ইতিমধ্যে মামলার আসামিদের একজন ৪২ বছর বয়সি সাইফুলকে (মূল অপরাধী) গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ অপর আসামি ৪৮ বছরের কবিরাজ (সাহায্যকারী) এখনও মুক্ত৷
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) পূজাকে একটি হলুদের ক্ষেত থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়৷ তার আগের দিন (১৮ অক্টোবর) থেকে সে নিখোঁজ ছিল৷ পূজার বাবা সুবল দাস মামলা করেন ২০ অক্টোবর৷
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল পূজাকে নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘পূজা মা, আমি তোর কাছেই আসবো যদি কোনো কন্যার পিতা হয়ে থাকি...৷'' এরপর আজ ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তাকে দেখেও এসেছেন তিনি৷ ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ পূজার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছে বলে জানান শাকিল৷ ‘‘...আশাবাদী, সুবল দাস সুস্থ মেয়েকে নিয়ে কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরতে পারবে৷ বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা,'' ফেসবুকে লিখেছেন তিনি৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
কিন্তু জনাব শাকিল, বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা বলে ছেড়ে দিলে তো চলবে না৷ ধর্ষকের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ পূজার মতো আর কাউকে যেন এমন নৃশংসতার শিকার হতে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি হিসেবে আপনার ক্ষমতা আছে আপনি এমন ব্যবস্থা চালু করুন যা দেশের সব শিশু ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে৷ আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে মনে হচ্ছে, আপনি নিজে কন্যা সন্তানের পিতা হওয়ায় পূজার বিষয়টি আপনার মনে হয়ত বেশি দাগ কেটেছে৷ আমরা চাই, আপনার এই মনের পরিস্থিতি শুধু পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ুক৷ আমরা চাই আপনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের (প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা) সঙ্গে আজই আলোচনা করে আপনার মেয়ে তথা বাংলাদেশের সব শিশু ও নারীর নিরাপদ জীবন নিশ্চিতের উদ্যোগ নিন৷