1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুপ্তচর সংস্থা

৬ জুলাই ২০১২

নব্য নাৎসিদের তৎপরতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে জার্মানির অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার ব্যর্থতা, মারাত্মক গাফিলতি ও তথ্য-প্রমাণ লোপের প্রচেষ্টার জেরে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ আমূল সংস্কার বা গোটা সংস্থাটি তুলে দেওয়ার দাবি উঠছে৷

ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb

জার্মানির অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার পোশাকি নাম ‘ফ্যারফাসুংসশুৎস' – অর্থাৎ সংবিধান সুরক্ষা দপ্তর৷ কোনো সরকার, রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শ নয় – জার্মান সংবিধান অনুযায়ী দেশের স্বার্থ রক্ষা করাই অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার দায়িত্ব৷ অন্য অনেক দেশের গুপ্তচর সংস্থার মতো রাষ্ট্রের কাঠামোর প্রায় বাইরে সমান্তরাল অস্তিত্ব নেই জার্মানির অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার৷ রীতিমতো জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ'এর কাছে জবাবদিহি করতে হয় এই সংস্থাকে৷ তার উপর একক কেন্দ্রীয় কাঠামোর বদলে জার্মানির ১৬টি রাজ্যের প্রত্যেকটি শাখা দপ্তরের উপর রাজ্য সরকারের আংশিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷

সম্প্রতি জার্মানিতে নব্য নাৎসিদের এক গোষ্ঠীর তৎপরতা নিয়ে বিশাল বিতর্ক চলছে৷ প্রশ্ন উঠেছে অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার ভূমিকা নিয়ে৷ শুধু গুপ্তচর সংস্থার দুর্বলতা বা গাফিলতির অভিযোগের মধ্যেই বিতর্কটি সীমিত নেই৷ জানা গেছে, নব্য নাৎসিদের সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে গুপ্তচর সংস্থার মধ্যে৷ বিশেষ করে গোপন তথ্য ও তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে গুপ্তচর সংস্থার কর্মীরা নব্য নাৎসিদের গোষ্ঠীর সঙ্গে কতটা জড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা নিজেরা কতটা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ জানা গেছে, ইটালির গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে আগাম খবর জানা সত্ত্বেও জার্মান গুপ্তচররা একটি হামলা আগেভাগে প্রতিহত করার তেমন চেষ্টা করেন নি৷ ২০০৪ সালে কোলোন শহরে সেই হামলায় প্রায় ২২ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল৷ হামলার পরেও যথেষ্ট আন্তরিকভাবে তদন্ত চালান নি গোয়েন্দারা৷ এই কেলেঙ্কারির জের ধরে পদত্যাগ করতে হয়েছে সংস্থার প্রধান হাইনৎস ফ্রম'কে৷ দাবি উঠছে অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার আমূল সংস্কারের৷ স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স পেটার ফ্রিডরিশ জানিয়েছেন, এই সব ত্রুটির ফলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স পেটার ফ্রিডরিশছবি: AP

এ প্রসঙ্গে উগ্র দক্ষিণপন্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হায়ো ফুংকে বলেন, ‘‘সবার আগে এমন নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যার ফলে উগ্র দক্ষিণপন্থীদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি আদৌ নথিভুক্ত করা যায়৷ সমাজ বিজ্ঞানীদের দিয়ে বিষয়টির উপর নজর রাখতে হবে৷ অনেক খোলামেলা এক কাঠামোর মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে৷ সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে এমন কাঠামো চালু আছে৷ এর মাধ্যমে আমরা সমস্যার মূলে পৌঁছতে পারবো, তার বিশ্লেষণ করতে পারবো৷''

জার্মানির অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার উপর এতকালও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ছিল৷ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলি এবং সংসদের এক কমিশন তাদের কাজের উপর নজর রেখে চলেছে বটে, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না৷ দেখা গেছে, গোয়েন্দারা প্রায়ই এককভাবে কাজ করেছেন৷ অনেক তথ্য-উপাত্ত দেখেও দেখেন নি বা তার ভুল মূল্যায়ন করেছেন৷ তার উপর সম্প্রতি ফাইল নষ্ট করার যে ঘটনার কথা জানা গেছে, সে সম্পর্কে এখনো সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া না গেলেও ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত বলে মনে করেন হায়ো ফুংকে৷ সংসদীয় কমিশনের সদস্য ও উদারপন্থী এফডিপি দলের সাংসদ পাট্রিক কুয়র্ট এর জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাবও রেখেছেন৷ তাছাড়া উগ্র দক্ষিণপন্থীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সাক্ষ্মীদের বয়ানের বিষয়টি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে৷ তাদের আরও অনেক দায়িত্ব নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে সাক্ষ্য দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷

তবে জার্মানির অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার আমূল সংস্কার আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে আরেক উগ্র দক্ষিণপন্থা বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক টিস মারসেন'এর৷ তিনি এই সংস্থাই তুলে দেওয়ার পক্ষে৷ তাঁর মতে, ইতিহাস ঘাঁটলেই গুপ্তচর সংস্থার এমন আচরণের কারণ বোঝা সম্ভব৷ তিনি বললেন, ‘‘এই সংস্থা আসলে শীতল যুদ্ধের পরিণতি৷ তখন দুই বৈরি শিবির পরস্পরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল৷ পশ্চিম জার্মানির অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার মূল লক্ষ্য ছিল পূবের, অর্থাৎ পূর্ব জার্মানির উপর প্রভাব বিস্তার করা৷ কমিউনিস্টদের শায়েস্তা করাই ছিল তাদের ধ্যান-জ্ঞান৷ এই কাজে এমনকি নাৎসি আমলের অপরাধীদেরও সামিল করা হয়েছিল৷ আজকের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবশ্যই সেই অবস্থার তুলনা চলে না ঠিকই, কিন্তু এই মনোভাব কিছুটা থেকে গেছে৷ ফলে উগ্র বামপন্থীদের প্রতি যে কঠোর পদক্ষেপ দেখা যায়, উগ্র দক্ষিণপন্থীদের ক্ষেত্রে সংস্থার সুর যেন কিছুটা নরম৷''

বাভেরিয়া রাজ্যে অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার কার্যকলাপের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন টিস মারসেন৷ সেখানে কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিক সমিতিকেও উগ্র বামপন্থী হিসেবে তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন গুপ্তচররা৷ কারণ তারা নব্য নাৎসিদের বিরুদ্ধে তৎপরতা দেখিয়েছিল৷ ফলে হিতে বিপরীত হয়েছে৷ মারসেন মনে করেন, আজকের যুগে জার্মানিতে আলাদা করে এমন এক অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থার কোনো প্রয়োজনই নেই৷ পুলিশ সহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী দপ্তরই সেই কাজ করতে পারে৷ তার উপর অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থা সহজে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার পথে যায় না৷ তারা নিজেরাই আলাদা করে তৎপরতা দেখাতে চায়৷

প্রতিবেদন: গ্যুন্টার বির্কেনস্টক / এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ