1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী কোটিপতি

দেবারতি গুহ১৫ জানুয়ারি ২০১৩

গণধর্ষণ অথবা ভ্রুণহত্যার মতো অকথ্য অপরাধের জন্য ভারত যখন বিশ্বময় চর্চিত, ঠিক তখনই ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ কোটি টাকা জিতে নিলেন সাধারণ ঘরের মেয়ে সনমিত কৌর সাহানি৷ তিনিই এখন ভারতের নতুন কোটিপতি!

ছবি: KBC

১২ই জানুয়ারি, মঙ্গলবার সারা ভারত দেখলো ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি' বা কেবিসি-র সেটে কীভাবে ইতিহাস গড়লেন সনমিত কৌর সাহানি৷

পরনে হাল্কা গোলাপী আর নীল রঙের সাদা-মাটা একটা সালোয়ার-কামিজ৷ বলিউডের ‘বিগ বি' অমিতাভ বচ্চন নাম ধরে ডাকতে, উপস্থিত দর্শকের করতালির মধ্যে বেশ ধির গতিতেই মঞ্চে উঠে এলেন দৃঢ় চিত্ত সনমিত৷ চোখে একটাই স্বপ্ন: জীবন সংগ্রামে জিততে হলে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি'-র আসরে বাজিমাৎ যে তাঁকে করতেই হবে৷

হলোও তাই৷ একে একে এক লাখ, বিশ লাখ করে এক কোটি টাকা জিতে ফেললেন সনমিত৷ সামনে পাঁচ কোটি টাকার শেষ প্রশ্ন৷ এক কোটি টাকা নিশ্চিত হবার পর দুটো ‘লাইফ লাইন' ছিল সনমিতের৷ সে অবস্থায় ‘বিগ বি'-র মনে হয়েছিল, ঝুঁকি না নিয়ে সনমিতের খেলা ছেড়ে দেয়াই ভালো৷ তাতে ১ কোটি টাকা তো সে পাবেই৷ আর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারলে মাত্র এক লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ফিরতে হবে মুম্বইয়ের এই গৃহিনীকে৷

পাঁচ কোটি টাকার প্রশ্নটি ছিল, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কে-২ প্রথমবারের মতো জয় করেছিলেন কোন নারী? উত্তরটি (ওয়ান্ডা রুটকিভিট্স) পাওয়ার পর উপস্থিত সকলের মতো স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন সনমিত৷ তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন অমিতাভ বচ্চন৷ বলিউড মেগাস্টারের অভিব্যক্তি বলছে, ‘‘মেয়ে, তুমি হেরে গেছো!'' স্বামীর দেনা, সন্তানের লেখাপড়ার কী হবে! কিন্তু সনমিতের আত্মবিশ্বাস ছিল যে তিনি পারবেন৷ পেরেছেনও৷ ভারতে কোনো রিয়ালিটি শো-তে তিনিই প্রথম নারী, যিনি এত বড় একটা অঙ্কের পুরস্কার জিতলেন৷

বিজয়ীর ভঙ্গিমায় সনমিতছবি: KBC

প্রশ্ন হলো, মাত্র ১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করা একটি মেয়ে কীভাবে জিতলেন এই পুরস্কার? কীভাবে দিলেন কঠিন কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর, যা দিতে বহু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারকেও হোঁচট খেতে হয়? সনমিত জানান, ‘‘আসলে আমি বাচ্চাদের পড়াই৷ তাদের এবং আমার নিজের বাচ্চাদের পড়াতে পড়াতেই আমার জ্ঞান বাড়তে থাকে৷ এক জিনিস বারে বারে পড়ানোর ফলে আমার তা আত্মস্থও হয়ে যায়৷ তাছাড়া, বছর চারেক আগে আমার ইউট্রাসে একটা টিউমার হয়৷ তখন বিছানাতেই পড়ে থাকতে হতো আমাকে৷ সেসময় শুয়ে শুয়েই আমি নানা ধরণের বই পড়তে শুরু করি৷ এরপর প্রথম রাউন্ড ক্লিয়ার করার পর কেবিসি থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য যখন ডাক আসে, তখন সেই দেড় মাসে আমি খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করি৷ ইন্টারনেট থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন তথ্যও জোগাড় করে পড়ি৷''

সত্যিই গরিব ঘরের মেয়ে সনমিত৷ স্কুলের গণ্ডিতেই শেষ হয়েছিল লেখাপড়া৷ তারপরও সেই পুঁজি নিয়েই শুরু করেন বাচ্চাদের পড়াতে৷ কিন্তু পরবর্তী জীবনে কেন আর তাঁর পড়াশোনা হলো না? জিজ্ঞাসা করি কোটিপতি সনমিতকে৷ বলেন, ‘‘১৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমি আমার দাদা-দাদির কাছে বড় হই৷ কিন্তু তারপর দাদুর ক্যান্সার ধরা পড়লে তাঁর জীবদ্দশায় আমার বিয়ে দেয়ার জন্য বাবা-মা মরিয়া হয়ে ওঠেন৷ কয়েক বছরের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়ে যায়৷ তারপর আমি মুম্বই চলে আসি৷ তাই প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনাও আর করা হয়ে ওঠে না৷''

৩৭ বছরের জীবনে স্বচ্ছলতা কী জিনিস না বুঝলেও, এখন আর কষ্ট করে ছাত্র না পড়ালেও চলবে তাঁর৷ ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ কোটি টাকা জিতেছেন তিনি৷ এটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! সনমিতের এ সাফল্যে অমিতাভ বচ্চনও খুব খুশি৷ সামাজিক যোগাযোগের সাইটে তিনি লিখেছেন, ‘ভারত ক'দিন আগে দেখলো ‘আমানত'-এর দুঃখজনক বিদায়, মেয়েটি চলে গেলেও রেখে গেছে আপোশ না করে, সাহস করে লড়াই করার চেতনা৷ আর সনমিত দেখালো যে সে-ও লড়তে জানে৷

Week 3/13 Women: Sunmeet Kaur wins KBC - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

এত যাঁর মনের জোর, কেমন নারী তিনি? সনমিত জানায়, ‘‘আমি ছোট থেকেই খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী৷ যদি একবার কোনো কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, তবে শেষ ঠিকমতো শেষ না করে ক্ষান্ত দেই না আমি, যে কোনো জিনিসের ক্ষেত্রেই...ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর সময়ও যদি কোনো বিষয় আমার পছন্দ হয়, তবে বিষয়টি সম্পর্কে, বিষয়টির সবগুলি দিক সম্পর্কে ওদের আমি জানাতে চাই৷ তার জন্য শত কষ্ট করতেও আমি রাজি৷''

লোকে বলে জীবনই আমাদের শেখায়৷ তা জীবন থেকে কী শিক্ষা পেয়েছেন তিনি? সনমিতের কথায়, ‘‘আমার টিউমারটা যখন ধরা পড়লো তখন শুয়ে থাকতে থাকতে মানসিক অবসাদে ভুগতাম আমি৷ কিছুই ভালো লাগতো না৷ সেসময় শুধুমাত্র আমার জন্য আমার স্বামী তাঁর চাকরি-বাকরি সব ছেড়ে দেন৷ আমার চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে তাঁর সামান্য যেটুকু সঞ্চয় ছিল, তা-ও শেষ হয়ে যায়৷ তারপরও তিনি আমাকে হাল ছাড়তে দেন নি৷ বরং বাচ্চাদের শুয়ে শুয়েই পড়ানোর উপদেশ দিতেন৷ বলতেন, তোমাকে একজন যোদ্ধা হতে হবে, ‘ফাইট' করতে হবে৷ ‘হিট মি টয়'-কে যেমন মারার পর সে পড়ে গিয়ে আবারো উঠে দাঁড়ায়, তেমনই আমার স্বামী বলতেন যে, এভাবেই তোমাকে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে৷ তখনই আমি উপলব্ধি করি যে, জীবন সম্পর্কে পজিটিভ, ইতিবাচক দৃষ্টি রাখা কতটা জরুরি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ