চলতি অর্থবছরে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক তাতে বাংলাদেশ ভারত বা পাকিস্তানকেই শুধু নয় বরং শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৯/২০ অর্থ বছরে (৩০ জুন) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে৷পরবর্তী অর্থ বছরে যা আরো খানিকটা বেড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে৷
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ২০২০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে৷ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় দেশজ বিনিয়োগ ও দেশজ চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনও বাড়বে৷ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হওয়ায় এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক৷
ভারতে ব্যাংক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তেমন বিনিয়োগ আসে না, যে অবস্থা আরো দীর্ঘমেয়াদী হবে৷ ফলে ২০১৯/২০ অর্থ বছরে (৩১ মার্চ) দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কমে ৫ শতাংশ হবে৷ তবে পরবর্তী অর্থবছরে তা আবার বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হবে৷
পাকিস্তানে ২০১৯/২০ অর্থ বছরে (জুন ৩০) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশ হবে৷ পরবর্তী অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ শতাংশ হতে পারে৷
২০ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে ধীরে ধীরে উন্নতির মাধ্যমে গত বছরের তুলনায় এবছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা দ্রুত হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৯ সালে বিশ্বে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এবার যেটা ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে৷
যেসব দেশের মানুষ কর দিতে বেশি আগ্রহী
যেসব দেশের মানুষ অবকাঠামোগত উন্নয়নে কর দিতে বেশি আগ্রহী তার তালিকা প্রকাশ করেছে ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অব কমনস ও ইকোনোমিক্স৷ সেখানে দেখা গেছে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে জার্মানি৷ ১৪টি দেশের সেই তালিকায় বাংলাদেশও আছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/M. Weber
যেমন করে জরিপটি
নাগরিকদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর দিতে বেশি আগ্রহের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি করতে ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অব কমনস অ্যান্ড ইকোনোমিক্স ও জাতিসংঘ যৌথভাবে কাজ করেছে৷ ১৪১টি দেশের ১৬ হাজার অধিবাসীর মতামতের ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়৷ এবং সূচক ধরা হয়েছে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/M. Weber
শীর্ষ দেশ জার্মানি
বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত করের বোঝা বহনকারী দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে৷ ১৫ শতাংশ বেশি কর দিতে হয় এই দেশের জনগনকে৷ তার পরেও দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কর দিতে আগ্রহী জার্মান জনগণ৷ জরিপে ১০ পয়েন্টের মধ্যে ৭ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
দ্বিতীয় দেশ কম্বোডিয়া
ব্যাসেল ইনস্টিটিউটের করা তালিকার দ্বিতীয় দেশ কম্বোডিয়া৷ কৃষি ও পর্যটন নির্ভরশীল এই দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা উন্নত না হলেও জনগণের কর দেয়ায় আগ্রহীদের ভিত্তিতে তারা বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে৷ জরিপে দেখা গেছে ৬ দশমিক ৭ পয়েন্ট পেয়েছে দেশটির জনগণ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.C. Sothy
ছোট দেশের বড় অর্থনীতি
অস্ট্রিয়া ইউরোপের সবচেয়ে ছোট দেশগুলোর একটি৷ মাত্র ৮৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই দেশটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বেশ উপরেই রয়েছে৷ আর দেশটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়বার মতো৷ সেই দেশের জনগন অবকাঠামোগত উন্নয়ণ কর দিতে আগ্রহী বলে ৬ দশমিক ৪ পয়েন্ট পেয়ে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে তাঁরা৷
ছবি: Getty Images/A.Koerner
তালিকায় কসোভো!
সার্বিয়া থেকে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করেছিল ২০০৮ সালে৷ এর ২ বছর পর পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি মেলে৷ ছোট একটি দেশের জনসংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখ, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২২০ জন বসবাস করে এই দেশে৷ কিন্তু ব্যাসেল ইনস্টিটিউটের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে দেশটি৷ ৫ দশমিক ৬ পয়েন্ট পেয়েছে দেশটির জনগণ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nimani
বাংলাদেশ পঞ্চম!
এমনিতেই প্রচলিত আছে, কর দিতে অনাগ্রহীদের তালিকায় নাকি শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের জনগণ! ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যার অন্যতম উৎস ভ্যাট৷ সেখানে আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যের চেয়ে ৭২ হাজার ৩০৯ কোটি কম৷ অথচ বাংলাদেশের জনগণের অবকাঠামোগত কর দেয়ায় আগ্রহ খুবই প্রশংসনীয়৷ ১০-এর সাড়ে ৫ পেয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: Imago/Xinhua
সহিংসতার মধ্যেও কর দানে আগ্রহী
ব্যাসেল ইনস্টিটিউটের এই তালিকায় সবচেয়ে বিস্ময় জাগিয়েছে আফগানিস্তান৷ তালেবান হামলা, জঙ্গি সংঘাত সব ছাপিয়ে দেশটির জনগণ কর বিষয়ক আগ্রহের কারণে পেয়েছে ৫ দশমিক দুই পয়েন্ট৷ পাকিস্তানও পেয়েছে ৫ দশমিক ২ পয়েন্ট৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Gul
ছোট দেশের বেশি আগ্রহ
ব্যাসেল ইনস্টিটিউটের জরিপ বলছে, ছোট ছোট ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশগুলোর জনগণই নাকি অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর দিতে বেশ আগ্রহী৷ নেপাল, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, আলবেনিয়া, সার্বিয়ার মতো দেশগুলো্র জনগণের চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের উন্নয়নে কর দিতে বেশ আগ্রহী৷ এই দেশগুলো ৪ দশমি ৯ থেকে চার পর্যন্ত পয়েন্ট পেয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Kober
কর দিতে অনিচ্ছুক!
দেশের মানুষ অবকাঠামোগত উন্নয়নে কর দিতে আগ্রহী নয়, এমন দেশের তালিকায় আছে মন্টেনেগ্রো, ব্রাজিল এবং মেসিডোনিয়া৷ এই তিন দেশের জনগণের পয়েন্টের তালিকা তিনের ঘরে৷ এখানে মন্টেনিেগ্রো ৩ দশমিক ৯, ব্রাজিল ৩ দশমিক চার এবং মেসিডোনিয়া ৩ দশমিক ২ পয়েন্ট পেয়েছে৷ আগামী মার্চ মাসে ব্যাসেলের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশিত হবে৷
ছবি: Getty Images/B. Mendes
9 ছবি1 | 9
কয়েকটি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশ গত বছরের সংকট কাটিয়ে নিজেদের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাবে, এই আশা থেকেই বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দিয়েছে৷ যদিও একই সঙ্গে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং আরো কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা হ্রাস পাবে৷
চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তার জেরে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে৷ শিল্পনির্ভর ইউরো অঞ্চলেও ‘ইন্ডাসট্রিয়াল অ্যাক্টিভিটি' হ্রাস পাওয়ায় জিডিপিতে নিম্নগতি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে৷
তবে ব্রাজিলের মত উদীয়মান অর্থনীতির দেশে গত বছরের তুলনায় মোট দেশজ উৎপাদন বাড়বে৷ মেক্সিকো ও তুরস্কে ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি প্রায় শূন্য ছিল, এ বছর ওই অবস্থার উন্নতি ঘটা উচিত বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক৷ ধীরে হলেও আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হচ্ছে৷ তবে গত দুই বছরের তুলনায় এবার প্রবৃদ্ধির গতি কমে যেতে পারে৷
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্রম নেতিবাচকগতি এবার থামবে বলা হয়েছে৷ সেইসঙ্গে ২০২১ সাল নাগাদ দেশটি প্রবৃদ্ধি আবারও অগ্রগতির পথে উঠে আসবে৷ কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ইরানের রাজনীতিতে যে চরম সংকট দেখা দিয়েছে তা বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসকে পুরো উল্টে দিতে পারে৷ বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন ইরানে এই সংকট তৈরির আগে করা৷
পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল ২০২০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে৷ যদিও বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই অঞ্চলের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা নিম্নগতি দেখা দিতে পারে৷ এ বছর দেশটির জিডিপি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে৷ তবে কলম্বিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের জিডিপি বাড়বে৷