অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখলেন ট্রাম্প৷ ‘ওবামাকেয়ার' বাতিল করে বিকল্প আইন আনার পথে সংসদে প্রথম ধাপ পেরোতে পারলেন তিনি৷ কিন্তু জনরোষের মুখে রিপাবলিকান দল তাদের ঐক্য ধরে রাখতে পারবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
বিজ্ঞাপন
একের পর এক ধাক্কা খেতে খেতে নাজেহাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ যা-ই করতে যান, বাধার মুখে পড়েন৷ এমনকি নিজের রিপাবলিকান দলও প্রায়ই বেঁকে বসে৷ সংসদের দুই কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও এমন অসহায় অবস্থা কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য বিরল ঘটনা৷ অবশেষে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালন করতে প্রথম ধাপ এগোতে পারলেন তিনি৷
পূর্বসূরি বারাক ওবামা-র আমলে সাধারণ মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সেই ‘ওবামাকেয়ার' বাতিল করতে সংসদের নিম্ন কক্ষের সমর্থন আদায় করতে পারলো ট্রাম্প প্রশাসন৷
মার্চ মাসে সেই উদ্যোগ বাতিলকরার পর হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভ এবার সামান্য ভোটের ব্যবধানে পুরানো ব্যবস্থা বাতিল করে নতুন ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব অনুমোদন করলো৷ এবার উচ্চ কক্ষ সেনেট কী করে, সেদিকেই সবার নজর৷ সেখানে ১০০টি আসনের মধ্যে ৫২টি আসন রিপাবলিকানদের হাতে৷ অর্থাৎ তাদের ঐক্যে সামান্য ভাঙন ধরলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত থাকবে না৷
ট্রাম্প ‘ওবামাকেয়ার' বাতিল করতে যতই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন না কেন, বিষয়টি নিয়ে রিপাবলিকান দলের অনেক সংসদ সদস্য উভয় সংকটে পড়েছেন৷ কারণ, তাঁদের নির্বাচনি কেন্দ্রে অসংখ্য ভোটার স্বাস্থ্য বিমা হারানোর আশঙ্কায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন৷ তাঁরা সেই ক্ষোভের আঁচ পেতে শুরু করেছেন৷ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাম্প ‘ওবামাকেয়ার'-এর আকর্ষণীয় কোনো বিকল্পও তুলে ধরতে পারেননি৷ বরং নতুন অবস্থায় অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা ব্যবস্থার নাগাল পাবেন না বলেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে ২০১৮ সালে কংগ্রেস নির্বাচনে ভোটারদের সমর্থন পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷
অ্যামেরিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা একটি বিষয়কে ঘিরে৷ সুস্থ, সবল মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বিমার মাশুল এক থাকলে বা ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কমে গেলে তা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই৷ তবে যারা আগে থেকেই কোনো রোগ-ব্যাধিতে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে সেই মাশুল সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ এমনকি বিমা কোম্পানি তাদের আদৌ কোনো বিমা দিতে অস্বীকার করতে পারে৷ তাছাড়া প্রতিটি রাজ্য এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ পেলে বিভ্রান্তি আরও বেড়ে যাবে৷ অ্যামেরিকান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশন, অ্যামেরিকান হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশিরভাগ বড় সংগঠন ট্রাম্পের উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে৷
১০০ দিনে ট্রাম্প কথা রেখেছেন কি?
নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনতার সঙ্গে ১০০ দিনের চুক্তির কথা বলেছিলেন৷ প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি সেই চুক্তি মেনে সব প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন কি? এতগুলি নির্বাহী আদেশের পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Brendan Smialowski
‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল, নতুন স্বাস্থ্য বিমা চালু
তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে চালু করা স্বাস্থ্য বিমা কাঠামো বাতিল করে আরও অনেক কার্যকর এক পালটা ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের রিপাবলিকান দলের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে আপাতত পিছু হঠতে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. McNew
কর ব্যবস্থার সংস্কার
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কর ব্যবস্থার সংস্কারের ঘোষিত লক্ষ্যে একের পর এক সময়সীমা স্থির করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক বিশদ প্রস্তাবমালা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প৷ তবে প্রথম ১০০ দিনে তিনি এ ক্ষেত্রে কিছু করে উঠতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
কর্মসংস্থানে জোয়ার
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ সরকারি বিধিনিয়ম কমাতে পারলেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার আসবে৷ এখনো সে কাজে অগ্রগতি ঘটেনি৷ যেটুকু সাফল্য এসেছে, তার দাবিদার হবার নৈতিক অধিকার আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/A. P. Bernstein
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
অনুপ্রবেশ রুখতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প৷ বলেছিলেন, তার ব্যয়ভার মেক্সিকোকেই বহন করতে হবে৷ সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি এক নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন৷ এবার তার ব্যয়ভারের জন্য কংগ্রেসের দ্বারস্থ হচ্ছেন ট্রাম্প৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল প্রবল প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/J.Sullivan
আইএস ধ্বংস করার অঙ্গীকার
ক্ষমতায় আসার ৩০ দিনের মধ্যে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে পুরোপুরি নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু সমালোচকদের মতে, এখনো পর্যন্ত ওবামার আমলের নীতিই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও আইএস বহাল তবিয়তেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Militant Website Turkistan Islamic Party
অভিবাসনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি
প্রচারের সময় ট্রাম্প সংবিধানের তোয়াক্কা না করে সব মুসলিমদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অঙ্গীকার করেছিলেন৷ তারপর সুর নরম করে কিছু মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণ কার্যত বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেন৷ কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে সেই উদ্যোগ থমকে গেছে৷ বেআইনি অভিবাসীদের তাড়ানোর ক্ষেত্রেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Huffaker
মুক্ত বাণিজ্যের বিরোধিতা
উত্তর অ্যামেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ‘ন্যাফটা’র বর্তমান শর্তগুলির চরম বিরোধিতা করে নতুন করে সেটি সাজানোর উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে এই নিয়ে কোন্দলও শুরু হয়েছে৷ তবে আপাতত কোনো রদবদল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি৷