1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখালেন, নাকি দুঃস্বপ্ন

আশীষ চক্রবর্ত্তী৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

যে কোনো সমস্যায় অগতির গতি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ দেশে যেন তিনি ছাড়া হৃদয়বান এবং সদর্থে ক্ষমতাবান কেউ নেই৷ কিন্তু বাল্যবিবাহ এমন এক সমস্যা যা দূর করা শুধু একজন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই নির্ভর করে না৷

Bangladesch Kinderheirat
ছবি: Getty Images/A. Joyce

বাংলাদেশে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত রোগী বা রোগীর স্বজনদের প্রায়ই বলতে দেখি, ‘প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাই'৷ বিএনপি আমলেও এমন হয়েছে৷ তখন সব মুশকিল আসান করার জন্য সবাই খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতেন, এখন সেই জায়গায় শেখ হাসিনা৷ দু'জন অনেক কারণেই দু'রকম, তারপরও তাঁদের কাছে অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশাটা একই থাকে৷

ছোট-বড় অনেক প্রত্যাশা পূরণও করেন তাঁরা৷ কখনো সকরুণ অনুরোধে, কখনো জোরালো সুপারিশে, কখনো বা গনদাবির চাপে৷ ক'দিন আগেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে ‘গরম' করে দিয়েছিলেন দেশ৷ অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের অর্থবোধক, নিরর্থক এবং পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে হাওয়ার ‘গরম' বাড়ছিল৷ একসময় শুরু হলো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা৷ প্রধানমন্ত্রী হস্তপক্ষেপ করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই হাওয়া ঠান্ডা৷ বিজয় মিছিল করতে করতে রাস্তার শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরলেন৷

দেশ থেকে বাল্যবিবাহ দূর করা এত সহজ নয়৷ এমন নয় যে প্রধানমন্ত্রী আজ মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে বলবেন আর কালই দেখা যাবে কচি কচি মেয়েরা বাল্যবিবাহের শঙ্কামুক্ত জীবনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেই আনন্দমিছিল শুরু করেছে৷

দেশের খুব কম মানুষই বোধহয় বাল্যবিবাহকে জেনে-বুঝে মেনে নিয়েছে৷ ‘অশিক্ষা', অসচেতনতা, কুসংস্কার আর দারিদ্র্যের কারণে যাঁরা এই অভিশপ্ত পথে চলছেন, তাঁদের রুখতে অল্পবিস্তর কাজ হচ্ছে বৈকি৷

প্রায় সারা দেশেই চলছে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়াস৷ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হচ্ছে৷ ব্যক্তির আন্তরিক উদ্যোগের নজিরও দেখছি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷

মানবাধিকার কর্মীদের হস্তক্ষেপে কোথাও কোথাও কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে রোধ করা সম্ভব হয়েছে৷

কখনো কখনো এমন বিয়ে করানোয় কাজীর হয়েছে সাজা৷

মানুষের মধ্যে সচেতনতা ধীরে হলেও বাড়ছে৷ নারীকে সম্মানের চোখে দেখার আহ্বান জানিয়ে সময়ের আগে বিয়ের প্রবণতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন তাঁরা৷

এ সব উদ্যোগের কিছু সুফল ইতিমধ্যে চোখে পড়তে শুরু করেছে৷ মাঝে মাঝে যে আমরা একটা-দু'টো গ্রামকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করার খবর পাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এইটুকুও কম কথা নয়৷

তারপরও বাল্যবিবাহ প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না৷ সচেতন জনমানসে তাই হতাশা আছে৷

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই সেদিনও বাংলাদেশেই বাল্যবিবাহের হার বেশি ছিল৷ রাতারাতি নিশ্চয়ই সব বদলে যায়নি, যাবেও না৷

তাই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ বছর সময় নেবেন? শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে দেয়া ভাষণে তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহ দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন৷

ডয়চে ভেলের আশীষ চক্রবর্ত্তীছবি: DW/P. Henriksen

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই আশ্বাসে আমরা খুব আশাবাদী হতে পারছি না৷ দেশের মানুষ প্রাচীন কাল থেকে জেনে আসছে ‘কামান চাইলে পিস্তল পাওয়া যায়'৷ স্বাধীনতার পরের ৪৪ বছরেও বহুবার দেখেছি, নির্বাচনের আগে ভোটপ্রার্থী ৫ বছরের মেয়াদে হাজার রকমের ‘হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা' অঙ্গীকার করেন, মেয়াদ শেষে বাকির খাতা প্রায় পূর্ণ থাকে৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি আগে সম্ভব হয়, কোনো বালক বা বালিকার জীবনবৃত্তান্তে বৈবাহিক অবস্থার জায়গায় আর ‘বিবাহিত' লিখতে হবে না – এমন সুদিন দেখতে কেন আমাদের এতকাল অপেক্ষায় থাকতে হবে?

জাতিকে স্বাভাবিক স্বপ্ন দেখান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী৷ ২০৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকা কোনো স্বপ্ন কিনা তা বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছে৷ আপনার এই আশ্বাস দুঃস্বপ্নময় আগামীর ইঙ্গিত হয়ে গেল না তো!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ