1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোন পথে যাবে আন্দোলন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ এপ্রিল ২০১৮

সরকারের প্রতিশ্রুতির পর আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা এলেও দুই মন্ত্রীর সমন্বয়হীন বক্তব্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি করে৷ নতুন করে শুরু হয় আন্দোলন৷ তবে নতুন মোড় নিয়েছে সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য৷

Sheikh Hasina
ছবি: Reuters

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার বৈঠক করেন৷ সেই বেঠকে জানানো হয়, সরকার এক মাসের মধ্যে (৭ মে) পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে কোটা সংস্কারে ব্যবস্থা নেবে৷ সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের নেতারা তাই আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন৷ তবে একাংশ তা প্রত্যাক্ষাণ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে৷

কিন্তু সোমবার রাতেই কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারের আলোচনায়  কোটা সংস্কার নিয়ে বলেন, ‘‘পরিষ্কার বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে৷ রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেবো৷ তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনো রাগ নেই৷ মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না৷''

মজিবর রহমান

This browser does not support the audio element.

পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সচিবালয়ে বলেন,‘‘সরকারি চাকরিতে কোটা অবশ্যই থাকবে, তবে এটি সংস্কার করা উচিত৷ কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়৷ তারপরেও আমি প্রধামন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছি এটিকে সংস্কার করার জন্যে৷ বাজেটের পর ৫৬ শতাংশর কোটা অবশ্যই সংস্কার করা হবে৷ কারণ, কোটায় প্রার্থী পাওয়া যায় না৷''

প্রধানত এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং  আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হন৷ তাঁরা এক মাসের সময় নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন এবং সরকারের সঙ্গে সমঝোতার বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়৷ মঙ্গলবার সকালে মতিয়া চৌধুরীকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান৷ এরমধ্যে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যাও আশা করেন তাঁরা৷

তাঁদের বেঁধে দেয়া সময়ে তাঁরা কোনো জবাব না পেয়ে মঙ্গলবার আবার ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নেমে যান৷তাঁরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া আন্দেলন চালিয়ে যাবেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে৷ সোমবার সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশ্বস্ত হয়েছিল৷ তারা সরকারের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে যে, সরকার কোটা সংস্কারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে৷ কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কথায় তারা বিভ্রান্ত হয়৷ তারা সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে৷ সরকারের আসলে নীতি কী, তা তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়৷ আর মতিয়া চৌধুরীর কথায় তারা অপমান বোধ করে৷ তারা মনে করে, তাদের ভিন্নভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এই আন্দোলন একটি সুষ্ঠু সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়ার পরও মন্ত্রীদের এই দায়িত্বহীন বক্তব্য পরিস্থিতি জটিল করেছে৷''

ইমরান এইচ সরকার

This browser does not support the audio element.

সাংস্কৃতিক কর্মী সুমন জাহিদ অবশ্য বলেন, ‘‘মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য খণ্ডিতভাবে বিবেচনাকরা হয়েছে৷ কিছু মিডিয়া খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করায় আন্দোলনকারীরা বিভ্রান্ত হয়েছে৷ কিন্তু অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, তা সরকারের সিদ্ধান্তের বিপরীত৷ ফলে, স্বাভাবিক কারণেই আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷''

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘শুধু এবার না, এর আগেও বিভিন্ন ঘটনায় আমরা দেখেছি মন্ত্রীরা বেফাঁস মন্তব্য করে পরিস্থিতি জটিল করেছেন৷  কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা যৌক্তিক আন্দোলন৷ সরকার সেটা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে সংস্কারের জন্য এক মাস সময়ও নিয়েছে, তারপর দুই মন্ত্রী দায়িত্বহীন কথা বলে আবার ছাত্রদের মাঠে নামতে বাধ্য করেছেন৷''

ইমরান এইচ সরকার নিজেও তার ফেসবুক পোস্টে রোববার রাতে একজন আন্দোলনকারীর মৃত্যুর ভুয়া খবর দিয়েছিলেন৷ সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের খবর দেখে ওই পোস্ট দিয়েছিলাম৷ সেখানে লাইভ অনুষ্ঠানে আন্দেলনের আহ্বায়ক মামুন ওই মৃত্যুর কথা বলেন৷ পরে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চি না হওয়ায় আমি পোস্ট সরিয়ে ফেলি৷'' 

কোটাই থাকবেনা, কোটার দরকার নাই : প্রধানমন্ত্রী

মন্ত্রীদের বক্তব্যে কোটা সংস্কারের আন্দোলন নতুন করে শুরু করার পর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের অপেক্ষায় ছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা৷ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ আওয়ামী লীগের  যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না৷ কোনও কোটারই দরকার নেই৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে৷ এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে৷ কোটা থাকলেই ঝামেলা৷ সুতরাং কোনও কোটারই দরকার নেই৷ কোটা ব্যবস্থা বাদ, এটাই আমার পরিষ্কার কথা৷''

সুমন জাহিদ

This browser does not support the audio element.

এভাবে কোটা বাদ  দেয়ার ঘোষণা দিলেও প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা যাতে অধিকার বঞ্চিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেবেন বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আমরা আলাদাভাবে চাকরির ব্যবস্থা করবো৷''

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হাসান ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘আমরা কাল (বৃহস্পতিবার) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবো৷ রাতে আমাদের অবরোধ থাকবে না৷''তিনি আরো বলেন,‘‘সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য রাতে আমরা ভালোভাবে শুনবো, বিচার-বিশ্লেষণ করবো৷ তাঁর বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য, সেটা বিশ্লেষণ করে আগামীকাল(বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো৷''

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোটা সংস্কার আন্দোলন কোন পথে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ