বর্ষা আসতেই ভারতের অন্তত ১০টি রাজ্যে বন্যার তাণ্ডব শুরু। পাহাড়ে শুরু ক্লাউড বার্স্ট, ধস। গুজরাটেই মারা গেছেন ৬৯ জন, কাশ্মীরে ১৬ জন, মহারাষ্ট্রে ৮৫ ও ঝাড়খণ্ডে চারজন।
বিজ্ঞাপন
বর্যার সবে শুরু। এর মধ্যেই ভয়ঙ্কর বৃষ্টি হচ্ছে ভারতের অন্তত ১০টি রাজ্যে। শুরু হয়েছে বন্যার তাণ্ডব। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গুজরাটে। সোমবার আমেদাবাদে ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পুরো শহর জলের তলায়। স্কুল, কলেজ, অফিস বন্ধ। শুধু আমেদাবাদ নয়, ডাঙ, নবসারি, তাপি, ভালসাদ, পাঁচমহল, ছোট উদয়পুর, খেড়ায় বন্যা হয়েছে।
বহু নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩৩টি বড় দল বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ধারকাজে ব্যস্ত। ভালসাদে ভারতীয় কোস্ট গার্ড ১৬জনকে উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়েছে। রেললাইন জলের তলায় চলে যাওয়ায় অনেকগুলি ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। রাজকোটে নেয়ারি বাঁধের উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করেছে।
কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে দেখা যাচ্ছে, সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকাও জলের তলায়।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
জলের তলায় স্কুল
গ্রামের নাম নিশ্চিন্তপুর। সেখানে মানুষ আর নিশ্চিন্তে নেই। স্কুলও জলের তলায় চলে গেছে। শিলচর থেকে এক ঘণ্টার রাস্তা এই নিশ্চিন্তপুর।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বন্যার কবলে মসজিদ
নিশ্চিন্তপুরের মসজিদ জলের তলায় চলে গেছে। মসজিদের গেটের সামনে বালির বস্তা দিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু বন্যার জল সেখানে ভয়ংকর গতিতে বইছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বিপজ্জনক যাত্রা
শিলচর থেকে চল্লিশ মিনিটের দূরত্বে রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে জল বইছে। যাতায়াতের জন্য বানানো হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সাইকেল কাঁধে একজন বিপজ্জনকভাবে যাতায়াত করছেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
গ্রামের মধ্যে নদী বইছে
গ্রামের ভিতর ঢুকে গেছে বলেশ্বর নদী। এই নদী সিলেটে গিয়ে সুরমায় পড়েছে। মেঘালয় পাহাড় থেকে নামে এই খরস্রোতা নদী।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
এর মধ্যেই থাকছেন মানুষ
হাঁটু পর্যন্ত জল। রাস্তা, মাঠঘাট কিছুই আর আলাদা করা যাচ্ছে না। তার মধ্যেই মানুষ থাকছেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হাসপাতালে জল
শিলচরের কাছে এই হাসপাতালটিও ডুবে বন্যার জলে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ভয়াবহ পরিস্থিতি
আসামে বন্যায় এখনো পর্যন্ত ১৬৪ জন মৃত। কাছারে মারা গেছেন ২৪ জন। প্রচুর নিখোঁজ। ৩২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
12 ছবি1 | 12
মহারাষ্ট্রের অবস্থা
মহারাষ্ট্রের সর্বত্র প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। মুম্বই আবার ভেসেছে। পুনাতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পালঘরে ধস নেমেছে। তাতে একজন মারা গেছেন। থানেতেও ধস নেমেছে। একটি ছোট পাহাড়ে ফাটলও দেখা দিয়েছে।
নাগপুরে তিনজনকে নিয়ে একটি গাড়ি বন্যার জলে ভেসে যায়। তিনজনই মারা গেছেন। তারা মধ্যপ্রদেশ থেকে নাগপুর এসেছিলেন। গাড়িটি একটি ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় জলের তোড়ে ভেসে যায়।
গত কয়েকদিন ধরে বন্যা ও ধসের ফলে মহারাষ্ট্রে ৮৯ জন মারা গেছেন।
পাহাড়ে ক্লাউড বার্স্ট ও চকিত বন্যা
দিন কয়েক আগে কাশ্মীরে অমরনাথ যাত্রার সময় ক্লাউড বার্স্ট হয় এবং ১৬ জন তীর্থযাত্রী মারা যান। এরপর সেনাবাহিনীর তরফ থেকে রাস্তা ঠিক করে দেয়ার পর যাত্রা আবার শুরু হয়। কিন্তু আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তা এখন স্থগিত আছে।
হিমাচল প্রদেশের মানালিতে প্রবল বৃষ্টির ফলে ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা চকিত বন্যা হয়েছে। মানালির বাসস্ট্যান্ড ভেসে গেছে। বেশ কয়েকটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথের রাস্তা বৃষ্টির জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ, চামোলি্তে বেশ কয়েক জায়গায় ধস নেমেছে। কেদারনাথের আবহাওয়ার দিকে সারাদিনরাত নজর রাখা হচ্ছে।
অন্য রাজ্যগুলিতে
মধ্যপ্রদেশে বন্যার অবস্থা বেশ খারাপ। গত কয়েকদিন ধরে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। হারদা, বেতুল সহ বেশ কয়েকটি জেলার বড় অংশ জলের তলায় চলে গেছে। ভোপাল-বেতুল সড়ক বন্ধ করে দিতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় জানিয়েছে, প্রচুর মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ওড়িশায় মঙ্গলবার থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর ফলে বহু জায়গায় ধস নেছে। অনেক গ্রাম জলের তলায় চলে গেছে।
ঝাড়খণ্ডে ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ধানবাদ রেল স্টেশনের কাছে একটি নির্মাণকাজ চলার সময় ধস নামে। বেশ কিছু ট্রেন হয় ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে বা বাতিল হয়েছে।
তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রেও প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে এবং নদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। আসামের শিলচর ও তার আশপাশের এলাকা এখনো জলমগ্ন।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো। এখনও সেখানে বৃষ্টির তাণ্ডব শুরু হয়নি।
জিএইত/কেএম(পিটিআই, এএনআই)
বরাকের জল বাড়ছে, আসামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
আসামের বন্যা পরিস্থিতি আবার সংকটজনক। কয়েকদিন নদীর জল কমার পর আবার তা বাড়ছে। বরাক নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
আকাশ থেকে
আসামের কাছার জেলায় বন্যার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা এই ছবিই বুঝিয়ে দিচ্ছে। শিলচর ও তার আশপাশের বিশাল এলাকা জুড়ে শুধু বন্যার ঘোলা জল। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, মন্দির-মসজিদ সব জলের তলায়। স্কুল, হাসপাতালেও উঠে এসেছে জল। নিরাশ্রয় লাখ লাখ মানুষ।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
জল নামেনি
এই বিশাল এলাকা থেকে জল নামেনি। দিন কয়েক পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছিল। নদীর জল কমে আসছিল। কিন্তু পাহাড়ের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় আবার নদীতে জল ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। ফলে মাঠঘাট সব বন্যার জলের তলায় ঢাকা পড়ে গেছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বরাক নদীর জল
বরাক নদীর জল আবার বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আর একটু বাড়লেই তা কিছুদিন আগের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ব্রিজের অবস্থা
এই ব্রিজের উপর যে কোনো সময় বন্যার জল উঠে আসবে। এখনই বন্যার জল ব্রিজ ছুঁইছুঁই করছে। এই সেতু ভেসে গেলে প্রচুর মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
যাতায়াতের উপায়
বন্যায় ভেসেছে চারপাশ। এই সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় জরুরি প্রয়োজনে কেমনভাবে যাবে মানুষ? তখন কাজে আসছে এই দেশীয় পদ্ধতি। ফোলানো টিউবের উপর কাঠের তক্তা পেতে লগি ঠেলে চলছে যাতায়াত।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
চেনা দায়
একসময় রাস্তা ছিল। পাশে মাঠ। এখন তা বন্যার জলের তলায়। দেখে মনে হবে বিশাল জলাশয়। শিলচর ও তার আশপাশের এলাকার মানুষের জীবন বেহাল করে দিয়েছে এই বন্যা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ট্রাকেই সংসার
বাড়িতে ঢুকে গেছে বন্যার জল। এই দুর্গত মানুষদের এখন ট্রাকেই সংসার।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
স্কুল-কলেজের বাড়িতে
স্কুল-কলেজের উঁচু পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রচুর মানুষ। অপেক্ষা করছেন, কবে জল নামবে, তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বাড়ির অবস্থা
বহু গ্রামে বাড়িতে বন্যার জল ঢুকে গেছে। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে হয়েছে। বাড়ির অবস্থাও খারাপ হচ্ছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সরকারি সাহায্য
এই ট্রাকে করে আসছে সরকারি সাহায্য। কিন্তু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সরকারের যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাহায্য করা উচিত ছিল, তা দেখা যাচ্ছে না। ত্রাণ নিয়ে মানুষের অভিযোগ আছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
জলের জন্য
ট্যাঙ্কারে করে জল আসছে। হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে তা সংগ্রহ করছেন মানুষ। বাঁশের ভেলার উপর রাখা হয়েছে জলের হাঁড়ি। এই জলটুকু সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে মানুষকে।