জার্মানির হাইওয়েতে বিশাল মাপের ট্রাক দেখা যায়৷ চালকদের বিশ্রামেরও কড়া নিয়ম রয়েছে৷ কিন্তু মালপত্র চুরির আশঙ্কা থেকেই যায়৷ এবার হাইটেক তিরপলের মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ট্রাক ড্রাইভারদের মনে চুরি অথবা ডাকাতির ভয় জাগে৷ ট্রাক বোঝাই মালপত্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো তাঁদেরই হাতে! টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার অলিভার মেচকে বলেন, ‘‘ট্রাকে ভরা মালপত্র শুধু এক তিরপল দিয়ে ঢেকে অত্যন্ত প্রাচীন পদ্ধতিতে সুরক্ষিত রাখা হয়৷ কাঁচি বা ছুরি দিয়ে কেটে ফেললেই মালপত্র নাগালে চলে আসে৷'' আরেক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাউকে হেন্শ বলেন, ‘‘আজ সব মানুষের নিরাপত্তার চাহিদা রয়েছে৷ বেড়ে চলা অপরাধের প্রেক্ষাপটে সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে৷''
তন্তু ও টেক্সটাইলের বিশেষ প্রয়োগ সম্পর্কে এঁরা দু'জনই বিশেষজ্ঞ৷ পরিবহণ ক্ষেত্রের জন্য তাঁরা এমন তিরপল তৈরি করছেন, যা চুরি বন্ধ করবে৷ সেটি ছিঁড়ে ফেললেই অ্যালার্ম বাজবে৷ শুনতে সহজ মনে হলেও এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া৷ ফ্রাউকে হেন্শ বলেন, ‘‘শুরুতে আমরা সাধারণ তামার তার কাপড়ের মধ্যে বুনে দিয়েছিলাম৷ তামা ও অন্য তার ব্যবহার করতে পেরে আমরা গ্রিড ও গড় মাপও স্থির করতে পারলাম৷''
বিশেষভাবে প্রস্তুত করা তাঁত যন্ত্র সর্বোচ্চ ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ সেন্টিমিটার প্রস্থের গ্রিডের মধ্যে তামার তার বসাতে পারে৷ সেই তার বিদ্যুৎ বহন করতে পারে৷ অর্থাৎ ছুরি চালালে তার নষ্ট হবেই এবং তখন সতর্কবার্তা চলে যাবে৷ আসল চ্যালেঞ্জ হলো এই তন্তুর সঙ্গে অ্যালার্ম ব্যবস্থা যুক্ত করা৷ অলিভার মেচকে বলেন, ‘‘এটাই আসল সমস্যা৷ টেক্সটাইলের মধ্যে কন্ডাকটার পাথ ও চিপের মতো ইলেকট্রনিক উপকরণ ঢোকাতে হবে৷ অর্থাৎ টেক্সটাইলের উপর চিপ প্রয়োগ করতে হবে এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে৷ এখনো পর্যন্ত টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিক্স দুই ভিন্ন জগৎ ছিল৷''
ইউরোপের কিছু কঠিন ও মজার ট্রাফিক আইন
খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয় ইউরোপে৷ পথচারীর গায়ে কাঁদা বা পানি ছিটালে জরিমানা, বেশি জোরে বা বেশি আস্তে চালালে জরিমানা, এমনকি নিজের গাড়ি পরিষ্কার না করলেও রেহাই নেই৷ ছবিঘরে থাকছে এমনই কিছু ট্রাফিক আইনের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Förster
পানি ছিটাবেন না
ইউরোপের রাস্তায়ও বৃষ্টি হলে একটু-আধটু পানি জমে৷ অনেক সময় জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়৷ তবে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সদা তৎপর৷ এমনকি কোনো চালক অসতর্কতাবশত কারো গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলে, সঙ্গে সঙ্গেই আইন দাঁড়ায় ভুক্তভোগীর পাশে৷ ব্রিটেনে এ অপরাধে ১০০ পাউন্ড জরিমানা হয় চালকের৷ ‘ওভারটেক’ করে মাঝের লেন দখল করে চালাতে শুরু করলে আরো বিপদ৷ জরিমানার অঙ্কটা তখন ১ হাজার পাউন্ড বা ১,৪০০ ইউরো!
ছবি: imago/Petra Schneider
গাড়ি পরিষ্কার না করলেও জরিমানা!
রুমানিয়ার রাস্তায় ভুলেও কখনো নোংরা গাড়ি নিয়ে নামবেন না৷ আপনার গাড়ি শহরের সৌন্দর্য হানির কারণ হলে কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ আপনাকে ছাড়বে না৷ এমনকি শুধু নাম্বারপ্লেট, হেডলাইট বা পেছনের লাইট পরিষ্কার না করলেও গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina
বেশি ধীরে চালালেও মুশকিল
সুইজারল্যান্ডে কখনো কখনো একটু বেশি আস্তে গাড়ি চালালেও সমস্যা৷ বিশেষ করে তিন লেনের রাস্তার একেবারে বাঁ দিকের লেন দিয়ে কেউ নিজের খুশিমতো শামূকের গতিতে গাড়ি চালাবে, তা হবে না৷ এমন ক্ষেত্রে কোনো গাড়ির গতিবেগ যাতে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল)-এর কম না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে৷ আগামী ২০১৬ সাল থেকে দেশে এমনই একটি আইন কার্যকর করবে সুইস সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বরফ হইতে সাবধান
শীতে গাড়ির দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়৷ নভেম্বর থেকে এপ্রিল – এই পাঁচমাস আইসল্যান্ডে রাস্তায় রাস্তায় বরফের কথা মাথায় রাখতেই হয়, লাগাতে হয় বিশেষ চাকা৷ অস্ট্রিয়া, এস্টোনিয়া, ফিনল্যান্ড এবং জার্মানিতে শীতের সময় এমন চাকা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিজের স্বার্থেই বেশির ভাগ মানুষ শীত এলে চাকা বদলে নেন৷ আসলে বরফ পড়লে ওই ধরনের চাকা ছাড়া গাড়ি চালানো কখনো কখনো অসম্ভব হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Heimken
পার্কিং
ফিনল্যান্ডে রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়৷ কখন কোন রাস্তা পরিষ্কার করা হবে, তা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কিংবা ইন্টারনেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, এমনকি অনেকক্ষেত্রে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়৷ গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোথাও রেখে দেবেন সে উপায়ও নেই৷ কতক্ষণের মধ্যে সরাতে হবে তা প্রথমে জানানো হয় এসএমএস-এ, তারপরও না সরালে নগর কর্তৃপক্ষই সরিয়ে দেবে! তবে আপনার গাড়ি সরানোর খরচটা কিন্তু আপনার!
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Wennström
দিনেও জ্বালাতে হবে আলো
সুইডেন, নরওয়ে আর ডেনমার্কে গাড়ি চালানো শেখানোর সময়ই বলে দেয়া হয়, ‘যখনই আঁধার নামবে, তখনই আলো জ্বালাতে হবে৷’ তার মানে, দিনের বেলায় মেঘ করলে, কিংবা শীতের কুয়াশাঢাকা আকাশের নীচেও গাড়ির লাইট জ্বালানোটা বাধ্যতামূলক৷ ২০১১ সাল থেকে সব ইইউভুক্ত দেশেই গাড়িতে ‘ডে-টাইম রানিং লাইট’ রাখার আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ ‘ডে-টাইম রানিং লাইট’ এমন এক বাতি, যা গাড়ির চাকা ঘুরলেই টুক করে জ্বলে ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Heimken
চশমা একটা কেন?
চোখে সমস্যা আছে? স্পেনে গাড়ি চালাতে যান, ড্রাইভিং লাইসেন্সেই তা লিখে দেয়া হবে৷ আর একবার লিখে দিলে সবসময় আপনাকে দু-দু’টো চশমা সঙ্গে রাখতে হবে৷ একটা চোখে, অন্যটা গাড়ির ড্যাশবোর্ডে৷ চশমা না পরার কোনো অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা৷ ‘চশমাটা বাসায় রেখে চলে এসেছি’ বললেও মাফ নেই৷ জরিমানা গুনতেই হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সময় আর জায়গা অনুযায়ী গতি
জার্মানির অটোবান, অর্থাৎ হাইওয়েতে গাড়ির নির্দিষ্ট কোনো গতিসীমা নেই৷ তবে যেভাবে খুশি চালানোর উপায়ও নেই৷ গাড়ি চালাতে হয় জায়গা এবং সময় বুঝে৷ সে অনুযায়ী নির্ধারিত গতিসীমা লেখা থাকে রাস্তার পাশে৷ লোকালয়েও স্থান এবং সময়টাই গুরুত্বপূর্ণ৷ স্কুলের সামনে নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করলে জরিমানা তো হবেই, বাড়তি শাস্তি হিসেবে ‘পেনাল্টি পয়েন্ট’-ও যোগ হবে আপনার রেকর্ডে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Förster
8 ছবি1 | 8
টেক্সটাইল নরম, তার বেশ শক্ত৷ কাপড় ধোয়া যায়, কিন্তু ইলেকট্রনিক উপকরণ ধোয়া চলে না৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে৷ চিপ কীভাবে বসানো হবে? সোল্ডারিং করে, বুনে দিয়ে, ওয়েল্ডিং করে নাকি আঠা দিয়ে? কীভাবে সেটি ওয়াটারপ্রুফ করে তোলা যাবে? আবহাওয়ার চরম তারতম্য ও ৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রার ফারাক সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে৷ পদার্থবিদ ক্রিস্টিনে কালমায়ার বলেন, ‘‘কাপড়ের তিরপলের সহ্যশক্তির সঙ্গে ইলেকট্রনিক উপকরণকে পাল্লা দিতে হবে৷ এক্ষেত্রে কাপড় ধোয়ার প্রক্রিয়া বড় চ্যালেঞ্জ৷ বিস্ময়কর মনে হলেও পানি অথবা সাবান ক্ষতি করে না, ওয়াশিং মেশিনের ওয়াশ টাবের ঘোরার প্রক্রিয়াই আসল সমস্যা৷'' ১,০০০ ঘণ্টার চরম অবস্থা, ৮৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা ও বাতাসে ৮৫ শতাংশ আর্দ্রতা সহ্য করার ক্ষমতা আজ আর কোনো সমস্যা নয়৷ এমন হাইটেক তিরপল চোরেদের দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে৷ সেটি ছিঁড়লেই চালকের আসন অথবা নিরাপত্তা সংস্থার দপ্তরে অ্যালার্ম বেজে ওঠে৷ এই তিরপল ব্যবহার করে ট্রাক ড্রাইভাররা বিশ্রাম করার সময় নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন৷