ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এবার জি২০ শীর্ষবঠক হচ্ছে৷ সেখানেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হবে৷
বিজ্ঞাপন
২০২১ সালে বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথমবার দুই নেতা মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন৷ এর আগে ভার্চুয়াল বৈঠক হলেও সামনাসামনি বৈঠক হয়নি৷
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখনো বরাবরের মতোই তিক্ত৷ এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বালিতে আগামী ১৪ নভেম্বর বৈঠক করবেন বাইডেন ও শি৷ বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও যোগায়োগের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া ও তা আরো জোরদার করা৷
এছাড়াও নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে কীভাবে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ভালো করা যায়, সহযোগিতা বাড়ানো যায় তা নিয়েও বাইডেন ও শি আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়েছে৷ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আলোচনায় সেগুলোও গুরুত্ব পাবে৷
এখন বাণিজ্য নীতি, রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসন, তাইওয়ান সম্পর্কে চীনের মনোভাব নিয়ে দুই দেশের তীব্র মতবিরোধ রয়েছে৷
সংবাদসংস্থা এপি জানাচ্ছে, এই শীর্ষবৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউস ও চীনের কর্মকর্তারা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করেছেন৷
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি সই করেছে চীন৷ এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
নিরাপত্তা চুক্তি সই
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি সই করার কথা মঙ্গলবার জানিয়েছে চীন৷ এরপর বুধবার সলোমনের প্রধানমন্ত্রী মানাসে সোগাভারে সংসদে চুক্তি সইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷ উপরে ২০১৯ সালে অন্য একটি চুক্তি সইয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
উদ্বেগ
সলোমন দ্বীপপুঞ্জ থেকে অস্ট্রেলিয়ার দূরত্ব দুই হাজার কিলোমিটারের কম৷ চুক্তির আওতায় চীন সলোমনে সামরিক বাহিনী পাঠাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অস্ট্রেলিয়া৷ একই বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রও৷
চুক্তি কী আছে?
চুক্তিটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি৷ এটি কবে, কোথায় সই হয়েছে সেটিও জানানো হয়নি৷ সলোমনের প্রধানমন্ত্রী সোগাভারে (ছবি) শুধু জানিয়েছেন ‘কিছু দিন আগে’ এই সই হয়েছে৷ চুক্তিটি কবে প্রকাশ করা হবে - বুধবার সংসদে বিরোধী নেতার এই প্রশ্নের উত্তর দেননি সোগাভারে৷
ছবি: picture alliance/AP
খসড়া
সই হওয়া চুক্তিতে কী আছে তা জানা না গেলেও গতমাসে ফাঁস হওয়া খসড়া চুক্তিতে দেখা গেছে, চীনকে সলোমনে নৌবাহিনী মোতায়নের অনুমতি দেয়া হবে৷ তবে ১ এপ্রিল সোগাভারে বলেছিলেন, তিনি সামরিক ঘাঁটি বানানোর জন্য চীনকে আমন্ত্রণ করেননি৷ ছবিতে সলোমনে চীনের দূতাবাস দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Charley Piringi/AP/picture alliance
থামানোর চেষ্টা
খসড়া ফাঁস হওয়ার পর চুক্তিটি যেন স্বাক্ষরিত না হয় সেজন্য অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করেছিল৷ অস্ট্রেলিয়া তাদের প্যাসিফিক মন্ত্রীকে সলোমনে পাঠিয়েছিল৷ আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক কর্মকর্তাকে সলোমনে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল৷ তার আগেই চুক্তিটি সই করে ফেলে চীন ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ৷
ছবি: Huang Jingwen/Photoshot/picture alliance
সলোমন পরিচিতি
ছয়টি বড় দ্বীপসহ প্রায় এক হাজার দ্বীপের দেশ সলোমনের আয়তন প্রায় ২৮ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার৷ বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেখানকার জনসংখ্যা ছয় লাখ ৮৬ হাজার৷ গত নভেম্বরে দেশটির রাজধানীতে সোগাভারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে৷ দারিদ্র্য, বেকারত্ব, আন্তঃদ্বীপ শত্রুতা, চীনবিরোধী মনোভাব এসব কারণে বিক্ষোভ হয়েছে৷ সেই সময় রাজধানীর চায়নটাউনের অনেকখানি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: Oliver Förstner/Zoonar/picture alliance
6 ছবি1 | 6
শি জিনপিং কয়েক সপ্তাহ আগে তৃতীয় মেয়াদের জন্য কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন৷ তিনি চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ তারপরেই তিনি বাইডেনকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা মেনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র যেন আরো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে৷ বাইডেনও বলেছিলেন, অ্যামেরিকা চীনকে প্রতিযোগী হিসাবে দেখে৷ তারাও বিরোধ চায় না৷
কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রটাও বিশাল৷ চীন মনে করে, তাইওয়ান তাদের অংশ এবং তারা তাইওয়ানকে মূল চীনের অংশ করতে চায়৷ কিন্তু বাইডেন বেশ কয়েকবার বলেছেন, চীন যদি জোর করে তাইওয়ান দখল করতে চায়, তাহলে অ্যামেরিকা চুপ করে বসে থাকবে না৷ চীনের আপত্তি সত্বেও মার্কিন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেছেন৷ তারপর তাইওয়ান ঘিরে চীন সামরিক মহড়া করেছে৷ সম্প্রতি চীনে উইগুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন নিয়ে অ্যামেরিকা সহ পশ্চিমা দেশগুলি আবার সোচ্চার হয়েছে৷ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও চীন পুটিনের পাশে আছে৷ অ্যামেরিকা তা ভালো চোখে দেখছে না৷
মুসলমানরা বন্দিশিবিরে, পর্যটকরা শিনচিয়াংয়ে
চীনের শিনচিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের নতুন করে শিক্ষিত করে তোলার নামে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ রাজ্যের এমন ভাবমূর্তি দূর করতে সেখানে পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা চলছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
মুসলিমদের বাস
চীনের শিনচিয়াং রাজ্যে মূলত উইগুরসহ তার্কিক ভাষা বলা অন্য মুসলিমদের বসবাস ছিল৷ গত শতকের ৫০ থেকে ৭০ দশকের মধ্যে সেখানে সরকারিভাবে হান চীনাদের সংখ্যা বাড়ানো হয়৷ তখন থেকে মুসলমান ও হানদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
মুসলমানেরা বন্দিশিবিরে
মুসলমানদের নতুন করে শিক্ষা দেয়ার নামে চীন সরকার কয়েক বছর আগে মুসলিমদের বিভিন্ন ক্যাম্পে (ছবি) নিয়ে যাওয়া শুরু করে৷ সেখানে তাঁদের মান্দারিন ভাষা শেখানো ও কারিগরি শিক্ষা দেয়া হয় বলে চীনের দাবি৷ তবে জাতিসংঘের অভিযোগ, ‘ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ’ ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্য আনতে উইগুরদের ‘রাজনৈতিক শিবিরে’ জোর করে আটকে রাখা হয়েছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
নজরে রাখতে অ্যাপ
তথাকথিত এসব বন্দিশিবিরের বাইরে যে উইগুররা আছেন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপর নজর রাখতে সম্প্রতি একটি অ্যাপ চালু করেছে চীন৷ এই অ্যাপের সাহায্যে উইগুরদের ৩৬ ধরনের আচরণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ যেমন, প্রতিবেশীর সঙ্গে বেশি না মেশা, স্মার্টফোন ব্যবহার না করা, ‘উৎসাহী হয়ে’ মসজিদে দান করা ইত্যাদি৷
এছাড়া ফেসিয়াল-রিকগনিশন ক্যামেরা, ওয়াইফাই স্নিফার্স (এর মাধ্যমে চেকপয়েন্ট দিয়ে পার হওয়ার সময় মানুষের কাছে থাকা মোবাইলের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়), পুলিশি চেকপয়েন্ট ইত্যাদির মাধ্যমেও উইগুরদের তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Azubel
পর্যটক বাড়ছে
তাকলামাকান মরুভূমি, বরফে ঢাকা তিয়ানশান, দেখার এমন অনেক কিছুই আছে শিনচিয়াংয়ে৷ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরকারের আচরণ নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে শিনচিয়াং সম্পর্কে নেতিবাচক খবর এলেও সেখানে পর্যটক যাওয়া কমেনি, বরং বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে আগের বছরের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে সরকারি তথ্য বলছে৷ অবশ্য বেশিরভাগই দেশি পর্যটক৷
ছবি: AFP/G. Baker
পর্যটকদের ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে
২০১৪ সালে শিনচিয়াং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটার পর সেখানে পর্যটকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল৷ এই অবস্থায় প্রাদেশিক সরকার পর্যটক প্রতি ৭৩ ডলার বা ছয় হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এখনও সেটা আছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি নেই
শিনচিয়াংয়ের সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি নেই পর্যটকদের৷ মুসলমানদের যে শিবিরগুলোতে বন্দি করে রাখা হয়েছে তার আশেপাশে যাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন এএফপির দুই সাংবাদিক৷ এছাড়া শিনচিয়াংয়ে চেকপয়েন্ট ও সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তাঁরা৷ অবশ্য এতসব নিরাপত্তা তল্লাশিকে সমস্যা মনে করছেন না চীনা পর্যটকরা৷
ছবি: Reuters/T. Peter
কোথায় ভয়!
শিনচিয়াংয়ের কাশগর শহরে উইলিয়াম লি নামের এক পর্যটকের সঙ্গে এএফপির প্রতিবেদকদের দেখা হয়েছিল৷ তিনি জানান, ঘুরতে গিয়ে তাঁর মনে হয়নি যে উইগুররা কোনো ভয়ের মধ্যে (যদি না আপনাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়) আছেন৷ ‘‘এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি,’’ বলেন লি৷
ছবি: AFP/G. Baker
8 ছবি1 | 8
বাইডেন যা চান
বাইডেন গত বুধবার বলেছেন, তিনি তাইওয়ান প্রসঙ্গ নিয়ে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন৷ এর পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ও বাণিজ্যনীতি নিয়েও কথা হবে৷
বাইডেন জানিয়েছেন, ''আমি যখন শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবো, সেখানে দুই দেশের জন্য একটা রেড লাইন তৈরির চেষ্টা করবো৷ চীনের জাতীয় স্বার্থ বলতে শি জিনপিং ঠিক কী বোঝাতে চান, সেটাও জানার চেষ্টা করবো৷ অ্যামেরিকার জাতীয় স্বার্থর কথাও বলবো৷ এটাও দেখার চেষ্টা করো, দুই দেশের স্বার্থ পরষ্পরবিরোধী কিনা৷''
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন প্রশাসনিক কর্তা জানিয়েছেন, এই বৈঠক থেকে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা না করাই ভালো৷ বৈঠকের পর কোনো যৌথ বিবৃতি থাকবে না৷ বলা যেতে পারে, বাইডেন এখন চীনের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চান৷