প্রবাসীরা রাষ্ট্রের কাছে কী পান?
১৪ মে ২০১৮প্রবাসীদের আয়ে কয়েক বছর কিছুটা ভাটা চললেও এখন আবার ঊর্ধগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ন'মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা ১ হাজার ৭৬ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন৷ গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার৷ সেই হিসেবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ৷
গত ডিসেম্বরে রেমিটেন্স আসে ১১৬ কোটি ডলার৷ নভেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা৷
২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার৷ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে এক হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার৷ ১৯৭৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ ৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৬৯৯ শত কোটি টাকা৷
বাংলাদেশ সত্তরের দশক থেকেই জনশক্তি রপ্তানি করছে৷ শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির প্রধান বাজার৷ আশির দশক থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়৷ লিবিয়া, সুদানসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও তখন থেকেই জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়৷ নব্বইয়ের দশক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, মিশর, মরিশাসসহ কয়েকটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়৷ নতুন সহস্রাব্দে ব্রিটেন, ইটালি, জাপানসহ এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সৃষ্টি হয় জনশক্তির চাহিদা৷
বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ অ্যামেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত হয়েছে৷ ইরাক, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, স্পেন, টিউনিশিয়া, চিলি, পেরুসহ শতাধিক দেশে বাংলাদেশ বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানি করছে৷
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৬, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭২, কুয়েতে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬১২, ওমানে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৫১, কাতারে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৫, বাহরাইনে ৩ লাখ ১৫ হাজার ১২৪, ইরাকে ৩৬ হাজার ৭৯৫, লেবাননে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৪২ ও জর্ডানে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক হিসেবে গেছেন৷ আফ্রিকার লিবিয়ায় ১ লাখ ২২ হাজার ১২৫, সুদানে ৮ হাজার ৫১২, মিশরে ২১ হাজার ৮৯০ ও মরিশাসে ৪৩ হাজার ৯৮৪ জন বাংলাদেশি গেছেন শ্রমিক হয়ে৷ এছাড়া যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ৭০ ও ইটালি গেছেন ৫৫ হাজার ৫১৪ বাংলাদেশি শ্রমিক৷
এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৭ লাখ ১০ হাজার ১৮৮, সিঙ্গাপুরে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৯, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৩ হাজার ১১৫, জাপানে ১ হাজার ৩৬৬, ব্রুনাইয়ে ৫১ হাজার ৩৪ এবং অন্যান্য দেশে ১ লাখ ১০ হাজার ২০৩ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন কাজ নিয়ে গেছেন৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বাংলাদেশর ৫০ লাখের বেশি কর্মী আছেন৷ শ্রমিক ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক নাগরিক ইউরোপ-অ্যামেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে উচ্চ পদে কাজ করছেন, ব্যবসা করছেন, করছেন গবেষণা এবং পড়াশুনা৷ সেই হিসেবে এক কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি এখন প্রবাস জীবনযাপন করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসী কর্মীদের এই বিপূল অবদানের বিপরীতে তাঁদের জন্য কী করছে সরকার?
সরকার যা করছে
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ৩৮টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলছে বাংলাদেশ৷ এছাড়া ৪২টি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী ও প্রত্যাগত কর্মীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে৷ ‘রুপকল্প-২০২১' সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিএমইটি বিদেশগামী কর্মীদের কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটাবেজ সংরক্ষণ, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, অন-লাইন অভিযোগ ব্যবস্থাপনাসহ ভুয়া ভিসায় বিদেশগমন রোধ করতে প্রত্যেক বিদেশগামী কর্মীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্বলিত ‘স্মার্ট কার্ড'-এর মাধ্যমে বহির্গমণ ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে৷
প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মী মৃত্যুবরণ করলে বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণের সময় মৃতের পরিবারকে লাশ পরিবহণ ও দাফন হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার চেকের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেয়া হচ্ছে বর্তমানে৷ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে এই চেক প্রদান করা হয়৷ বিদেশে বৈধভাবে যাওয়া মৃত কর্মীর পরিবারকে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড' থেকে দেওয়া হয় আর্থিক অনুদানও৷ ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর প্রত্যেক পরিবার আর্থিক অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা৷
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে পাওয়া ৯৫ কোটি টাকা এবং সরকারের কাছ থেকে পাওয়া পাঁচ কোটি টাকাসহ মোট ১০০ কোটি টাকার তহবিল নিয়ে ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর উদ্দেশ্য হলো, বিদেশ যাওয়ার জন্য এবং প্রবসীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ঋণ দেয়া৷
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে অভিবাসী কর্মীদের সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিএমইটি-র অধীনে এই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে৷ উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে এই তহবিল পরিচালিত হয়৷ বহির্গমন বিধিমালা ২০০২-এর ২০ ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক অভিবাসী কর্মী বাধ্যতামূলকভাবে সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে, যা দ্বারা সরকার কল্যাণ তহবিল গঠন করেছে৷
বোয়েসেল বিদেশে কর্মী প্রেরণের জন্য বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি৷ সরকার বিদেশে দক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ কর্মী প্রেরণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে বোয়েসেল প্রতিষ্ঠা করে৷ অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সির তুলনায় পারষ্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সঠিক সেবা প্রদান এবং অভিবাসন ব্যয় হ্রাসের জন্য এ প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়৷ বোয়েসেল নির্বাচিত কর্মীর কাছ থেকে না-লাভ না-ক্ষতি-র ভিত্তিতে সেবা-ফি গ্রহণ করে থাকে৷
সরকার ১৯৭৬ সালে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) প্রতিষ্ঠা করে৷ এ সংস্থার উদ্দেশ্যে হলো, দেশের অভ্যন্তরীণ জনশক্তির চাহিদা পূরণসহ বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা৷ বিএমইটি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশের জনশক্তির যথাযথ ব্যবহার সংক্রান্ত কৌশল ও সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে৷ বিএমইটির অধীনে ৪২টি জেলাকর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চারটি বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, ৪৭টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চারটি ইনস্টিটিউট অফ মেরিন টেকনোলজি ও তিনটি শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ অফিস আছে৷
লাশ পাঠাতে চাঁদা তুলতে হয়
ব্র্যাক-এর মাইগ্রেশন প্রোগাম-এর প্রোগ্রাম হেড শরিফুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের পাশের দেশ ভারত বা শ্রীলঙ্কায় প্রবাসীরা যে মর্যাদা পান, আমরা কিন্তু তা দেই না৷ আমরা মুখে মুখে অনেক কথা বলি৷ কিন্তু বাস্তবে তাঁরা নানা রকমের হয়রানির শিকার হন৷ তাঁরা যাওয়ার সময় পাসপোর্ট করা থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, দূতাবাস – সবখানেই হয়রানির শিকার হন৷ আবার আসার সময়ও একই ধরনের হয়রানির শিকার হন৷ এমনকি প্রবাসীদের ভোটাধিকারও এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি৷ তাঁরা রাষ্ট্রকে যে পরিমাণ দিচ্ছেন, সেই তুলনায় রাষ্ট্রের কাছ থেকে পান না কিছুই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রবাসীরা বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছেন৷ তার বিপরীতে কোনো প্রবাসী কর্মী মারা গেলে লাশ পরিবহণ ও দাফনের জন্য তাঁর পরিবার কিছু অর্থ পায়৷ এছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদও কিছু পরিমাণ টাকা দেয়া হয়৷ তবে যে দেশে তিনি মারা যান, সেই দেশে কর্মক্ষেত্রে মারা গেলে কী ক্ষতিপূরণ আছে, তা জানতে বা সেটা আদায় করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না৷ আমাদের প্রবাসীদের ‘কমন' অভিযোগ হলো যে, তাঁরা যখন বিদেশে কোনো বিপদে পড়েন, আইনগত ঝামেলায় পড়েন বা কোনো কারণে আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁরা আমাদের দূতাবাসগুলোর কোনো সহায়তাই নাকি পান না৷ দূতাবাসগুলো তাঁদের পাশে না থাকায় ঐসব দেশের কর্তৃপক্ষও তাঁদের সম্মান বা মর্যাদা দেয় না৷ সৌদি আরবের কথাই ধরা যাক৷ সেখানে আমাদের ২০ লাখ প্রবাসীর জন্য মাত্র দু'টি ‘লেবার উইং' আছে আর আছেন ছ'জন কর্মকর্তা৷ প্রবাসীদের কথা, এই ছয় জনের পক্ষে এত প্রবাসী কর্মীকে সার্ভিস দেয়া সম্ভব নয়৷ আর আমার কথা হলো, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয় না কেন?''
শরিফুল হাসান জানান, ‘‘প্রবাসীরা মারা গেলে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়৷ প্রবাসীরা কখনো কখনো চাঁদা তুলেও লাশ দেশে পাঠান৷ অথচ আমাদের দূতাবাসগুলো খবরও রাখে না৷''
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এই ব্যাংকটি করা হয়েছিল যাঁরা বৈধভাবে বিদেশে কাজের জন্য যাবেন এবং যাঁরা ফিরে আসবেন তাঁদের ঋণ সহায়তা দেয়ার জন্য৷ কিন্তু এই ব্যাংক আসলে প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে৷ কিন্তু এই ব্যাংক গড়ে উঠেছে প্রবাসীদের টাকায়৷ তাঁদের ৯৫ কোটি টাকা এখানে আছে৷ আমার প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্র কেন এই টাকা দেবে না? শুধু তাই নয়, এখান থেকে প্রবাসীরা তাঁদের চাহিদামতো ঋণও পান না৷''
প্রবসীদের টাকাতেই প্রবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেয় সরকার
জনশক্তি বিষয়ক বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশে মারা গেলে প্রবাসীর পরিবারকে যে তিন লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা, সরকার বলে সেই টাকা সরকারের নয়৷ প্রত্যেক কর্মীকে বিদেশে যেতে হলে প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয়৷ সেই টাকা থেকেই যাঁরা মারা যান, তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়৷ অর্থাৎ, কর্মীদের জমানো টাকাই কর্মীদের দেয়া হয়৷ বিদেশে গিয়ে প্রবাসীরা যখন বিপদে পড়েন, তখন কোনো সহায়তা পান না৷ কিন্তু একজন কর্মীকে বিদেশ পাঠানোর আগে সবকিছু ‘কনফার্ম' করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএমইটি৷ তারপর যদি সেই কর্মী ঠিকমতো বেতন না পান, তাঁকে যদি নিয়োগকারী খেতে না দেন, তাহলে সরকারের তো তাঁকে সহায়তা করা উচিত৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রবাসী কর্মীরা বৈধপথে অর্থ পাঠাতে গিয়েও ঠকেন৷ কারণ, ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে এক ডলারে প্রচলিত রেটের চেয়ে তাঁরা চার-পাঁচ টাকা কম পান৷ এ ব্যাপারে তাঁদের আরো ভালো রেট দেয়ার উদ্যোগ নেয়া প্রয়েজন৷ আর জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে অর্থ উপার্জন করে দেশে ফিরে এলেও ঐ জমি কিন্তু টাকা দিয়েও ফেরত পাওয়ার কেনো উপায় নেই৷ এ ব্যাপারেও একটা নীতিমালা প্রয়োজন, নয়ত প্রবাসীরা ধীরে ধীরে ভূমিহীন হয়ে পড়বেন৷''
তাঁর কথায়, ‘‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক একজন কর্মীকে বিদেশে যেতে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ঋণ দেয়৷ কিন্তু ঐ টাকায় বিদেশ যাওয়া হয় না৷ আবার ঋণ নিতে গ্যারান্টারসহ কাগজপত্রের নানা জটিলতাও রয়েছে৷ তার ওপর সুদের হারও কম নয়৷ অভিযোগ আছে, প্রসেসিংসহ গ্যারান্টার জোগাড় করতে যে খরচ হয়, তা বাদ দিলে টাকা তেমন থাকে না৷ তাই তাঁদের জন্য বিনা সুদে বা নামমাত্র সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত৷ আমার প্রস্তাব, আগামী বাজেটে এই খাতে বড় একটি বরাদ্দ রাখার৷ তাছাড়া সরকার তফসিলি ব্যাংকগুলোকেও একটি নির্দেশনা দিতে পারে, যাতে কৃষিঋণের মতো বিদেশগামী কর্মীদেরও স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয়৷''
এই বিশ্লেষক বলেন, ‘‘বিদেশে বাংলাদেশের কর্মীদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ ঐ দেশের আইনে বাংলাদেশের কর্মীরা যেন সুরক্ষা পান, তার ব্যবস্থা বাংলাদেশের সরকারকেই করতে হবে৷''
আইনি সুরক্ষা পান না
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগে প্রবাসী কর্মী মারা গেলে দু'লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেতেন৷ এখন সেটা বাড়িয়ে তিন ও চার লাখ টাকা করা হয়েছে৷ তাঁরা আগের চেয়ে কম সুদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে অভিবাসন ব্যয় মেটানোর ঋণ পান৷ এখন ‘ডাটাবেজ' হওয়ার কারণে সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে আগের চেয়ে কম খরচে কর্মীরা বিদেশে যেতে পারেন৷ জেলায় জেলায় এখন সরকারের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হওয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে কম খরচে বেশি বেতনের চাকরিতে যাওয়া যায়৷ ‘স্মার্ট কার্ড' এবং ‘মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট' হওয়ায় এখন প্রতারণা সম্ভব নয়৷ এই সব সুবিধা আগে ছিল না৷''
তবে তিনি বলেন, ‘‘প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষা এবং নানা ঘটনায় তাঁদের সহায়তা দেয়া এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ৷ এজন্য যেখানে আমাদের কর্মীরা বেশি আছেন, আমরা সেসব দেশের দূতাবাসে ‘লিগাল' এবং ‘মিডিয়া উইং' খোলার কথা বলছি৷ কারণ, ‘লেবার উইং' দিয়ে সব কিছু করা সম্ভব নয়৷ আমাদের কর্মীরা ঐসব দেশের আইন সম্পর্কে জানেন না৷ তাঁদের কাছে জরুরি তথ্যও থাকে না৷ ফলে তাঁরা আইনি সুরক্ষা পান না৷ অনেক ক্ষেত্রে হয়রনিরও শিকার হন৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশ থেকে কর্মী পাঠানো হয় এমওইউ-এর মাধ্যমে৷ তাই নানা ধরনের আইনি অধিকার অনেক সময় আদায় করা সম্ভব হয় না৷ আমাদের দেশ থেকে চেষ্টা করেও ‘লেবার রিসিভিং কান্ট্রি'গুলোকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারিনি৷ তাই আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো৷ এটা সম্ভব হলে অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে৷ সরকার সম্প্রতি দুবাইতে নিরাপদ অভিবাসনের জন্য ‘হোম' করার কাজ শুরু করেছে৷ বিশেষ করে ‘ডমেস্টিক ওয়ার্কার' বা গৃহকর্মীদের জন্য৷ বলা বাহুল্য, গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া নারীরা সবচেয়ে বেশি ‘অ্যাবিউজড' হচ্ছেন৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷