1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণের মামলা, প্রভাবশালীদের চাপ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ মে ২০১৭

বাংলাদেশে এক হাজারে মাত্র চারজন আসামি ধর্ষণ মামলায় সাজা পায়৷ আর বছরে মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয়৷ আইনের ত্রুটি, ফরেনসিক টেস্টের সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের চাপ এবং সামাজিক কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷

Symbolbild Protest gegen Vergewaltigung
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

বাংলাদেশে এই সময়ে সবচেয়ে আলেচিত ঢাকায় দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা৷ গত ৪ মে মামলা হলেও এখনো ৫ আসামির কেউ ধরা পড়েনি৷ মামলাটির মধ্যে বাংলাদেশের ধর্ষণ মামলা, তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ার সব দুর্বলতা স্পষ্ট৷

ঢাকার বনানীতে একটি হেটেলে ২৮শে মার্চ জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে দুই তরুণীকে হোটেল রুমে ১৩ ঘণ্টা আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয়৷ তারা ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও করে৷ এরপর তাদের প্রাণনাশের হুমকি এবং ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে মামলা থেকে বিরত রাখা হয়৷ শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তারা ৪ মে বনানী থানায় মামলা করতে যান৷ সেখানকার পুলিশ তাদের দুই দিন ঘুরিয়ে অবশেষে ৬ মে মামলা নেয়৷

মামলার পর তরুণীদের ফরেনসিক পরীক্ষা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সাপোর্ট সেন্টারে৷ কিন্তু মেডিক্যাল টেস্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যাবে কিনা, এ বিষয়ে নিশ্চিত নন চিকিৎসকরা৷ ১৫ দিন পর ফলাফল জানা যাবে৷

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ধর্ষণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষা হলে ভালো৷ এই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শারীরিক প্রমাণ পাওয়া সহজ৷ দেরি হলে প্রমাণ বিলীন হয়ে যায়৷ কিন্তু আমাদের দেশে ভিকটিমদের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ১০-১২ দিন পর৷ ফলে এখানেই ধর্ষকের ছাড়া পাওয়ার সুবিধা তৈরি হয়ে যায়৷’’

‘‘ধর্ষণের পর প্রভাশালীরা সালিশসহ নানা বাহানায় সময় পার করে’’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত ধর্ষণের পর প্রভাশালীরা সালিশসহ নানা বাহানায় সময় পার করে৷ তারপর থানায় গেলে থানা নানাভাবে মামলা নিতে দেরি করে৷ ফলে ধর্ষণ প্রমাণ কঠিন হয়ে পড়ে৷’’

কুমিল্লার তনু, দিনাজপুরের পূজার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে৷ তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে৷ তনু ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে সেনানিবাসের মধ্যে৷ সেখানেও ধর্ষকরা ঢাকার ঘটনার মতো প্রভাবশালী৷

মানবাধিকার কর্মী এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট দিলরুবা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রভাবশালীরা কয়েকভাবে ধর্ষণ মামলাকে দুর্বল করার চেষ্টা করে৷ তারা প্রথমে চেষ্টা করে মেডিক্যাল টেস্টকে দুর্বল করতে৷ বাদি এবং সাক্ষী উভয়কে চাপ ও হুমকি দিয়ে সমঝোতা করাতে এবং আলামত নষ্ট করতে৷ আর এই কাজে প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ এবং পুলিশকে কাজে লাগায়৷ বনানীর ধর্ষণের ঘটনায় যা স্পষ্ট হয়েছে৷’’

অ্যাডভোকেট দিলরুবা শারমিন আরো বলেন, ‘‘পুলিশ প্রভাবশালীদের হয়ে ধর্ষণের শিকার যারা হন, তাদের ‘চরিত্র হরণ’ করে৷ একই সঙ্গে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠাতে দেরি করে, যাতে ঘটনা প্রমাণ করা না যায়৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘আদালতে ধর্ষণ মামলার বিচার প্রক্রিয়াও ত্রুটিপূর্ণ৷ ধর্ষণকে যেভাবে আদালতে প্রমাণ করতে হয়, সাক্ষ্য আইন মেনে তা অনেক জটিল এবং অবমাননাকর৷ ফলে অনেক ভিকটিম মামলা করলেও আর শেষ পর্যন্ত আদালতে যান না৷’’

‘‘প্রভাবশালীরা কয়েকভাবে ধর্ষণ মামলাকে দুর্বল করার চেষ্টা করে’’

This browser does not support the audio element.

আদালত সূত্র জানায়, সারাদেশে বিচারের জন্য ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের দেড় লক্ষাধিক মামলা ঝুলে আছে৷ এসব মামলার বিচার চলছে ঢিমেতালে৷ বছরে নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা৷ আর সাজা পাচ্ছে হাজারে সাড়ে মাত্র ৪ জন আসামি৷

২০০১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসা সহায়তা নিতে আসেন ২২ হাজার ৩৮৬ জন নারী৷ তার মধ্যে মামলা হয় পাঁচ হাজার তিনটি ঘটনায়৷ এর মধ্যে ৮০২টি ঘটনায় রায় দেয়া হয়েছে৷ শাস্তি পেয়েছে ১০১ জন৷ রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ ভাগ৷ আর সাজার হার ০.৪৫ ভাগ৷

পুলিশি তদন্তে ত্রুটি এবং অবেহেলার কারণেই প্রধানত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ আছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির নেতিবাচক দিক আর আছে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা৷

আইনজীবী দিলরুবা শারমিন জানান, ‘‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে ৬ মাসের মধ্যে এসব মামলার বিচার শেষ করার বিধান আছে৷ কিন্তু নানা অজুহাতে তা শেষ হয় না৷ তাই আমি মনে করি, এসব মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে নিলে দ্রুত বিচার পাওয়া যাবে৷’’

প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ