বিজেপির অন্দরে ফাটল
৪ জুন ২০১৩আগামী বছর সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তাই নিয়ে দলের অন্দর মহলে চলেছে ঠান্ডা লড়াই৷ সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে এক জনসভায় দলের প্রবীণতম নেতা লালকৃষ্ণ আডবানি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর ওপরে স্থান দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহানকে৷ দু'জনের মধ্যে তুলনা টেনে তিনি বলেন, গুজরাটের উন্নয়নে মোদী ভালো কাজ করেছেন সন্দেহ নেই, কিন্তু ২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান রাজ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণে যে সাফল্য পেয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়৷
আডবানির এই মন্তব্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক মহলে৷ এই তুলনার জেরে বিজেপির মোদী সমর্থক ও বিরোধী গোষ্ঠীর বিভাজন একেবারে সামনে এসে পড়েছে৷ কংগ্রেস পার্টি যাকে কটাক্ষ করে বলেছে ‘‘গৃহযুদ্ধ''৷ মোদী বনাম চৌহান৷ বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং বনাম বিজেপির সংসদীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদী আরএসএস বনাম বাজেপি৷ মোদীর পক্ষে সওয়াল করে দলের সভাপতি রাজনাথ সিং বলেছেন, মোদী এখন দেশের সবথেকে জনপ্রিয় নেতা৷
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীকে আডবানি গোষ্ঠীর না-পসন্দ কেন? স্মরণ করা যেতে পারে, ৯০-এর দশকে দলের দিশা নির্দেশে সবাই ছুটে যেতেন আডবানির কাছে৷ সেই আডবানির অবস্থা এখন মহাভারতের ধৃতরাষ্ট্রের মতো৷ দলের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ শিথিল৷ আডবানিকে অপাংক্তেয় করে মোদী তাঁর নিজস্ব জনপ্রিয়তায় সওয়ার হয়ে আলাদা ‘স্ট্র্যাটিজি’ নিয়ে চলেছেন৷ আমূল পরিবর্তনের হাওয়া তুলেছেন৷ পুরো রাজনৈতিক সিস্টেমের চেহারাটাই চাইছেন পালটে দিতে৷ চাইছেন ন-মো অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদীর নীতিতে দেশে তুফান তুলে ভোটব্যাংক ছিনিয়ে নিতে৷
অথচ এই আডবানি শূন্য থেকে দলকে তুলে এনেছেন আজকের অবস্থায়৷ ইমারজেন্সি-পরবর্তীকালে কংগ্রেস বিরোধীতাকে কাজে লাগিয়ে সংসদের ১৫০টি আসন এনেছিলেন বিজেপির ঝুলিতে, ১৯৮৪ সালে যা ছিল মাত্র দুটি আসন৷ কিন্তু বারবি মসজিদ ভাঙায় সংখ্যালঘু ভোটে ঘা পড়ে৷ তাই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন আডবানি নয়, দলের মধ্যপন্থি মুখ অটলবিহারি বাজপেয়ী৷
পাশাপাশি ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার মুখ হিসেবে মোদী দলের ভেতরে বাইরে অচ্ছুৎ হয়ে থাকেন৷ সেই তকমাটা ঝেড়ে ফেলতে মোদী শুরু করেছেন উন্নয়ন ও সুশাসনের স্লোগান৷ পাল্টা চাল চালছেন আডবানি৷ প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি নিতীন গডকড়িকে দলের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান হবার প্রস্তাব দিয়ে মোদী হাওয়াকে আটকাতে৷ অথচ এই আডবানি কিন্তু নীতীনকে দলের সভাপতির পদ ছাড়তে বলেছিলেন৷ আডবানির রাজনৈতিক অবস্থানকে ভূমিগত সমর্থন দিতে পাশে এনেছেন উমা ভারতীর মতো কিছু নেতানেত্রীকে৷
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গোয়ায় শুরু হতে যাচ্ছে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক৷ সেখানেই স্থির হবে আগামী নির্বাচনে আডবানির ভূমিকা৷ তিনি ইতিহাসের ফুটনোট হয়ে থাকবেন নাকি ফিনিক্সের মতো আবার জেগে উঠবেন – সেটাই এখন দেখার বিষয়!