বিশ্বকাপ শুরুর আগে অনেক কথা হয়েছে রাশিয়া এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনকে নিয়ে৷ এক মাসেরও বেশি সময় রাশিয়ায় থেকে বিশ্বকাপ কাভার করে নোমান মোহাম্মদ মনে করছেন, বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদই প্রাপ্য রাশিয়া এবং পুটিনের৷
বিজ্ঞাপন
সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন জারদের সাম্রাজ্য৷ তাঁদের বিপক্ষে সংগঠিত হচ্ছে বিপ্লবীরা৷ জারদের বিপক্ষে, বিপ্লবীদের পক্ষে অবস্থান নেন লেখক মাক্সিম গোর্কি৷ এজন্য কত বার গ্রেফতার হতে হয়েছে! কত রাত কাটাতে হয়েছে জেলে! এ সূত্রে আবার তাঁর বন্ধুত্ব তৈরি হয় রুশ বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের সঙ্গে৷ ১৯১৭ সালের সফল রুশ বিপ্লবের পর জয়টা অন্য সবার মতো ছিল গোর্কিরও৷
অথচ দ্রুতই লেনিনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তাঁর৷ জারদের পতনের পর যেভাবে রাষ্ট্র চলছিল, তা পছন্দ হয়নি এই লেখকের৷ লেখায়-কথায়, আড্ডা-আলোচনায় আবারও শুরু গোর্কির প্রবল সমালোচনা৷ সরকার তা মেনে নেবে কেন! তাই এক রকম স্বেচ্ছ্বা নির্বাসনে চলে যান এই লেখক৷ বসবাস করতে শুরু করেন জার্মানি এবং বেশিরভাগ সময় ইতালিতে৷ লেনিনের মৃত্যুর পর জোসেফ স্টালিন ক্ষমতা নেবার পরও দেশে ফেরেননি গোর্কি৷ অবশেষে ১৯৩২ সালে নিজ উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে ‘মা'-এর লেখককে দেশে ফিরিয়ে আনেন স্টালিন৷ ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির দেশ থেকে বিখ্যাত এই লেখকের প্রত্যাবর্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য ছিল বিরাট এক প্রোগাগান্ডা জয়৷
এবারের বিশ্বকাপের যা কিছু সেরা
আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় একটি মাত্র দল৷ সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও জোটে একজনের ভাগ্যে৷ কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরে এর বাইরেও তো স্মরণীয় অনেক কিছু থাকে৷ সেরকম বিষয়গুলো নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
বেশি গোল যে দলের
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল কোন দল করেছে, বলুন তো? বেলজিয়াম৷ হ্যাঁ, সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার আগে ১৪ গোল করে তারা৷ তারপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারানোয় সংখ্যাটি বেড়ে হয়ে যায় ১৬৷ এত গোল আর কোনো দল করতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দল
কোন দল কতটা আক্রমণাত্মক তা নির্ধারণের একটাই উপায় আর তা হলো কোন দল কত বেশি আক্রমণ করেছে সে হিসেবটা দেখা৷ সেই হিসেবে ব্রাজিলই ছিল সবচেয়ে এগিয়ে৷ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে ২৯২টি আক্রমণ শানিয়েছে নেইমারের দল৷ তবে পরে ক্রোয়েশিয়া পেছনে ফেলে তাদের৷ ফাইনাল শেষে, অর্থাৎ ব্রাজিলের চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলায় ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ সংখ্যায় দাঁড়ায় ৩২২৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সবচেয়ে বেশি পাস
এখানে কারা এগিয়ে ইংল্যান্ড৷ মোট সাতটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৩৩৬টি পাস দিয়েছে তারা৷
ছবি: Reuters/L. Smith
সেরা গোলরক্ষক?
এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক কে? অনেকের নামই হয়ত উঠে আসবে৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি গোল বাঁচানো যদি মানদণ্ড হয়, তাহলে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন মেক্সিকোর গুইলেরমো ওচোয়া৷ দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত চার ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৫টি গোল বাঁচিয়ৈছিলেন তিনি৷ তবে পরে বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্তোই তাঁকেও ছাড়িয়ে যান৷ ৭ ম্যাচে তিনি বাঁচিয়েছেন ২৭টি গোল৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়
নিন্দুকেরা তাঁর মাঠে গড়াগড়ি দেখতে দেখতেই হয়রান, অথচ পরিসংখ্যান বলছে নেইমার জুনিয়রই ছিলেন এবারে বিশ্বকাপের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ফরোয়ার্ড৷ ব্রাজিল তো কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে৷ তাই মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন নেইমার৷ ওই পাঁচ ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছেন মোট ২৭টি৷ এত শট আর কোনো ফরোয়ার্ড নিতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
সবচেয়ে পরিশ্রমী পেরিসিচ
ক্রোয়েশিয়া যে এবার বিশ্বকাপ মাতালো, তার মূল কৃতিত্ব যদি একজন খেলোয়াড়কে দিতে চান, কার কথা বলবেন আপনি? নিশ্চয়ই লুকা মদ্রিচ! সেমিফাইনাল পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ার ছয়টি ম্যাচে সব মিলিয়ে ৬৩ কিলোমিটার দৌড়েছেন ৩৩ বছর বয়সি এই প্লে-মেকার৷ তবে ফাইনাল শেষে দেখা যায় তাঁকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন পেরিসিচ৷ ৭ ম্যাচে ৭২ কিলোমিটার দৌড়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সেরা রক্ষণভাগ
বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২টি দলের রক্ষণভাগের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রোয়েশিয়াই সেরা৷ ফাইনাল পর্যন্ত সাতটি ম্যাচে মোট ৩০১টি ক্লিয়ারেন্স, ট্যাকল এবং সেভ করেছে ক্রোয়াট ডিফেন্ডাররা৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
রামোসকে মনে রাখতে হবে যে কারণে
স্পেনের রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী সার্হিয়ো রামোস৷ তবে এবার শুধু রক্ষণের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন না রেয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক৷ আক্রমণ রচনাতেও ভূমিকা রেখেছেন অনেক৷ তাই বিশ্বকাপের অন্য সব খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি পাস দিয়েছেন তিনি৷ এ আসরে মোট ৪৮৫টি পাস দিয়েছেন রামোস৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
বেশি গোলের ম্যাচ
এবারের বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছিল সৌদি আরবের বিপক্ষে রাশিয়ার ৫-০ গোলের জয় দিয়ে৷ স্পেন-পর্তুগাল ৩-৩ গোলে ড্র ম্যাচেও দেখা গেছে গোলের ছড়াছড়ি৷ পরে দু’টি ম্যাচে আরো বেশি গোল হয়েছিল৷ বেলজিয়াম-টিউনিশিয়া (৫-২) ও ইংল্যান্ড-পানামা (৬-১) ম্যাচে সাতটি করে গোল দেখা গেছে৷ ওই দু’টিই এবারের আসরের সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচ৷
ছবি: Reuters/M. Childs
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি কার্ড
ম্যাচে খুব বেশি উত্তেজনা থাকলে বা লড়াইটা খুব জমজমাট হলেই সাধারণত খেলোয়াড়রা মেজাজ হারান৷ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তখন কঠোর হতে হয় রেফারিকে৷ তখন কার্ডও দেখাতে হয় বেশি৷ কিন্তু বেলজিয়াম বনাম পানামা ম্যাচটিতে সে অর্থে কোনো উত্তেজনাই ছিল না৷ তারপরও ম্যাচে মোট আটটি কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি৷ এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি কার্ড দেখানো হয়েছে সেই ম্যাচেই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস
বেশি পাসের প্রসঙ্গ এলে স্পেনের নাম আসবেই৷ এই বিশ্বকাপে যে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস হয়েছে, সেখানেও স্পেন আছে৷ কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রাশিয়া৷ হ্যাঁ, স্পেন-রাশিয়া ম্যাচেই হয়েছিল সবচেয়ে বেশি পাস৷ সেই ম্যাচে দু’দলের খেলোয়াড়রা মোট ১২৩৫টি পাস দিয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
11 ছবি1 | 11
২০১৮ বিশ্বকাপের আলোচনায় লেখক গোর্কির গল্প কেন? কারণ, এই বিশ্বকাপের আয়োজনকে ধরা হচ্ছিলো রুশ প্রোপাগান্ডা যন্ত্রের এক প্রজেক্ট৷ ইংল্যান্ডের মতো দেশকে টপকে যেভাবে রাশিয়া আয়োজক হয়েছে, তাতে গড়বড়ের সন্দেহ অনেকের৷ এই বিশ্বকাপ দিয়ে বাকি বিশ্বের কাছে রাশিয়ার ‘ইমেজ' পুণরুদ্ধারের চেষ্টা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন করছেন বলেও সংশয় অনেকের৷
এসব রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই ফুটবলপ্রেমীদের৷ বিশ্ব রাজনীতির ঘুঁটিখেলায় রাশিয়ার প্রত্যাবর্তন ঘটল কিনা, তাতে তাঁদের কী যায়-আসে! সিরিয়া-ইউক্রেনের রক্তাক্ত সমস্যা উতরানোয় বিশ্বকাপ ফুটবলের রঙিন চশমা পরিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা, তা নিয়েও ভাবনা নেই৷ পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা চেয়েছিলেন নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, নির্ঝঞ্চাট বিশ্বকাপ৷ সেই আয়োজনে রাশিয়া একশ'তে একশ'ই পাবে৷
বাকি বিশ্ব থেকে রাশিয়া বরাবর আলাদা৷ জার আমলে যেমন, সমাজতান্ত্রিক জমানায় তেমন, আবার হালফিলেও তাই৷ বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করতে আসা দর্শকদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কার জায়গা ছিল এটি৷ কিভাবে রুশরা গ্রহণ করবে তাঁদের! সাংবাদিক হিসেবে বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা এই আমার মনেও এই শঙ্কার চোরাস্রোত ছিল৷ টুর্নামেন্ট শুরুর চার দিন আগে এসেছি; প্রথম কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় এখানকার লোকদের একটু গুটিয়ে থাকতেই দেখেছি যেন৷ কিন্তু ১৪ জুন যেই না উদ্বোধনের রং ছড়ালো, রুশরা দু'হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানাতে শুরু করে বাকি বিশ্বকে৷ এটি যে রুশদের জাতীয় মর্যাদার ব্যাপার!
বিশ্বকাপ কাভার করার জন্য ফিফা থেকে আমাদের দেওয়া হয়েছে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড৷ বাংলাদেশের রুশ দূতাবাসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে তা দিয়ে রাশিয়ার ভিসা পেতে সমস্যা হয়নি৷ গণমাধ্যম কর্মীদের তো তবু ভিসা নিতে হয়েছে; সমর্থকদের ওসবেরও বালাই নেই৷ ওয়েবসাইটে ঢুকে কেবল ‘ফ্যান আইডি' করলে সেটিই রাশিয়া প্রবেশের ভিসা৷ পুরো বিশ্বের জন্য এমন হাট করে দরজা খুলে রাখার উদাহরণ দেখিয়েছে আর কোনো দেশ?
রাশিয়ায় গিয়ে বিপদে নাইজেরীয়রা
01:52
বিশাল দেশ রাশিয়া৷ পৃথিবীর ছয় ভাগের একভাগ স্থল নিয়ে এর রাজসিক অবস্থান৷ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১১ শহরে হচ্ছে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো৷ সবচেয়ে পশ্চিমের শহর কালিনিনগ্রাদ থেকে সবচেয়ে পুবের শহর ইয়েকাতেরিনবার্গের দূরত্ব মস্কো থেকে লন্ডনের দূরত্বের চেয়েও বেশি৷ ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৩৬ ঘন্টা৷ এক ভেনু্ থেকে আরেক ভেনু্তে যাতায়াতে তাই ছিল বিস্তর হ্যাপার শঙ্কা! টিকেট পাওয়া যাবে কিনা, পেলেও দাম কত না জানি চড়বে! ফুটবল সমর্থকদের সে ভয়ও তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন আয়োজকরা৷ ওই ‘ফ্যান আইডি' দিয়ে দিব্যি বিনা পয়সায় ট্রেনে এক শহর থেকে অন্য শহরে গিয়েছেন তাঁরা৷ চাট্টিখানি ব্যাপার নয় তা৷ আবার শহরের ভেতরেও বিনা মূল্যে যাতায়াতের পাস ফ্যান আইডি৷ সেটি অবশ্য কেবল ম্যাচের দিন নির্দিষ্ট শহরের জন্য৷ এতটাও কোন দেশ করেছে কবে!
নিরাপত্তা নিয়ে মনের ভেতর খচখচানি ছিল সমর্থকদের৷ আমারও৷ কিন্তু সেটি দূর হতেও সময় লাগেনি৷ মস্কোর লুজনিকি বা স্পার্তাক স্টেডিয়ামে কাজ শেষ করে মেট্রোতে করে নেমেছি ‘ভেদেনখা' স্টেশনে৷ প্রতি দিনই রাত ১০-১১ টা; কোনো কোনো দিন একটা-দুটো বেজে যায় পর্যন্ত৷ ততক্ষণে বাস-ট্রামের সংখ্যা কমে যায়; অপেক্ষা করতে হয় বেশ কিছুক্ষণ৷ সারা দিনের ধকলের পর কে করে তা! বাংলাদেশ থেকে আসা আমরা দুজন বা চারজন গণমাধ্যমকর্মী হোটেলের উদ্দেশ্যে শুরু করি মিনিট বিশেকের হাঁটা৷ সুনসান রাস্তায়; নির্জন পার্কের ভেতর দিয়ে৷ প্রথম প্রথম একটু যে গা ছমছম করতো না, তা নয়৷ কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে যেতে সময় লাগেনি৷ সেন্ট পিটার্সবার্গ, কাজান, সামারার মতো শহরগুলোয়ও কাজ শেষ করে অনেকবার ফিরেছি মধ্যরাতে৷ নিরাপত্তাহীনতা বোধ হয়নি কখনো৷ পৃথিবীর কোনো প্রান্ত থেকে আসা কোনো ফুটবল সমর্থকের কোনো সমস্যা হয়েছে বলেও শুনিনি৷ এটিও বিশ্বকাপ আয়োজনে রাশিয়ার বড় সাফল্য৷
বর্ণবাদ সমস্যায় ভুগছে রাশিয়া অনেককাল৷ ফুটবলও এর বাইরে নয়৷ এখানকার স্টেডিয়ামে কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে বানরের চিত্কার করার ঘটনা ঘটেছে; তাঁদের দিকে কলা ছুঁড়ে দেবার মতো দৃশ্যও দেখা গেছে আগে৷ আইভরি কোস্টের ফুটবলার ইয়া ইয়া তোরে তো এ কারণে কৃষ্ণাঙ্গরা ২০১৮ বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছিলেন৷ বর্ণবাদের সেই কালো ছায়া কোনো স্টেডিয়ামের কোনো গ্যালারিতে দেখিনি৷ নিজেও অমন কিছুর মুখোমুখি হইনি৷ বিশ্বকাপের রংয়ে মিলে যায় তাবত্ মানুষের যাবতীয় চামড়ার রঙ৷ কালো-বাদামী-সাদার এক পোস্টার হয়ে থাকে তাই রাশিয়া বিশ্বকাপ৷
সমস্যা বলতে ছিল এক ভাষার সমস্যা৷ রয়েছে এখনো৷ বেশিরভাগ রুশ ইংরেজি বোঝেন না৷ তাই বলে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে গেছেন এমনটা ঘটেনি৷ পাশে থাকা ইংরেজি জানা কারো কাছে নিয়ে গেছেন হয়তো, নয়তো মোবাইল অ্যাপসে রুশ-ইংরেজির অনুবাদ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা৷ রুশদের এই আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ না জানিয়ে পারা যায় না৷ তাই তো এক মাসের বেশি সময়ে সবচেয়ে বেশি যে শব্দটি উচ্চারণ করেছি, তা হলো ‘স্পাসিভা'৷ অর্থাত্ ধন্যবাদ৷
২০১৮ বিশ্বকাপের সফল আয়োজনের জন্য রাশিয়াকে বিশাল এক ধন্যবাদ৷ এটি যদি রুশ প্রোপাগান্ডা যন্ত্রের এক প্রজেক্ট হয়, তবুও! মাক্সিম গোর্কিকে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরানোর জন্য যেমন ধন্যবাদ প্রাপ্য জোসেফ স্টালিনের; এমন বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ভ্লাদিমির পুটিনেরও সেটি প্রাপ্য৷ স্পাসিভা!
বিশ্বকাপে বেশি গোল করেছেন যাঁরা
বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশি আলোচনায় ছিলেন মেসি, রোনাল্ডো, নেইমাররা৷ তারকাদ্যুতিতে যে অনেক এগিয়ে তাঁরা! কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে তাঁরা থেকে গেলেন নিষ্প্রভ৷ সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল হ্যারি কেন৷ তাঁর পরে কারা?
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
হ্যারি কেন, ৬ গোল
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ‘গোল্ডেন বুট’ পুরস্কার দেয়ার চল শুরু ১৯৮২-র আসর থেকে৷ সেবার সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইটালি৷ আরো অবাক করেছিলেন পাওলো রসি৷ আসর শুরুর আগে যাঁকে কেউ প্রায় চিনতোই না, সেই রসিই পুরস্কারটি জিতেছিলেন প্লাতিনি, জিকো, মারাদোনাদের পেছনে ফেলে৷ এবারের আসরে পানামার বিপক্ষে একটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ৬ গোল করায় ‘গোল্ডেন বুট’ জিতে নিলেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন৷
ছবি: Reuters/C. Barria
গ্রিসমান, ৪ গোল
২০ বছর পর ফ্রান্স আবার চ্যাম্পিয়ন৷ দলকে চ্যাম্পিয়ন করায় গ্রিসমানের অবদান ৪ গোল৷
ছবি: Reuters/A. Vaganov
কিলিয়ান এমবাপে, ৪ গোল
আর্জেন্টিনাকে বলতে গেলে একাই বিদায় করেছেন তিনি৷ ১৯ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ড নিজে করেছেন দুই গোল আর পেনাল্টি আদায় করে আরেকটি গোলেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান৷ ফাইনাল শেষে তাঁর নামের
পাশে লেখা চার গোল৷ এমবাপের মাঝে আগামীর সুপারস্টারকে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
রোমেলু লুকাকু, ৪ গোল
বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লুকাকুও কম যান না৷ ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে ১৫৩ মিনিট খেলে ৫ গোল করেছেন হ্যারি কেন৷ লুকাকু খেলেছেন তার চেয়েও কম, মাত্র ১৪৯ মিনিট৷ ওই সময়েই আদায় করে নিয়েছেন ৪ গোল৷
ছবি: imago/Photonews/Panoramic
ডেনিস চেরিশেভ, ৪ গোল
রাশিয়ার এই মিডফিল্ডারও করেছেন ৪ গোল৷ তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটিই ছিল এ আসরে তাঁর শেষ গোল৷ কারণ, সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় তাঁর দেশ রাশিয়ার জন্য শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপ অভিযান৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, ৪ গোল
পর্তুগালের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর নামের পাশেও লেখা হয়ে যায় ৪ গোল৷ তারপর অবশ্য আর গোলের দেখা পাননি৷ তাঁর বিশ্বকাপ জয়ের বাসনা অপূর্ণ রেখেই উরুগুয়ের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
এডেন হ্যাজার্ড, ৩ গোল
বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড ৭ ম্যাচে করেছেন ৩ গোল৷ দলের সাফল্যে তাঁর অবদান অবশ্য তার চেয়ে অনেক বেশি৷ মধ্যমাঠে দলের মধ্যমণিই ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
মারিও মানসুকিচ, ৩ গোল
ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ডও সাত ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/GES/M. Gilliar
ইভান পেরিসিচ, ৩ গোল
মদ্রিচ, মানসুকিচের মতো ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচের খেলাও এবার সবার নজর কেড়েছে৷ ৭ ম্যাচে তিনিও করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: Reuters/D. Staples
এডিনসন কাভানি, ৩ গোল
প্রথম রাউন্ডে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি৷ তিন ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১ গোল৷ কিন্তু ঠিক সময়েই জ্বলে উঠে উরুগুয়েকে তুলে দিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে৷ কাভানির জোড়া গোলের কারণেই রোনাল্ডোর আশাভঙ্গ হয়েছে, বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
আর্টেম জিয়ুবা, ৩ গোল
রাশিয়ার এই ফরোয়ার্ডে প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন দুই গোল নিয়ে৷ কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে বিদায় করা ম্যাচে এক গোল করায় তিনিও উঠে এসেছে স্বদেশী চেরিশেভের পাশে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ইয়েরি মিনা, ৩ গোল
খামেস রদ্রিগেস দলে থাকতেও এবার কলম্বিয়ার ইয়েরি মিনা নজর কেড়েছেন৷ দ্বিতীয় রাউন্ডে ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি রদ্রিগেস৷ মিনার গোলেই ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিল কলম্বিয়া৷ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় অবশ্য সেখানেই শেষ হয়ে যায় কলম্বিয়া আর মিনার ২০১৮-র বিশ্বকাপ মিশন৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
দিয়েগো কস্তা, ৩ গোল
পর্তুগালের বিপক্ষে তিনি যেন রোনাল্ডোর সঙ্গে গোল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন৷ তবে কস্তা দুই গোল করে থামলেও রোনাল্ডো থেমেছেন শেষ মুহূর্তের গোলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে৷ প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন তিন ম্যাচে তিন গোল নিয়ে৷ তারপরই স্পেনের বিদায় এবং কস্তার জন্যও বিশ্বকাপ আপাতত শেষ৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
জন স্টোনস, ২ গোল
এই তালিকায় জন স্টোনসের নামটা কিন্তু বিস্ময় জাগানোর মতো৷ ডিফেন্ডার হয়েও ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন ২ গোল৷ পানামাকে ৬-১ গোলে হারিয়ে এ আসরে প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি গড়েছে ইংল্যান্ড৷ সেই ম্যাচেই দুই গোল করেছিলেন স্টোনস৷
ছবি: Reuters/M. Childs
ফিলিপে কুটিনিয়ো, ২ গোল
নেইমার যখন গোলের দেখা পাচ্ছেন না, তখনই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন কুটিনিয়ো৷ প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের একমাত্র গোলটি এসেছিল তাঁর পা থেকেই৷ কোস্টারিকা ম্যাচেরও গোল-বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়েছিলেন প্রথম পর্বের পারফর্ম্যান্সে নেইমারসহ অনেক বড় তারকাকেই ছাড়িয়ে যাওয়া এই মিডফিল্ডার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
মোহামেদ সালা, ২ গোল
ভক্তদের অনেক আশা ছিল তাঁর কাছে৷ কিন্তু ইনজুরির কারণে বেশি কিছু করতে পারেননি মিশরের মোহামেদ সালা৷ দুই ম্যাচ খেলে করেছেন দুই গোল৷
ছবি: Reuters/H. Romero
আরো যাঁদের ২ গোল
ব্রাজিলের নেইমার, জাপানের তাকাশি ইনুই, নাইজেরিয়ার আহমেদ মুসা, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ, উরুগুয়ের লুই সুয়ারেজ, সুইডেনের আন্দ্রেয়াস গ্রাঙ্কভিস্ট, আর্জেন্টিনার আগুয়েরো, দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউংমিন, টিউনিশিয়ার খাজরি আর অস্ট্রেলিয়ার জেডিনারও করেছেন দু’টি করে গোল৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
পারলেন না মেসি
এবারও বিশ্বকাপ জেতা হলোনা লিওনেল মেসির৷ দ্বিতীয় রাউন্ডেই আর্জেন্টিনার ৪-৩ গোলে হেরে গেছে ফ্রান্সের কাছে৷ মেসির বিশ্বকাপ মিশনও শেষ হয়েছে মাত্র ১ গোল নিয়ে!
ছবি: Getty Images/G. Rossi
18 ছবি1 | 18
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷