পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে সেনেটর হলেন কৃষ্ণা কুমারী কোহলি৷ এই প্রথম কোনো দলিতকে রাজনীতিতে পেল পাকিস্তান, যা নিয়ে সকলেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Masih
বিজ্ঞাপন
ইংরেজিতে একটি বহুল প্রচলিত কথা আছে, ‘‘বেটার লেট দ্যান নেভার৷'' বাংলায় বললে হয়, দেরিতে হলেও বোধের জন্ম হলো৷ স্বাধীনতার ৭০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানে এই প্রথম নিম্নবর্ণ দলিত সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি সেনেটর হলেন৷ আরো গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, নির্বাচিত ব্যক্তি একজন মহিলা৷ পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপিপি'র হয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি৷ এবং খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই জয় লাভ করেছেন৷ বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে পাকিস্তানের সামাজিক রাজনৈতিক পটভূমিকায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন৷
কৃষ্ণা কুমারী কোহলি৷ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের প্রত্যন্ত থর অঞ্চলের বাসিন্দা৷ ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্য তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে৷ সাধারণ কৃষক পরিবারের মেয়ে কৃষ্ণা ১৯৭৯ সালে পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় ভূস্বামীর ব্যক্তিগত জেলেও বহুদিন কাটিয়েছেন৷ সম্ভবত খাজনা দিতে না পারার জন্যই তাঁদের আটক করেছিল ওই ভূস্বামীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা৷ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তখন কৃষ্ণা৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়াশোনা৷ কিন্তু অদম্য জেদকে সঙ্গে নিয়ে এরপরেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন৷ স্কুল ফাইনাল শেষ করতে না করতেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে৷ কিন্তু তারপর পড়াশোনা বন্ধ করেননি৷ সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর করে রাজনীতিতে যোগ দেন৷
সংবাদ সংস্থা এএফপি'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণা বলেছেন, তাঁকে রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এবং নির্বাচনে প্রার্থী করার জন্য তিনি পিপিপি দলের প্রতি ঋণী৷ এর আগে অবশ্য দীর্ঘদিন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷ পাকিস্তানের দরিদ্র্, পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কাজ করেছেন৷ রাজনীতি অবশ্য তাঁর পরিবারের ঐতিহ্য৷ তাঁর দাদু ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন ১৮৫৭ সালে৷ ব্রিটিশরা তাঁকে ফাঁসিও দিয়েছিল৷ কৃষ্ণার দাদাও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷
এই মুহূর্তে পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুর সংখ্যা ২ শতাংশের কিছু বেশি৷ তার মধ্যে নিম্নবর্ণের দলিতের সংখ্যা আরো কম৷ স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের অবস্থা মোটেই ভালো নয়৷ দুঃখজনক সত্য হলো, এতদিন তাঁদের কথা বলার মতো রাজনীতিতে কেউ ছিলেন না৷ পাকিস্তানের বিশিষ্ট মানুষেরা কৃষ্ণার জয়কে তাই অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ সকলেই মনে করছেন, এর ফলে পাকিস্তানের রাজনীতি সমৃদ্ধ হলো৷
তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন৷ তাঁদের প্রশ্ন, এতদিন কেন কোনো দলিত মানুষ নির্বাচিত হননি? কেন এতদিন তাঁরা অবহেলিত ছিলেন? কেন কোনো দল এ নিয়ে এতদিন মাথা ঘামায়নি? শুধু তাই নয়, একুশ শতকে দাঁড়িয়েও ‘দলিত' শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তা নিয়ে উদযাপন করতে হচ্ছে, এই বিষয়টিকেই মেনে নিতে পারছেন না অনেকে৷
পাকিস্তানি কমিক শিল্পীর তুলি ও ক্যামেরায় নারীবাদ ও বৈচিত্র্য
চিন্তাশীল, প্ররোচনামূলক, ফ্যাশনদুরস্ত: শেহজিল মালিকের নন্দনতত্ত্ব একটি রক্ষণশীল, পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজের রূপান্তর ঘটাতে চায়৷ প্রয়োজনে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে যেতেও দ্বিধা করেন না এই শিল্পী৷
ছবি: Shehzil Malik
প্রকাশ্য স্থানে নারী (১)
শেনজিল মালিক বলেন যে, নারী হওয়ার কোনো বাঁধাধরা পন্থা নেই৷ নিজের বাড়ির কাছের পার্কে বারংবার যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা করার পর তিনি এই কমিকের মাধ্যমে সেই আতঙ্কের মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন৷ ‘‘বাইরে গেলে যে ভয় হয়, বুদ্ধিতে তার ব্যাখ্যা চলে না,’’ বলেন মালিক৷
ছবি: Shehzil Malik
প্রকাশ্য স্থানে নারী (২)
শুধু পাকিস্তানি বা মহিলা বলে পিছিয়ে থাকতে রাজি নন মালিক৷ ‘‘বেঁচে থাকার জন্য তো আমাদের এইটুকুই সময় আছে৷ জীবন বড় ছোট আর বাড়িতে বদ্ধ থাকার জন্য বাইরের পৃথিবীটা বড়ই সুন্দর – নিজেকে সেই ম্যাজিক থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়৷ আমি আমার বরাদ্দ মুহূর্তগুলো মুক্ত সূর্যালোকে কাটাতে চাই৷’’
ছবি: Shehzil Malik
কালো যদি মন্দ...
বহু পাকিস্তানির কাছে কালো হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক৷ কিশোর বয়সে শেহজিলও তাঁর ফর্সা সহপাঠীদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে দুঃখ পেয়েছেন, এমনকি ফর্সা হবার ক্রিমও ব্যবহার করেছেন, যার বিষক্রিয়া অনেক পরে জানা যায়৷ নানা দেশ থেকে আসা শক্তিশালী মহিলাদের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ঘটে কলেজে ওঠার পর – তখন তিনি বোঝেন যে, সৌন্দর্যের কোনো বিশেষ আকার, গড়ন কিংবা গাত্রবর্ণ নেই৷
ছবি: Shehzil Malik
দেশি ওয়ান্ডার উওম্যান
আমরা যা, অথবা আমরা যা হতে চাই, তার ছবি আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে ধারণা পাল্টে দেয়৷ শেহজিল মালিক বলেন, তিনি যদি বড় হওয়ার সময় সাহসী অ-শ্বেতকায় মহিলাদের আদর্শ হিসেবে পেতেন, তাহলে তিনি অনেক আগেই উপলব্ধি করতেন যে, তাঁর মধ্যে অনেক বেশি সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে৷ ‘‘কোনো কালো, স্বাধীনচেতা সুপারহিরো মহিলাকে দেখে বড় না হলে, একটি মেয়ে জানবে কী করে, তার পক্ষে কী করা সম্ভব?’’
ছবি: Shehzil Malik
হিজাব পরা বাইকার গার্ল
মালিকের পাড়াতেই একটি মেয়ে মোটর সাইকেল চালানো শিখছিল৷ সে-ই হলো এই বাইকার গার্ল-এর প্রেরণা৷ ছবিটি ১১ ফুট অবধি বাড়িয়ে লাহোরের একটি দেয়ালে সেঁটে দেওয়া হয়৷ প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা দেখার আগেই – অর্থাৎ সেদিন রাত্রেই পোস্টারটি উধাও হয়ে যায়৷ পাকিস্তানে স্ট্রিট আর্টে ও মহিলাদের যে কিভাবে দেখা হয়, ঘটনাটি তার একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন শেহজিল৷
ছবি: Shehzil Malik
বইয়ের পোকা
ছবিটি মালিকের বিশেষ পছন্দের, কেননা, এটা তাঁর ছোটবোনের ছবি, যাকে মালিক জ্ঞান, মমতা ও প্রেরণার উৎস বলে গণ্য করেন৷ মালিকের ভাষায়, এই ছবি হলো ‘‘যেসব মহিলা পড়তে পারেন, যারা আমাদের জ্ঞান বাড়ান ও আমাদের শিক্ষা দেন,’’ তাদের প্রতি শ্রদ্ধার্পণ৷
ছবি: Shehzil Malik
নারী হবার কোনো বাঁধা পথ বা পন্থা নেই
‘‘তা সত্ত্বেও, নারীদেহ রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে,’’ বলেন শেহজিল৷ ফ্রান্সে মুসলিম মহিলাদের বুর্কিনি সাঁতারের পোশাক পরা নিষিদ্ধ হবার পর তিনি এই ছবিটি আঁকেন৷ ‘‘আমি যখন আমার হিজাব পরা বন্ধুদের দেখি, তখন আমি এমন সব মহিলাদের দেখি, যারা পুরোমাত্রায় নিজেদের সম্পর্কে সচেতন ও তার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন – অথচ (তারা) আমার ভিন্নমত সম্পর্কেও উদার,’’ বলেন শেহজিল মালিক৷
ছবি: Shehzil Malik
এগিয়ে এসো!
‘উওমেন ইন পাবলিক স্পেসেস’ প্রকল্পটির পর শেহজিলের পরবর্তী প্রকল্প হলো আঁকা ছবি ও ফটোগ্রাফির এক সংমিশ্রণ: ‘স্টেপ আউট!’ এ পর্যায়ের ছবি ও ফটোগুলিতে দেখা যাচ্ছে, মহিলারা কিভাবে শহর দখল করছেন৷ ছবির মডেল হলেন ইমান সুলেমান৷ ছবিটি তোলা হয়েছে শেহজিলের নারীবাদী ফ্যাশনের পোশাক-আশাকের জন্য, জেনারেশন নামের এক ক্লোদিং রিটেইলারের সহযোগিতায় যা তৈরি হচ্ছে৷