প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে নতুন বিতর্ক
২০ জুন ২০১৩এ মন্তব্যের কারণ ব্যাখা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে সবারই অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ বিরোধী দলীয় নেত্রীর দুই ছেলেকে উত্তমমধ্যম দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷ বিরোধী দলীয় নেত্রীকেও বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা হয়েছে৷ তাই তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু থেকে ফিরে আসতে বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস হোসাইন ডয়চে ভেলেকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাংলাদেশে কোনো নতুন বিষয় নয়৷ এর আগে একাধিকবার তত্ত্বাবধায়ক সরকরের অধিনে জতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে৷ যে নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে৷ আগে সংবিধানে এই পদ্ধতি ছিল৷ পঞ্চদশ সংশোধীতে সেটা তুলে দেয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, সংশোধনীতে তুলে দেয়া মানে এই নয় যে, আর ফিরে আসতে পারবে না৷ নতুন করে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূনবহাল করলেই এই মুহূর্তে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি৷
অধ্যাপক ফেরদৌস হোসাইন বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হলে সাধারণ মানুষ সরকারি দলকেই দায়ী করে৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরে এলে নির্বাচনই হবে না – প্রধানমন্ত্রীর এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এটা নতুন এক বিতর্কই শুধু তৈরি করবে৷ এতে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না৷ তাই প্রধান দুই দলকে নিজেদের অবস্থানে গো ধরে বসে না থেকে সংকট উত্তরণে সমঝোতায় আসার আহবান জানান এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী৷
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘নির্বাচন দেয়া হবে না – এই কথা বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল৷'' তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান যেভাবে সংশোধন করেছেন সেভাবেই তারা কথা বলছেন৷ সংবিধান সংশোধন করে লেখা হয়েছে, নির্বাচন না হলেও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন৷ এটা কি রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল না?''
তাঁর কথায়, ‘‘সিটি নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে৷'' সরকার পক্ষের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেশের মানুষকে এত বোকা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ আপনারা ভাবছেন বিরোধীদলকে কোনো মতে নির্বাচনে নিয়ে আসবেন৷ এই চিন্তা কখনও করবেন না৷ এটা অলীক চিন্তা৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিরোধীদল কোনো নির্বাচনে যাবে না৷'' নেতাকর্মীদের সংগ্রামের মাধ্যমে দাবি আদায়ের আহ্বান জানান তিনি৷
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এককালে তাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিল সুশীল সমাজ৷ সেই সুশীল সমাজকেও কটুক্তি করতে তারা দ্বিধা করছে না৷ আসলে তারা একেবারে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ সত্য কথা লেখা সত্যিকার চিত্র তুলে ধরা তারা কখনও সহ্য করতে পারে না৷''
এদিকে বুধবারও সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে আর নড়ানো যাবে না৷ তারা নির্বাচন দেবে না৷ তিনি বলেন, মাইনাস টু ফর্মুলা যারা করেছিলেন, তারা এখনো আছেন৷ তারা তত্পর৷ তারা সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছেন৷ ১/১১-এর সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার জন্য তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তিনি বলেন, সে সময় তিনিই শুধু প্রতিবাদ করেছিলেন৷ বিরোধী দলের নেত্রী করেননি৷