সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় জড়িত বিএনপির সাবেক এক সাংসদসহ ৫০ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷
বিজ্ঞাপন
দেড় যুগ আগের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার এই ঘটনায় সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং বিএনপিকর্মী আরিফুর রহমান ও রিপনকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷
কলারোয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের বাচ্চুকে নয় বছর এবং বাকি ৪৬ জনকে দুই থেকে সাত বছরের সাজা দিয়েছে আদালত৷ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারক হাকিম হুমায়ুন কবীর জনাকীর্ণ এজলাসে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন৷ কারাগারে থাকা আসামিদের ৩৪ জন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ বাকি ১৬ জনকে পলাতক দেখিয়ে মামলার বিচার কাজ চলে, দণ্ডিত সকলেই বিএনপি নেতাকর্মী৷
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী এবং আসামি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহনাজ পারভিন বকুল বলেন, ‘‘এটা সাজানো, আমরা হাই কোর্টে যাব৷ আমরা সেখানে নিশ্চয় ন্যায্য বিচার পাব৷'' রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, ‘‘আমরা সন্তুষ্টও না, অসন্তুষ্টও না৷ রায় পর্যবেক্ষণ করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷''
হাই কোর্ট গতবছর অক্টোবরে তিন মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিলে নভেম্বরে ফের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়৷
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আদালত এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ রায়ের পর আদালতের বাইরে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা৷
বঙ্গবন্ধু হত্যা ও বিচারের আদ্যোপান্ত
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক এবং অন্ধকারতম অধ্যায়৷ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং বিচার না করার প্রত্যক্ষ চেষ্টাকে ব্যর্থ করে বিচারের বিস্তারিত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24
সেদিনের ঘটনা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে একদল বিপথগামী সেনাসদস্য হত্যা করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে৷
ছবি: bdnews24
নিহত পরিবারের সদস্য ও অন্য যারা
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা, বঙ্গবন্ধুর শিশু সন্তান শেখ রাসেল, আরো দুই ছেলে শেখ কামাল, শেখ কামাল এবং তাদের স্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল (ব্রিগেডিয়ার পদে মরণোত্তর পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এবং সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও সেদিন হত্যা করা হয়৷
ছবি: AP
শেখ ফজলুল হক মণি ও সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা
একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে৷ এরপর বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা চালিয়ে সেরনিয়াবাত, তার ছেলে, মেয়ে, নাতি, বড় ভাইয়ের ছেলে এবং এক আত্মীয়কে হত্যা করে৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় রক্ষা পান৷
ছবি: bdnews24.com
বিচার রোধের প্রক্রিয়া
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দু মাস ২২ দিনের (১৫ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষায় ‘ইনডেমনিটি অরডিন্যান্স’ জারি করেন৷ ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান একে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন৷
ছবি: imago/Belga
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
প্রথমে জার্মানি এবং তারপর ভারতে দীর্ঘ নির্বাসনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা৷ দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন৷
ছবি: DW/M.Rahman
২১ বছর পর...
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও তাহের উদ্দীন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ওই বছরই বঙ্গবন্ধুর পি এ এএফএম মোহিতুল ইসলাম ১৫ আগস্টের ঘটনায় থানায় এফআইআর করেন৷
ইনডেমনিটি আইন বাতিল ও বিচার শুরু
১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়৷ ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে ২০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল এবং ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়৷
নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার পর ২০০০ সালে হাইকোর্ট বিভক্ত রায় দেন৷ পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে৷ বিএনপি-জামাত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার কাজ বন্ধ হয়ে যায়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
৩৪ বছর পর রায়
২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হলে আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন৷ ১৯ তারিখ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল আবেদন খারিজ করে দেন৷
ছবি: bdnews24
জাতির দায়মুক্তি
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি পাঁচ আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) এবং মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)-এর ফাঁসি কার্যকর হয়৷ ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১২ এপ্রিল তারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Bdnews24.com
পলাতক যারা
খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এএম রাশেদ চৌধুরী এবং এসএইচ নূর চৌধুরী এখনও পলাতক৷
ছবি: Bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
যাঘটেছিল
২০০২ সালে এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ‘ধর্ষণের শিকার' হলে ওই বছর ৩০ অগাস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাকে দেখে মাগুরায় যাওয়ার পথে তার গাড়িবহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে৷ কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়৷ শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা সেদিন আহত হন৷ হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনের পৃথক ধারায় দেওয়া তিনটি অভিযোগপত্রের মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় হল বৃহস্পতিবার৷ বাকি দুটি মামলা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন৷