1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবাসীদের কষ্টের জীবন

আশীষ চক্রবর্ত্তী৩ মে ২০১৬

ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেন তাঁরা৷ গত চল্লিশ বছরে বিদেশ থেকে তাঁরা ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৩২ কোটিরও বেশি টাকা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশে৷ সরকার কি তাঁদের জন্য বেশি কিছু করেছে?

প্রবাসী শ্রমিক
ছবি: imago/imagebroker

সরকারি হিসেব অনুযায়ী গত ৪০ বছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কমপক্ষে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৩২ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশে৷ প্রকৃত অঙ্কটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি হবে৷ পরিবার ও দেশের জন্য এমন অবদান রাখতে গিয়ে অকাতরে জীবনও দিচ্ছেন অনেকে৷ একটি জাতীয় দৈনিকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫৫ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়েছেন৷

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাংলাদেশিদের বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে৷ এর পাশাপাশি প্রবাসে নির্যাতনও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে৷ প্রায় নিয়মিতই আসছে মৃত্যুর খবর৷ পরিবারে সুদিন ফেরানোর আশায় বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছেন অনেকে৷ গত এক দশকে ২৫ হাজার ২২৯ জন ফিরেছেন লাশ হয়ে৷ গত বছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালেও বাংলাদেশে এসেছে মোট ৩ হাজার ৩০৭ জন প্রবাসীর লাশ!

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে ২২০ জন প্রবাসীর লাশ৷ তাদের মধ্যে ১৮২ জনের মৃত্যুকেই খুব স্বাভাবিক বলা যায় না৷ অধিকাংশেরই মৃত্যুর কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্র বা সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ক্যানসারের মতো জটিল কোনো রোগ৷

প্রবাসে একা থাকা, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ পরিবেশে কাজ করা ইত্যাদি কারণে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বয়স ৩৫ হওয়ার আগেই অনেকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে৷

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন৷ এর মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষই আছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে৷ ওই দেশগুলোতে কাজের সার্বিক পরিবেশ খারাপ, শ্রমিক নির্যাতনও বেশি৷

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জানাচ্ছে, গত এক দশকে বিদেশ থেকে ২২ হাজার ৬৫১ জনের লাশ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে৷ এর মধ্যে ১২ হাজার ৫৫৭ জনই কাজ করতেন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো-না-কোনো দেশে৷ ৫ হাজার ৭৩১ জন ছিলেন সৌদি আরবে, ২ হাজার ৫২০ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ২ হাজার ১৮৪ জন কুয়েতে, ১ হাজার ১০২ জন ওমানে, ৫৩৪ জন বাহরাইনে এবং ৪৮৬ জন কাতারে ভাগ্যান্বেষণে গিয়ে লাশ হয়ে ফেরেন৷

গত কয়েক বছরে নারীদের বিদেশ গমনও বেড়েছে৷ বিদেশে তাঁদের জীবন আরো কঠিন৷ দৈনিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও অনেকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক পান না৷ শারীরিক, মানসিক নির্যাতন তো আছেই, যৌন নিপীড়ন, এমনকি ধর্ষণের শিকারও হন অনেকে৷ নিয়োগকর্তা স্বজনহীন পরিবেশে অসহায়ত্বের সুযোগে নারীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছেন – এমন খবরও নতুন কিছু নয়৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

তবুও ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়তে হয়৷ তারপরও বৃদ্ধ বাবা-মা, বেকার, ঋণগ্রস্ত স্বামী বা প্রিয় সন্তানের জন্য বহু দূরের অচেনা দেশে যেতেই হয়৷ এক ইউটিউব ভিডিওতে এমনই কয়েকজন নারীর বাস্তব কাহিনি দেখানো হয়েছে, যাঁদের মধ্যে একজন দেশ ছেড়েছিলেন স্বামীর ঋণ পরিশোধ করতে৷ তবে ৪ বছর ৮ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেও প্রায় শুন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে৷ ভোর চারটায় উঠে শুরু করতেন থালাবাসন ধোয়া৷ তারপর বিশাল বাড়ির সব মেঝে ধোয়া-মোছা শেষে শুরু হতো একে একে আটটি টয়লেট সাফ করার কাজ৷ একটু বিশ্রাম নেবেন সেই সুযোগ নেই৷ কাপড় শুকাতে দিয়েই যেতে হতো মালিকের মেয়ের বাড়িতে৷ সেখানেও রাজ্যের কাজ৷ মেয়ের বাড়ির কাজ শেষে মালিকের নতুন নির্দেশ – এবার যেতে হবে ভাইয়ের বাড়ির ছাগলের ঘর পরিষ্কার করতে৷ চুক্তির বাইরে এত অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক চাইলেও বিপদ৷ মালিক তখন রেগেমেগে বলত, ‘‘মেরে লাশ ফেলে দেব পাহাড়ে৷''

কোনো সরকার কি ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের সুন্দর আগামী নির্মাণে ভূমিকা রেখে যাওয়া এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিয়েছে?

আপনার কী মনে হয়? জানান আপনার মন্তব্য, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ