তাঁরা একে অপরের অপরিচিত৷ বলা যায়, ক্যামেরার সামনেই প্রথমবার দেখা৷ এই অপরিচত মানুষদের একে অপরকে চুমু খেতে বলা হয়৷ শুরুতে জড়তা থাকলেও তাঁরা সেটা ভালোভাবেই করেন৷ ইন্টারনেটে এই ভিডিও ইতিমধ্যে দেখেছেন ৬ কোটি মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
চলচ্চিত্র পরিচালক টাটিয়া পিলিয়েভার তৈরি সাড়ে তিন মিনিটের ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশ হয় ১০ই মার্চ৷ ‘ফার্স্ট কিস' বা ‘প্রথম চুম্বন' শিরোনামের এই আয়োজনে ২০ জন একেবারে অপরিচিত মানুষকে দশটি গ্রুপে ভাগ করে একে অপরকে চুমু দিতে বলা হয়৷ বিভিন্ন বয়সের, এমনকি সমকামী নারী এবং পুরুষরাও এতে অংশ নেন৷ মাত্র এক সপ্তাহে ভিডিওটি ইন্টারনেটে দেখেছেন ৬ কোটি মানুষ৷
তবে এই আয়োজন নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়ে গেছে৷ শুরুতে ভিডিওটি নেহাতই সাধারণ মনে হলেও এখন গণমাধ্যম জানাচ্ছে যে, এটা আসলে একটি ‘বিজ্ঞাপন'৷ হাফিংটন পোস্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ভিত্তিক এক পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা তৈরি করা হয়৷ বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়াদের মধ্যে অভিনেতারাও ছিলেন৷
ভিডিওটি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ফ্যাশন ডিজাইনার মেলিসা ককার অবশ্য জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপন হলেও এটা আসল এবং চমৎকার৷ ভিডিওতে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা স্বেচ্ছাসেবী এবং সত্যিকার অর্থেই একে অপরকে চিনতেন না৷ ‘হলিউড গসিপকে' এ কথাই জানিয়েছেন তিনি৷
ভালোবাসার রং বিশ্বময়
ভালোবাসার জন্য আবার দিনক্ষণ লাগে? কিন্তু ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটিই সেই ভালোবাসা দিবস বা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নাম ধরে একটি বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে৷ এ দিন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাঁদের ভালোবাসার মানুষটিকে মনের কথা জানান৷
ছবি: dapd
যেদিন থেকে শুরু
২৬৯ সালে ইটালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী ছিলেন৷ ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট তাঁকে বন্দি করেন৷ বন্দি অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন৷ এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন৷ দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি৷
ছবি: Getty Images/Afp/Ali Al-Saad
আনন্দ ও বিষাদের অনুভূতি
৪৯৬ সালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে ঐ দিনটিকেই ‘ভালোবাসা দিবস’ ঘোষণা করা হয়৷ প্রেমে থাকে আনন্দ, থাকে বিষাদ৷ ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে, তোমারে করেছে রানি৷’ অথবা ‘আমি ভালোবাসি যারে, সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে৷’ রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘তোমরা যে বল দিবস-রজনী, ভালোবাসা, ভালোবাসা৷ সখি ভালোবাসা কারে কয়? ’
ছবি: Getty Images/Afp/Ali Al-Saad
দিবসটি ঘিরে বাণিজ্য
ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপণিবিতানগুলোতে ভালোবাসার সাজ৷ লাল রঙের সমাহার সর্বত্র৷ থরে থরে সাজানো লাল টকটকে গোলাপ৷ অনেকে একটি মাত্র দিনকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উৎসর্গ করতে আপত্তি জানালেও, বাংলাদেশও আর ব্যতিক্রম নয়৷ সেখানেও একই ধরনের বাণিজ্য দেখা যায় পোশাক ও উপহারে৷
ছবি: DW/M. Al-Saidy
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে...
অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ফেসবুক আর প্রযুক্তিপণ্যের এ যুগে ভ্যালেন্টাইনস ডে-র কার্ড বিক্রিতে কিছুটা মন্দা দেখা দিয়েছে আজকাল৷ তারপরও অবশ্য ভালোবাসার নানা বাণী লেখা কার্ডের সমাহার দোকানে দোকানে৷ ভালোবাসার মানুষটির জন্য উপযুক্ত একটি কার্ড বেছে নিলেই হলো...
ছবি: Getty Images/Afp/Armend Nimani
সব বয়সের প্রেম
বাংলাদেশে ভ্যালেনটাইনস ডে-র প্রচলন খুব বেশি দিনের না হলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে এ দিনটি পালন এখন যেন সামাজিক রীতির অংশ হয়ে গেছে৷ আমাদের দেশে কেবল শহুরে তরুণ-তরুণীরা এদিন পালনে উত্সাহী হলেও, মার্কিন মুলুকে কিন্তু প্রায় সব বয়সিরাই এ দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভালোবাসার দৃষ্টান্ত
২০০৭ সালের ২০শে এপ্রিল বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেছিলেন বলিউডের অন্যতম সুখী তারকা দম্পতি অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন৷ তাঁদের প্রেমের শুরুটা হয়েছিল ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উমরাও জান’ ছবির সেটে৷ বলিউডের অন্যতম সুখী তারকা দম্পতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন অভিষেক ও ঐশ্বরিয়া৷
ছবি: AP
সময় একটা বড় ব্যাপার
অনেক ব্যস্ততার মধ্য থেকেই বের করে নিতে হবে ভালোবাসার সময়৷ একটু সময় একসঙ্গে থাকা, কাছাকাছি আসার জন্য মুহূর্তগুলো নিজেদের মতো করে বের করে নিতে হবে৷ ভালোবাসা হচ্ছে বাগানের মতো – যত যত্ন নেয়া হবে, ততই তো বাড়বে তার সৌন্দর্য, ফুটবে ফুল, ফলবে ফল৷
ছবি: Reuters
ভালোবাসা দিবসে বিয়ে
বিয়ে নিয়ে দেশে দেশে বিশেষ দিনক্ষণ খোঁজার রীতি রয়েছে৷ নতুন জীবনে ধাবিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশিরভাগ মানুষই শুভদিনে সম্পন্ন করতে চান৷ ইদানীং অন্যান্য দিনগুলোর পাশাপাশি ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে বিয়ে করারও একটা ফ্যাশন শুরু হয়েছে৷
ছবি: dapd
8 ছবি1 | 8
ককার স্বীকার করেছেন, লস অ্যাঞ্জেলসে অনেক অভিনেতা, অভিনেত্রী বসবাস করেন৷ তাই বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়াদের মধ্যে তাঁদের থাকা অস্বাভাবিক নয়৷
তবে বিতর্ক যাই হোক, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এখনও শেয়ার হচ্ছে এই ‘ফার্স্ট কিস'৷ এ নিয়ে টুইটারেও মন্তব্য করছেন অনেকে৷ এছাড়া ইউটিউবে ভিডিওটি সোমবার পর্যন্ত পছন্দ করেছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ৷ অন্যদিকে অপছন্দ ৩০ হাজার জনের৷ এছাড়া এতে মন্তব্য জমা পড়েছে ৩৫ হাজারেরও বেশি৷ আর অধিকাংশ মন্তব্যে ভিডিওটিকে সুন্দর বলা হয়েছে৷
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর স্ত্রী মিশেল ওবামার এক আলিঙ্গনের ছবি ফেসবুক, টুইটারে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বার জয়ের খবর শোনার পর স্ত্রী মিশেলকে জড়িয়ে ধরেন সন্তুষ্ট ওবামা, যা ছিল একেবারে নিখাদ ভালোবাসার আলিঙ্গন৷