1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের অর্থনীতি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চলতি বছরে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭৫ হলেও আগামীতে তা বেড়ে হবে অন্তত ৭ শতাংশ৷ সরকার প্রবৃদ্ধির বিজয় পতাকা ওড়াতে সক্ষম হবে মনে করলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না ভারত৷

ছবি: Fotolia/OlegD

গত সোমবার ২০১৭-১৮ সালের আর্থিক সমীক্ষা সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ তাতে দেখানো হয়েছে, আগামী অর্থ বর্ষে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার উঠে আসবে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে৷ এমনকি ৮ শতাংশও ছাড়াতে পারে৷ পাশাপাশি সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, নোটবন্দি, পণ্য পরিষেবা শুল্ক (জিএসটি) ইত্যাদির কারণে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে৷ সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামনিয়াম মনে করেন, রপ্তানি কিছুটা কম হয়, আমদানি বেড়ে গেছে৷ অথচ দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এইসব সাময়িক সংস্কার জরুরি ছিল৷ তবে ভবিষ্যতে সম্ভবত এর আর দরকার পড়বে না৷ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্বচ্ছন্দ গতিতে এগিয়ে যাবে আশা করা যায়৷ রপ্তানিতে ফের গতি আসছে৷ তবে হ্যাঁ, ঝুঁকি থাকতে পারে অন্যত্র৷ যেমন তেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা৷ শেয়ার বাজারে আচমকা ধস নামার আশংকা৷ কাজেই সরকারকে এগুতে হবে সতর্কভাবে৷

সমীক্ষা রিপোর্টে কৃষি ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ সরকারের চলতি আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্টে যে আর্থিক বিকাশের রঙীন ছবি তুলে ধরা হয়েছে, তার পাশাপাশি অন্যান্য সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশের আর্থিক প্রগতি অসম৷ অধিকাংশ নাগরিক তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত৷ যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ৷ ইনক্লুসিভ গ্রোথ বা সর্বজনীন উন্নয়নের মাপকাঠিতে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ৭৪টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৬২তম৷ আরেকটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অক্লফ্যামের সমীক্ষা রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ২০১৭ সালে ভারতের জাতীয় উৎপাদিত সম্পদের ৭৩ শতাংশ গেছে এক শতাংশ মানুষের হাতে৷ এই অতি-ধনীদের ভাণ্ডারে যে সম্পদ জমা পড়েছে, তার অর্থমূল্য কেন্দ্রের বাৎসরিক বাজেটের সমান৷ অন্যদিকে দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় এক বছরে এক শতাংশও বাড়েনি৷

অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে তুলে ধরা হয়েছে, ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি পশ্চিমের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো৷ অথচ নাগরিকদের জীবনযাপনের গুণগতমানে তার প্রতিফলন ঘটছে না কেন? দেশের মানুষের জীবনধারণের মান জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধির হার দেখে বিচার হয় না৷ বিচার হয় তার সামগ্রিক ভূমিগত বাস্তবতার নিরিখে৷ প্রতিবছর মহানগরীগুলির জীবনযাত্রার দিকে তাকালেই বোঝা যায়৷ বস্তির পর বস্তি বাড়ছে৷ বাচ্চারা শুয়ে আছে ফুটপাথে৷ চারপাশে নোংরা আবর্জনা৷ খোলা নর্দমা৷ মোদী সরকারর স্বচ্ছ ভারত মিশন যেন প্রহসন৷ টয়লেট ছাপিয়ে নোংরা বাইরে বয়ে যাচ্ছে৷ পরিষ্কার হয় না নিয়মিত৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানে গরিবদের জীবনযাত্রায় কি কোনো পরিবর্তন এসেছে? না, আসেনি৷ তাঁরা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে আছেন৷ আর্থিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান তাঁদের জীবনধারণে অন্তত কোনো ফারাক আনতে পারেনি৷ এখনও প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন পেটে খিদে নিয়ে ঘুমাতে যায়৷

‘‘উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার মানেই যে জীবনধারণের মান খুব ভালো হবে, তা কিন্তু নয়’’

This browser does not support the audio element.

কেন? ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাশগুপ্ত বললেন, প্রবৃদ্ধির এই হারে বড় কিছু দেখা ঠিক নয়৷ উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার মানেই যে জীবনধারণের মান খুব ভালো হবে, তা কিন্তু নয়৷ আমাদের প্রবৃদ্ধির হার চীনকে ছাড়িয়ে গেছে তার মানে কিন্তু এই নয় যে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে আমরা চীনকে ছাড়িয়ে গেছি৷ চীনের মাথাপিছু জিডিপি আর আমাদের মাথাপিছু জিডিপি এক কথা নয়৷ ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান বলছে, চীনের মাথাপিছু জিডিপি যেখানে ৬০০০ মার্কিন ডলার সেখানে আমাদের মাথাপিছু জিডিপি এক হাজার ডলারের নীচে৷ কথা হচ্ছে, ‘গ্রোথ রেট’ যদি বছরের পর বছর ধরে রাখা যায়, তাহলেই জীবনধারণের মান উন্নত হবে৷

অথচ এক শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে আকাশ প্রমাণ৷ একশ’ কোটি টাকার মালিকের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে৷ সরকারের মতে, নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এটা খারাপ লাগবে৷ কিন্তু দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এটা হওয়া সম্ভব৷ আর্থিক বৈষম্য কমিয়ে আনলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আয় ও সম্পদের বিচারে ওপরের দিকে ওঠার প্রচেষ্টা কমে যেতে পারে৷ ২০১৮ সালের বাজেট সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ আগামী বছর ভোট৷ তার আগে এটি শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট৷ আবার মোদীর অচ্ছে দিনের স্বপ্নের হাতছানি৷ দাভোসে প্রধানমন্ত্রী যখন ভারতের অতি- সম্ভাবনাময় বাজারের দিকে বিশ্বকে টানতে চান, তখন দেশের ঘরে ঘরে আর্থিক সাম্যের প্রদীপটি কিন্তু নিভু নিভু৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ