প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে আবারো সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির৷ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা নদীর পানি৷ জরুরি ব্যবস্থা না নিলে আবার বড় দুর্যোগের আশংকা করছেন এলাকাবাসী৷
বিজ্ঞাপন
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো৷
চার মাস আগেই প্রবল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন সুনমাগঞ্জের কৃষকেরা৷ বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় ঐ অঞ্চলের ১৪২টি ফসলি হাওরের সবকটি৷
তবে শুধু ফসলের ক্ষতিই নয়, এ বছরের বন্যায় দেখা দেয় নতুন দুর্যোগ৷ মৎস অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ফসলে ব্যবহার করা কীটনাশকের কারণে পানি দূষিত হয়ে মারা যায় ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ৷ ৩,৮৪৪টি হাঁসও মারা যায় বিষাক্ত খাবার খেয়ে৷
অভিযোগ ওঠে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে দুর্নীতির৷ সত্যতা যাচাইয়ে হয়েছে তদন্ত কমিটি৷ তিনজন প্রকৌশলিকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয় গত মে মাসে৷
ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় এবারও প্রবল বন্যায় হাওর প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে৷ এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির৷ প্রবল পানির তোড়ে বন্ধ আছে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর, জেলা সদর, জামালগঞ্জ, শাল্লা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল৷
বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরু ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম৷
এডিকে/ডিজি
হাওরের মানুষের দুর্দশার কাহিনি
দেশের হাওর অঞ্চলে কৃষকদের করুণ দশা৷ বন্যার পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন কৃষক৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন নিঃস্ব কৃষক পরিবারের একজন৷ ক্ষয়ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকার৷
ছবি: bdnews24.com
পাহাড়ি ঢল আর বন্যা
এপ্রিলের শুরুতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার হাওরের বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ পরিবার৷
ছবি: bdnews24.com
পানিতে বিষক্রিয়া
ধান নষ্ট হওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে হাওরের মাছ, সেখানে চরানো হাঁস৷
ছবি: bdnews24.com
হাওরে ডুবছে স্বপ্ন
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ডিঙ্গাপোতা হাওরের পাশের একটি গ্রামে একজন কৃষক গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ জমিতে অনেক ধান হয়েছিল তাঁর, গোয়ালে ছিল ৩০টি গরু৷ ধান সব পানির নিচে, পরিবারের মানুষের কথা ভেবে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনে হয়েছে তাঁর কাছে৷ (ছবিতে নিঃস্ব এক কৃষক)
ছবি: bdnews24.com
তারা বানু’র মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বন্যার পানিতে শত শত হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে৷ নিঃস্ব হয়েছে সব কৃষক৷ তাঁর পরিবারেও বিপর্যয় নেমে আসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তারা বানু৷ তাঁর মতো অবস্থা হাজারো কৃষকের৷ এখানে মোট জমি রয়েছে ২০ হাজার ৭০ হেক্টর৷ এর মধ্যে ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত৷ ৮৭ টি বাঁধ হুমকির মুখে৷ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: bdnews24.com
৪৩ হাজার কৃষক পরিবার নিঃস্ব
হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে হঠাৎ বন্যা নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ কিন্তু এবার তার রূপ যেন আরও ভয়াবহ৷ এতে নিঃস্ব হয়ে গেছে অন্তত ৪৩ হাজার কৃষক পরিবার৷
ছবি: Badruddoza Babu
ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
ধান নষ্ট হয়েছে অন্তত ১ লাখ ৩ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন৷ সরকারি হিসেবে প্রতি মণ ধান ৯২০ টাকা করে ধরলে টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷
ছবি: bdnews24.com
১০ কোটি টাকার জরুরি ত্রাণ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিরামহীন অতিবৃষ্টি হওয়ায় হাওর রক্ষাবাঁধ ভেঙে যাওয়া ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে৷ ২৭শে এপ্রিল সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য ১০ কোটি টাকার ত্রাণ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন৷
ছবি: bdnews24.com
হাওরের এত ক্ষয়-ক্ষতি জীবনে দেখিনি: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘‘আমার জীবনে হাওরের এত ক্ষয়ক্ষতি দেখিনি৷ আমি কৃষকের সন্তান, আমার বাপ একজন কৃষক ছিলেন৷’’ ১৭ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি৷
ছবি: bdnews24.com
তিন লাখ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত
সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে ১৪২টি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবার৷ জেলায় এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল, যার ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
এক হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছের মৃত্যু
নেত্রকোণায় আবাদ হওয়া এক লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৬৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, মরে গেছে এক হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছ৷