Library
বোতলনাক ডলফিন
এই প্রজাতির স্ত্রী ও পুরুষ দুই ধরনের ডলফিনের মধ্যেই সমকামিতা দেখা যায়৷ মুখ এবং নাক দিয়ে স্পর্শ করে সঙ্গীকে আদর করে তারা৷ পুরুষ ডলফিনরা সাধারণত উভকামী৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
সিংহের আনুগত্য
পশু রাজ সিংহের মধ্যেও সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ দুই থেকে চারটি পুরুষ সিংহ একটি জোট গঠন করে, যাতে সিংহীরা তাদের কাছে আসতে না পারে৷ অন্য জোট থেকে বাঁচতে একে অপরের উপর ভীষণ নির্ভরশীল তারা৷
ছবি: ARTIS/R. van Weeren
বাইসন
পুরুষ বাইসনদের মধ্যে সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ কেননা স্ত্রী বাইসনদের সঙ্গে বছরে একমাত্র একবার মিলন হয় তাদের৷ তাই প্রজনন মৌসুমে পুরুষ বাইসনরা একে অপরের সঙ্গে দিনে বহুবার মিলিত হয়৷
ছবি: imago/Nature Picture Library
বানরদের ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’
ম্যাকাক প্রজাতির নারী ও পুরুষ বানর – উভয়ের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে৷ যেখানে পুরুষরা মাত্র একরাতের জন্য সমলিঙ্গের সঙ্গে মিলিত হয়, সেখানে স্ত্রী বানররা নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তোলে এবং একে অপরের সঙ্গে থেকে যায়৷
ছবি: picture alliance/robertharding
অ্যালবাট্রসদের বন্ধন
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের লেসন অ্যালবাট্রসরা তাদের সমকামী বন্ধনের জন্য ভীষণভাবে পরিচিত৷ এরা এতটাই বন্ধনে জড়িয়ে যায় যে পুরো জীবন একসাথে কাটিয়ে দেয়, যেন মনে হবে একটি সন্তান সহ স্বামী-স্ত্রীর সুখি পরিবার৷
ছবি: imago/Mint Images
যৌন-বিকারগ্রস্ত বনোবো
পিগমি শিম্পাঞ্জী বা বনোবোকে বলা হয় মানবজাতির সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রাণী৷ তারা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মিলিত হতে থাকে, এমনকি সমলিঙ্গের সঙ্গে৷ নিজেদের আনন্দের জন্যই এটা করে তারা৷ তবে এটা ঠিক তারা এটাকে নিজেদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করা এবং দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় হিসেবেও মনে করে৷ স্ত্রীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/F. Lanting
প্রতি ৫টির মধ্যে একটি রাজহাঁস সমকামী
অনেক পাখিদের মতো রাজহাঁসরাও একগামী এবং বছরের পর বছর ধরে তারা এক সঙ্গীর সঙ্গে কাটিয়ে দেয়৷ এদের মধ্যে অনেকেই সঙ্গী হিসেবে সমলিঙ্গের হাঁসকে বেছে নেয়৷ শতকরা ২০ ভাগ রাজহাঁস সমকামী এবং তারা প্রায়ই পরিবার গঠন করে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/P. Frischknecht
সিন্ধুঘোটক
পুরুষ সিন্ধুঘোটক চার বছর বয়সের আগে যৌনসক্ষমতা লাভ করে না৷ এর আগ পর্যন্ত তাদের প্রায় সবাই সমকামী থাকে৷ যখন তাদের চার বছর হয় তখন হয় তারা উভগামী হয়, না হলে কেবল প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী সিন্ধুঘোটকদের সঙ্গে মিলিত হয়৷
ছবি: imago/Nature in Stock
ভেড়াদের পছন্দ
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পুরুষ ভেড়ার পালের ৮ ভাগ ভেড়াই সঙ্গী হিসেবে পুরুষদের পছন্দ করে, এমনকি প্রজননের সময়ও৷