প্রধানমন্ত্রী পায়রা উড়িয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করলেন
৬ ডিসেম্বর ২০২২
ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করে আর পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন৷ জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ আর ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা৷
পরে পায়রা অবমুক্ত করে ছাত্রলীগের ৩০ তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা৷ এসময় ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত গাওয়া হয়৷
৩০ তম জাতীয় সম্মেলনের আহ্বায়ক অসীম কুমার বৈদ্য ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম সুমন পরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেন৷
এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব পাবে দেশের সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোরমধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এই সংগঠন৷ ‘সাংগঠনিক নেত্রী' শেখ হাসিনাই পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়৷
এ আয়োজন ঘিরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে উৎসবের আমেজ৷ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে সুবিশাল নৌকার আদলে৷ রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কের পাশে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ছাত্রলীগের পতাকা দিয়েও সাজানো হয়েছে৷
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিটের পাশাপাশি সারা দেশের জেলা মহানগর, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভোর থেকেই দলে দলে জড়ো হন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে৷ তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নাম ও ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড৷
সকালে সেগুনবাগিচা, টিএসসি, রমনা কালী মন্দির গেট, দোয়েল চত্বরেও দেখা যায় আনন্দমুখর পরিবেশ৷ নানা রঙের পোশাক আর টুপি পরে, বাদ্য বাজিয়ে সম্মেলনে আসেন ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ 'ছাত্রলীগের সম্মেলন' সফল হোক সফল হোক' স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা৷ ছাত্রলীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে৷ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয়েছিল ওই সম্মেলন৷
এর আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত করেন শেখ হাসিনা৷
পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা শোভন ও রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷
তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে৷ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য৷
পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের সভাপতি ও সাধারাণ সম্পাদক করা হয়৷ এর আগে সম্মেলনের এক বছর পর ২০১৯ সালের ৩১ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ভালো-মন্দে ছাত্র রাজনীতি
গণতান্ত্রিক সব আন্দোলন, বাংলাদেশ সৃষ্টি, একটি স্বাধীন দেশের বাঁক বদলে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে৷ গৌরবের সেই ধারা কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছে হালের ছাত্র সংগঠনগুলো? ছাত্র রাজনীতির ভালো-মন্দের বয়ান পড়ুন ছবিঘরে৷
ছবি: Journey/S.-M. Gorki
ভাষা আন্দোলন
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছাত্ররা৷ এই আন্দোলন বাঙালি জাতির জীবনে এমনই এক ঘটনা, দাবি পূরণের পরেও যার রেশ থেকে যায়৷ ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার দীক্ষা দেয়; যা থেকে জন্ম নেয় স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলনের পথ৷
ছবি: Journey/R. Hoque
গণঅভ্যুত্থান
১৯৬৯ সালে সব ছাত্রসংগঠন মিলে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে জাতীয় ও সমাজতান্ত্রিক ধারণাপুষ্ট ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে৷ এর ফলে আইয়ুব খানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য করা হয়৷ এরপর এক জনসমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়৷
ছবি: Journey/R. Talukder
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালের ১ মার্চের পর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশ জাতিসত্তার ধারণাগুলো বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়৷ শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষারই বহিঃপ্রকাশ৷ স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি ও আন্দোলন সফল করার ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্র সংগঠন তথা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম৷
ছবি: Journey/R. Talukder
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
১৯৭১ সালের পঁচিশ মার্চ মধ্যরাতে জনগণের উপর পাকবাহিনীর আক্রমণ ৩ মার্চ ছাত্রদের স্বাধীনতা ঘোষণার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে৷ ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল বস্তুত ৩ মার্চ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীনতা ঘোষণারই স্বীকৃতি৷
ছবি: Journey
স্বৈরাচার পতন
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং ১৯৯১ সালে তাঁর পতন ঘটানোর ক্ষেত্রে ছাত্রঐক্য ও শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়৷ ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন ক্ষমতাসীন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের পতন হয়, শুরু হয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নবযাত্রা৷
ছবি: Journey/Y. Saad
ছাত্র বিক্ষোভ
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ হয়৷ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক ও আট শিক্ষার্থী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়র আট শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে এদের মুক্তি দেয়া হয়৷
ছবি: Journey/S.-M. Gorki
সেভেন মার্ডার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাত নেতা খুন হন৷ ওই সময়কার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান এই খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে৷ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে শফিউলের মৃত্যুদণ্ডের রায় হলেও ’৭৫-এর পর জিয়াউর রহমান তাকে বিএনপিতে যোগদানের শর্তে ক্ষমা করে দিয়ে মুক্তি দেন৷
ছবি: Fotolia/Scanrail
সস্ত্রাসে ছাত্র নেতারা
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর ক্যাম্পাসগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়তে থাকে৷ ক্ষমতা ধরে রাখতে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন স্বৈরশাসক এরশাদও৷ এরপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি যখন যে দলটি ক্ষমতায় ছিল ক্যাম্পাসগুলোতে তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়৷
ছবি: bdnews24
রগ কাটা শিবির
ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরের পর বছর রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল৷ ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনীতি করা এই সংগঠনটির নেতারা প্রতিপক্ষের কর্মীদের হাত-পায়ের রগ কেটে দিত, এজন্য এটিকে রগকাটা সংগঠন হিসেবে মনে করেন অনেকেই৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
ছাত্রদলে অছাত্র
বিএনিপির শাসনামলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বার বার দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়ায় ছাত্রদলের নেতারা৷ ভাতৃপ্রতীম ছাত্র শিবিরের সঙ্গেও তাদের সংঘাত-সংঘর্ষ ছিল নিয়মিত ঘটনা৷ ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল টেন্ডারবাজি, ছাত্রী নিপীড়নসহ হাজারো অভিযোগে বিদ্ধ ছিল প্রায় সময়ই৷ অছাত্রদের এই সংগঠনের নেতৃত্বে রাখা এক সময় অঘোষিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল৷
ছবি: Reuters
নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ
টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ৷ এই সময়ে ছাত্রলীগ সারা দেশে তাদের আধিপত্য পুরো প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে৷ প্রতিপক্ষ দূর্বল হয়ে যাওয়ায় নিজেদের মধ্যে বার বার সংঘাতে জড়িয়ে রক্ত ঝরিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা৷ সাধারণ ছাত্ররাও এদের হাতে বলি হয়েছেন অনেকবার৷ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নানা সময়ে শিরোনাম হয়েছে৷ এ বছর চাঁদাবাজীর অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Bdnews24.com
প্রতিবাদী বাম
এক সময় ক্ষমতা, শক্তি, প্রভাব, প্রতিপত্তি আর দাপুটে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো কালের পরিক্রমায় এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত৷ জাতীয় কোনো ইস্যুতে ভয়ে অনেকে চুপ থাকলেও এখনো বেশকিছু বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের অন্তত রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/M. Asad
ক্যাম্পাসে যত খুন
স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন৷ ঢাবিতে ৭৪, রাবিতে ২৯, চবিতে ১৯, জাবিতে সাত, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন৷ আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছে ২৪ জন শিক্ষার্থী৷ নিজ সংগঠনের নেতাকর্মী বা প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে৷