ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে তিন দিনের চতুর্দশ প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদী বার্তা দিলেন পাসপোর্টের রং নয়, জন্মগত সম্পর্কের রংই গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতি দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর মূল ভাষণে বললেন, বিদেশে ভারতীয়দের সব সংকটে তাঁর সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে৷ অভিবাসী ভারতীয় শ্রমিক ও কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় অবৈধ রিক্রুটমেন্ট এজেন্টদের বিরুদ্ধে নেবে কড়া ব্যবস্থা৷ সংঘর্ষ বিধ্বস্ত দেশগুলিতে বিপদে পড়া যে কোনো ভারতীয়কে উদ্ধারে সরকার চেষ্টার ত্রুটি করেনি বা করবে না৷ তাঁদের নিরাপত্তা ও কল্যাণই সরকারের কাছে প্রধান কথা৷ শুধু তাই নয়, বিদেশের মাটিতে যে কোনো ভারতীয়ের সামাজিক, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যাতেও তাঁরা পাশে পেয়েছে বা পাবে সরকারকে৷ পাসপোর্টের রং নয়, জন্মগত শিকড়ের সম্পর্ক বিবেচ্য, বলেন প্রধানমন্ত্রী৷ এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, মেইল বা টুইটারে যোগাযোগ করেও তাঁরা সর্বদাই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন৷
ভারতীয়রা আজ গোটা বিশ্বে তাঁদের কাজের জন্য প্রশংসিত৷ যে দেশেই তাঁরা থাকুন না কেন, সেখানকার সমাজে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য৷ নিছক সংখ্যাগত দিক থেকে নয়, ভারতীয় মূল্যবোধের শ্রেষ্ঠ গুণগুলিকেও তাঁরা তুলে ধরতে পেরেছেন৷ সরকারের লক্ষ্য দেশের যেসব মেধা বিদেশে চলে যাচ্ছে, সেই ‘ব্রেন ড্রেন'-কে ‘ব্রেন গেইন'-এ রূপান্তরিত করা৷ প্রবাসী ভারতীয়দের কাছ থেকে প্রতি বছর ভারতে আসে গড়ে ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় অর্থনীতিকে মজবুত করতে বিশেষ অবদান রেখেছে৷ মোদী সরকারের বিমুদ্রাকরণেও যোগদানকারী প্রবাসী ভারতীয়রা করতালি দিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন, এমনটাই দাবি সরকারি মহলে৷ প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা হবে প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি৷
প্রবাসী ভারতীয়দের সুযোগ-সুবিধা
গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ৷ অনেক আইনি জটিলতা সত্ত্বেও তাদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা৷ তালিকায় নতুন কিছু পরিষেবাও যোগ হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
প্রবাসীদের তালিকার শীর্ষে ভারত
জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ১.৬ কোটি ভারতীয় বিদেশে বসবাস করেন৷ বিশ্বের অন্য কোনো দেশের এত মানুষ দেশের বাইরে থাকেন না৷ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ (ডিইএসএ) গোটা বিশ্বে অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে৷
ছবি: Reuters/R. Stevens
আলাদা মন্ত্রণালয়
ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অফ ওভারসিজ ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স প্রবাসী ভারতীয়দের বিষয়গুলি দেখাশোনা করতো৷ বর্তমানে সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে এসেছে৷ প্রবাসী ভারতীয় দিবস ও সম্মেলন আয়োজন করা ছাড়াও অন্য অনেক ক্ষেত্রে সক্রিয় এই মন্ত্রণালয়৷ ভারতে আর্থিক বিনিয়োগ বাড়াতে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
‘অনাবাসী’ ভারতীয়
মূলত আয়কর আইনের আওতায় বিদেশে বসবাসরত সেই সব ভারতীয় নাগরিকদের ‘অনাবাসী’ বা নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান (এনআরআই) বলা হয়, যারা বছরে কমপক্ষে ১৮২ দিন বিদেশে থাকেন৷ কর ছাড়াও তারা অন্য কিছু ক্ষেত্রেও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন৷
ছবি: AP
ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের পরিচয়পত্র
যে সব ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁদের জন্য রয়েছে ‘ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া’ বা ওসিআই সার্টিফিকেট৷ দ্বৈত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি না হলেও এমন সার্টিফিকেট থাকলে ভারতীয় নাগরিকদের অনেক অধিকার ভোগ করা যায়৷ তবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে অতীত সম্পর্ক থাকলে ওসিআই পাওয়া যায় না৷
ছবি: DW/S. Burman
ওসিআই হলে সুবিধা
ওসিআই থাকলে আজীবন ভারতে যাতায়াত, সেখানে বসবাস ও কাজকর্ম করা, জমি-বাড়ি কেনাবেচার মতো অনেক সুবিধা ভোগ করা যায়৷ তবে কৃষিজমি কেনা যায় না, ভোট দেওয়া বা ভোটে দাঁড়ানোও সম্ভব নয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
বিশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
এনআরআই বা ওসিআই মর্যাদা থাকলে ভারতের ব্যাংকে টাকা রাখার ক্ষেত্রেও কর সংক্রান্ত বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করা যায়৷ সরাসরি বিদেশি মুদ্রা জমা দেওয়া ও প্রয়োজনে তুলে নেওয়ার বাড়তি সুবিধাও রয়েছে৷
ছবি: AP
প্রবাসে ভোট দেবার সুযোগ
এনআরই বা অনাবাসী ভারতীয়রা শীঘ্রই বিদেশ থেকেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ ইলেকট্রনিক ভোটিং অথবা ভারতে কোনো মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেন, বিদেশে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা (পিআইও) যাতে ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) কার্ড পেতে পারেন, তার জন্য যাবতীয় নথিপত্র ও আইনি প্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে শুরু করা হচ্ছে৷
পিআইও কাদের বলা হবে? হাজার হাজার পিআইও বা ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে সুরিনাম, রি-ইউনিয়ন দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, দক্ষিণ আফ্রিকা, গায়ানা, ত্রিনিদাদ, টোবাগো ও মরিশাসে গিয়েছিলেন আখ ক্ষেতে শ্রমিক হিসেবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই৷ তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা বৈধ পাশপোট পেতে সমস্যায় পড়েছেন৷ এই ঘোষণাকে মোদী সরকারের এক বড় পদক্ষেপ বলে স্বাগত জানিয়েছেন প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে যোদানকারী রি-ইউনিয়ন দ্বীপপুঞ্জের প্রতিনিধিদলের নেতা রামস্বামী নাদারাসিন৷ রি-ইউনিয়ন দ্বীপপুঞ্জ ভারত মহাসাগরে মরিশাস থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে৷
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কোস্তার৷ ভারতের সঙ্গে তাঁর মাটির সম্পর্কের উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্তুগাল ইওরোপের সঙ্গে যোগাযোগের স্নায়ুকেন্দ্র৷ তাঁর দেশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সর্বদাই মুক্তহস্ত৷ ভারতকে তাঁর দেশে বিনিয়োগের বার্তা দিলেন তিনি৷ তারপরই তিনি জানান, তিনি ভারতের গোয়া-বংশোদ্ভুত৷ তাঁর ছোটবেলা কেটেছে গোয়াতে৷ এখনও তাঁর কিছু আত্মীয় পরিজন গোয়াতে আছেন৷ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী৷ উল্লেখ্য, পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কোস্তার হলেন ইউরোপীয় কোনো দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাষ্ট্রনেতা৷ অনুষ্ঠানে তিনি পর্তুগাল ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর স্বাক্ষর করা জাতীয় ফুটবল দলের একটা জার্সি তুলে দেন মোদীর হাতে৷
সোমবার সমাপ্তি অধিবেশনে প্রবাসী ভারতীয় সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ প্রতি দু’বছর অন্তর এই কেন্দ্রীয় প্রবাসী ভারতীয় দিবস উদযাপিত হয়, বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে৷ তবে এবারের প্রবাসী ভারতীয় দিবস অনুষ্ঠান পরিচালনায় বা বক্তা হিসেবে সংঘ পরিবারের দাপট চোখে পড়েছে৷
‘সিইও-র দেশ ভারত’
বিশ্বের সেরা কিছু প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) যদি একই দেশের হয়, সেই দেশকে কি ‘সিইও-র দেশ’ বলা যায় না? যায় তো! ভারতও তাহলে ‘সিইও-র দেশ’৷ জেনে নিন বিশ্বের কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সিইও এখন ভারতীয়...৷
ছবি: Reuters/R. Galbraith
মাইক্রোসফটে সত্য নাদেলা
হায়দ্রাবাদের ছেলে সত্য নারায়ণ নাদেলা৷ ২০১৪ সাল থেকে তিনি মাইক্রোসফটের সিইও৷ নাদেলা ভারতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সত্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে৷ লেখাপড়া শেষ করে প্রথমেই সান মাইক্রোসিস্টেম-এ চাকরি পেয়ে যান৷ তবে বেশি দিন সেখানে থাকতে হয়নি৷ মাইক্রোসফট-এ চাকরি হয়ে যায় ১৯৯২ সালে৷ ১২ বছর পর প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদের জন্য তাঁকেই বেছে নিয়েছে মাইক্রোসফট৷
ছবি: Reuters
গুগলে আছেন সুন্দর পিচাই
সুন্দর পিচাইয়ের জন্ম চেন্নাইয়ে৷ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) থেকে লেখাপড়া শেষ করা এই তরুণ গুগলে যোগ দেন ২০০৪ সালে৷ গত ১০ আগস্ট পরবর্তী সিইও হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করার পর গুগল-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ একটি ব্লগ লিখেছেন৷ সেখানে সুন্দর পিচাই সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘‘ওর মতো একজন প্রতিভাবানকে গুগল পরিচালানার দায়িত্বে পাওয়ায়টা খুবই সৌভাগ্যের৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/J. Chiu
পেপসিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নারীদের একজন...
বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী ভারতের ইন্দ্রা কৃষ্ণমূর্তি নুয়ী৷ সত্য নাদেলার মতো তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন লেখাপড়া করতে৷ লেখাপড়া শেষে চাকরি করছেন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পেপসি-তে৷ ২০০৬ সাল থেকে পেপসি-র সিইও তিনি৷ এ দায়িত্ব এতটাই সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন যে, ২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ১৩তম স্থানটি দিয়েছে তাঁকে৷
ছবি: AP
অ্যাডোব সিস্টেম সামলাচ্ছেন শান্তনু নারায়ণ
মাইক্রোসফট-এর সিইও নাদেলার মতো শান্তনু নারায়ণও স্কুল পর্বে লেখাপড়া করেছেন হায়দ্রাবাদে৷ হায়দ্রাবাদ পাবলিক স্কুলের ছাত্র ছিলেন দু’জনই৷ শান্তনুর প্রথম চাকরি অ্যাপল-এ৷ সেখান থেকে তিনি হয়েছেন অ্যাডোব সিস্টেমের সিইও৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
নোকিয়ার ‘সর্বেসর্বা’ রাজীব সুরি
নোকিয়ার সিইও রাজীব সুরি মনিপাল আইআইটি-র ছাত্র ছিলেন৷ নোকিয়ায় ঢুকেছিলেন ১৯৯৫ সালে৷ এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও হয়ে এখন তিনি মনিপুর তো বটেই, ভারতেরও গর্ব৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Rekomaa
মাস্টারকার্ড-এর সিইও অজয়পাল সিং বাঙ্গা
২০১০ সাল থেকে মাস্টারকার্ড-এর সিইও-র দায়িত্বে আছেন অজয়পাল সিং বাঙ্গা৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা অজয়পাল এই প্রতিষ্ঠানে ‘অজেয়’ হওয়ার আগে আহমেদাবাদের ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ-ও করেছেন৷