তামিম ইকবালের ব্যাট আর প্যাডের মাঝে যতটা ফাঁক ছিল দু' দলের ব্যবধান কি তার চেয়ে বেশি? চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ২৪২ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলায় তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
কেমার রোচের বেশ ভালো বলটাকে তামিম স্টাম্প খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে না দিলে, শান্ত রান আউট না হলে, কিংবা মুশফিক নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রিভিউটা নিলে হয়ত টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিনেই অর্ধেক ব্যাটসম্যানকে হারাতে হতো না৷ অবশ্য এ ব্যর্থতায় অভিজ্ঞ তামিম, মুশফিকদের দায় যদি দিতেও হয়, অনভিজ্ঞ জোমেল আন্দ্রে ওয়ারিকানকে কৃতিত্বও দিতেই হবে৷ ৫৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাঁ হাতি এই স্পিনারই প্রথম দিনটাকে বাংলাদেশের হতে দেননি৷
অথচ রোচকে প্রথম বলেই সপাটে চার হাঁকিয়ে দিনের সূচনাটা ভালোই করেছিলেন সপ্তম টেস্ট খেলতে নামা সাদমান ইসলাম৷ কিন্তু দুই বাঁ হাতির ওপেনিং জুটি ভেঙে যায় নবম ওভারে৷ রোচের একটু অ্যাঙ্গুলার একটা ডেলিভারি পা বাড়িয়ে ডিফেন্সিভ খেলতে গিয়েছিলেন তামিম৷ কিন্তু ব্যাট আর প্যাডের সামান্য ফাঁক বুঝিয়ে দিলো তামিমের ডিফেন্স আসলে লখিন্দরের ঘর৷ সুতরাং দলকে ২৩ রানে রেখে ১৫ বলে নয় রান করে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করা বাংলাদেশি হয়েই তামিম বোল্ড!
তামিমের মতোই ৬১ তম টেস্ট খেলতে নামা আন্দ্রে কেমার জামাল রোচ সারা দিনে আর উইকেটের দেখা পাননি৷
৯ রান করে মুশফিকুর রহিমকে টপকে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান (৪ হাজার ৪১৪) করা ব্যাটটসম্যান হলেও সেই রেকর্ড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি তামিম৷ ৬৯ বলে ৩৮ রান করে সেই রেকর্ড আবার ফিরিয়ে নেন মুশফিক৷
দলের যখন বড় একটা ইনিংস দরকার, তখনই মুশফিক৬৯ বলে ৩৮ রান করে ওয়ারিকানের বলে কর্নওয়ালকে ক্যাচ দেয়ায় রেকর্ড উদযাপনের চেয়ে শেষ বিকেলে বিপর্যয় এড়ানোর চিন্তাই বড় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের কাছে৷ কারণ, তার আগে নাজমুল হোসেন শান্ত, অধিনায়ক মোমিনুল এবং সাদমানও ফিরে গেছেন সাজঘরে৷
সাদমান ১৫৪ বলে ৫৯ করলেও বাকি দুজন ফিফটির দেখা পাননি৷ বাঁহাতি নাজমুল হোসেন শান্ত করেছেন ২৫ আর অধিনায়ক মোমিনুল ২৬৷ এক রানে জীবন পাওয়া মোমিনুল সম্ভাবনা জাগিয়েও বড় ইনিংস খেলতে না পারার জন্য নিশ্চয়ই নিজেকে দুষবেন৷ তবে সাদমানের সম্ভাবনা ধংস করার জন্য মুশফিকও দায়ী৷ ওয়ারিকানের বলে আম্পায়ার এলবিডাব্লিউ দেয়ায় রিভিউয়ের জন্য মুশফিকের পরামর্শ চেয়েছিলেন সাদমান৷ সায় দেননি মুশফিক৷ পরে দেখা গেছে বল লেগস্টাম্প মিস করে যেতো৷
বাংলাদেশের বড় ইনিংস গড়ার আশা হয়ে অবশ্য দিন শেষে উইকেটে ছিলেন সাকিব আর লিটন৷ সাকিব অপরাজিত ৩৯ রানে আর লিটন ৩৪ রানে৷
এসিবি/কেএম (ক্রিকইনফো)
মোহাম্মদ সিরাজ: বল হাতে দারিদ্র্য ও অস্ট্রেলিয়া জয়
একেবারে গরিব পরিবারের ছেলে মোহাম্মদ সিরাজ প্রমাণ করে দিলেন, প্রতিভা থাকলে সর্বোচ্চ স্তরে সফল হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। ছবিঘরে থাকছে অটোরিকশা চালকের সন্তানের ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সেনসেশন হয়ে ওঠার গল্প...
মোহাম্মদ সিরাজের বাবা ছিলেন গরিব অটো-চালক। তার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় ক্রিকেটার হবে, ভারতের হয়ে খেলবে। । প্রতিদিন ৭০ টাকা দিতেন সিরাজকে। প্র্যাকটিসে যেতে-আসতে খরচ হতো ৬০ টাকা। সেই অবস্থা থেকে প্রতিভা ও পরিশ্রমের জোরে উঠে এসেছেন হায়দ্রাবাদের ছেলে সিরাজ৷
ছবি: Peter Dovgan/Uk Sports Pics Ltd/imago images
ঘরোয়া ক্রিকেটে জ্বলে ওঠা
২০১৬-১৭-র আগে পেসার মোহাম্মদ সিরাজকে কেউ চিনতো না। ওই মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে হায়দ্রাবাদের হয়ে ৪১ উইকেট নিয়ে চমকে দেন ২৬ পেরোনো এই তরুণ। সেখান থেকে সোজা আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ টিমে। সেখানে সাফল্য তাকে নিয়ে আসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু টিমে। দুই কোটি ৬০ লাখ টাকায় তাকে কেনে বেঙ্গালুরু। অটো-চালকের ছেলে কোটিপতি হয়ে যান।
ছবি: Peter Dovgan/Uk Sports Pics Ltd/imago images
জাতীয় দলের জন্য তৈরি হওয়া
ইন্ডিয়া এ টিম এবং ইন্ডিয়া গ্রিন টিমে সুযোগ পান সিরাজ। সেটাই তাঁর প্রস্তুতিপর্ব। নিজের বোলিংকে আরো ক্ষুরধার করে নেন তিনি। উইকেট থেকে পেস ও বাউন্স আদায় করা হলো সিরাজের বোলিংয়ের বিশেষত্ব।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে পাশে পেয়েছেন সিরাজ। ভালো পারফর্ম্যান্স দিয়ে প্রথমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে, তারপর ভারতের এ টিম ও গ্রিন টিমে স্থান করে নিতেও বেশি সময় লাগেনি৷
ছবি: AFP/D. Sarkar
বাবার স্বপ্নপূরণ
অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের স্কোয়াডে ছিলেন বদলি বোলার হিসাবে। সিরাজ জানতেন, এই সুযোগ হারানো যাবে না। হারাননি তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় বসে তিনি বাবার মৃত্যুর খবর পান। কিন্তু একে একে সব সিনিয়র বোলার ইনজুরিতে পড়ায় তিনি ভারতে ফেরেননি। দেশের স্বার্থে থেকে গেছেন দলের সঙ্গে। সিরিজের তৃতীয় টেস্ট শুরুর সময় মাঠে যখন জাতীয় সংগীত বাজছিল, তখন চোখের জল সামলাতে পারেননি। মনে পড়ছিল বাবার কথা।
ছবি: Peter Dovgan/Uk Sports Pics Ltd/imago images
বোলিংয়ের নেতৃত্বে
ব্রিসবেনের টেস্ট মিলিয়ে মাত্র তিনটি টেস্টে খেললেন মোহাম্মদ সিরাজ। কিন্তু সেখানেই দেখা গেল, তিনি নটরাজনকে উদ্বুদ্ধ করছেন। পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। এই দায়িত্ববোধ বুঝিয়ে দিচ্ছে, তিনি কতটা পরিণত। (ছবিতে ব্রিসবেনে অভিষিক্ত নটরাজন)
ছবি: Tertius Pickard/AP Photo/picture alliance
আজিঙ্কা রাহানের ভরসা
প্রথম টেস্ট খেলে বিরাট কোহলি ভারতে ফিরে আসেন। তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করেন আজিঙ্কা রাহানে। ঠান্ডা মাথার এই ক্রিকেটারও সমানে সিরাজকে উৎসাহিত করেছেন। সিরাজও হয়ে উঠেছেন তার বড় ভরসা।
ছবি: Tertius Pickard/AP Photo/picture alliance
টেস্টে পাঁচ উইকেট
ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পেয়েছেন সিরাজ। চার টেস্টের সিরিজে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া একমাত্র ভারতীয় তিনি৷ তিন টেস্ট খেলে সব মিলিয়ে পেয়েছেন ১৩টি উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পারফরম্যান্স বুঝিয়ে দিচ্ছে সিরাজ লম্বা রেসের ঘোড়া। একসময় ভারতের ক্রিকেটে দাপট ছিল উচ্চবিত্ত ও রাজা-মহারাজাদের। অনেক দিন হলো সেই ট্রেন্ড বদলেছে। আর এখন ক্রিকেটের মাঠ কাঁপাচ্ছেন খুব সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা সিরাজের মতো ছেলেরা।