পত্রপত্রিকায় দেখলাম এখন পর্যন্ত প্রশাসনের দুইশ'রও বেশি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ এদের একশ' জনের মত এখনো অসুস্থ৷ মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
এই আক্রান্তরা কেউ মন্ত্রণালয়ে, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা৷
মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হবার পর থেকে এক মাস আগ পর্যন্তও সংখ্যাটি ছিল অর্ধেক৷ গেল এক মাসে তা দ্বিগুণ হয়ে গেল৷ পুলিশেও গেল রোববার পর্যন্ত মোট সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় নয় হাজার৷ ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসাকর্মীসহ ফ্রন্টলাইনের সব পেশার মানুষ করোনায় কমবেশি আক্রান্ত৷ এদের যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের করোনায় সংক্রমণ হবার ঝুঁকি বেশি এটা বলাই বাহুল্য৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, যারা অফিসে রয়েছেন, তারা কেন এত আক্রান্ত হচ্ছেন? হতে পারে, যেহেতু টেস্টের সংখ্যা বেড়েছে, সে কারণে কর্মকর্তাদের মাঝেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে৷
আমরা দেখেছি, অনেকে অল্প আলামত দেখা দিলেও করোনার পরীক্ষা করাতে যেতে চান না৷ অথচ গবেষকেরা বারবারই বলেছেন, সাধারণ সর্দি কাশি জরের লক্ষ্মণ বা কখনো কোন লক্ষ্মণ ছাড়াও করোনার সংক্রমণ হতে পারে৷ এপ্রিল থেকে সরকার মাঠ পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ যে কেউ সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করলে অর্থ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ এই প্রণোদনা হয়ত অনেককে পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত করেছে, যা ইতিবাচক৷
এছাড়া পত্রিকাগুলো বলছে, এ পর্যন্ত প্রশাসনের আক্রান্ত ২১১ জন বিসিএস কর্মকর্তার ১০৪ জন মাঠ প্রশাসনে কর্মরত৷ শুরু থেকেই শুনে আসছি, সচিবালয়ে সংক্রমণ বন্ধ নেই৷ কিন্তু এসব অফিস বা মন্ত্রণালয়গুলোতে কি পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে? যদি থাকে তাহলে কেন এত সংক্রমণ? সচিবালয়ে নানা কাজে বাইরে থেকে মানুষকে আসতে হয়৷ এছাড়া অফিসগুলোতে যেভাবে এখনো ফাইল চালাচালির পুরোনো সিস্টেম বহাল আছে, তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি সেখানে আছে বৈকি৷ এই করোনা উপলক্ষে অন্তত এই ব্যবস্থা আরো আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে৷
এছাড়া সচিবালয়ে অনেক কর্মী আছেন, যাদের কাজের পরিধি এমন যে, একটু ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া থাকলে সহজেই তারা ঘরে বসে কাজ করতে পারতেন৷ এর বাইরে অনেক কর্মীর প্রয়োজনীয়তা এই আধুনিক যুগে ফুরিয়েছে৷ তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করা উচিত৷ সেই পুরানো সিস্টেমের যুগ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতেই হবে, করোনা অন্তত সেই তাগিদটি দিচ্ছে আমাদের৷
মাস্ক, গ্লাভস, পিপিইর বর্জ্য যেখানে-সেখানে
ব্যবহারের পর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীগুলো মানুষ ফেলছেন রাস্তাঘাটে, বাড়ির আশেপাশে৷ পিপিই পড়ে থাকছে যেখানে-সেখানে৷ ঢাকা বিভিন্ন জায়গার এমন কিছু চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/S. Hossain
হাসপাতালের বর্জ্য
নিয়ম অনুযায়ী এসব বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করে তারপর সুরক্ষা ব্যাগে ভরে রাখার কথা৷ কিন্তু ফেলে রাখা হয়েছে হাসপাতালের চত্বরে৷ ছবিটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে তোলা৷
ছবি: DW/S. Hossain
খোলা জায়গায় ব্যবহৃত মাস্ক
অনেক অসচেতন ব্যক্তি ব্যবহৃত মাস্ক ও গ্লাভস যেখানে-সেখানে ফেলে আরেক ঝুঁকি তৈরি করছেন৷ এই ছবিটি তোলা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে৷
ছবি: DW/S. Hossain
ময়লা-আবর্জনায় গ্লাভস
ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত জিনিসপত্রের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে গ্লাভস৷
ছবি: DW/S. Hossain
ঝুলছে বাড়ির ফটকে
শুধু রাস্তা বা ফুটপাত নয়, ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসের আধিক্য দেখা গেছে পয়ঃনিষ্কাশন খাল, দুই বাড়ির মাঝখানের খালি জায়গা, রাস্তার পাশের খালি জমি, বাড়ির গেটসহ বিভিন্ন স্থানে৷ এই ছবিটি মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ির ফটকের৷
ছবি: DW/S. Hossain
আবর্জনায় সুরক্ষা সামগ্রী
ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস-পিপিই অন্যান্য আবর্জনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার৷ ধানমন্ডিতে একটি ফুটপাতের পাশ থেকে এই ছবিটি তোলা৷
ছবি: DW/S. Hossain
ঘরের আঙিনায়
ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস-পিপিই অনেকে বাসাবাড়ির সামনেই ফেলছেন৷ এই ছবিটি তোলা মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প থেকে৷
ছবি: DW/S. Hossain
সবুজেও হানা
ঢাকার একটি রাস্তার সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধক প্রকল্পে গ্লাভসটি পড়ে আছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
হাসপাতালের বাইরে
হাসপাতালগুলোর বাইরে রোগী বা তাদের স্বজনরা ইচ্ছেমতো সুরক্ষা সামগ্রীগুলো ফেলছেন৷ সেগুলো ঠিকমতো পরিষ্কারও করা হচ্ছে না৷ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থেকে এই ছবিটি তোলা৷
ছবি: DW/S. Hossain
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি
প্লাস্টিকের তৈরি এসব সুরক্ষা সামগ্রী পরিবেশের যেমন ক্ষতি করছে তেমনি ভাইরাস সংক্রমণেও সহযোগী হতে পারে৷ মোহাম্মদপুরের কলেজগেটে একটি চায়ের দোকানের সামনে পড়ে আছে একজোড়া গ্লাভস৷
ছবি: DW/S. Hossain
ফুটপাতে পিপিই
ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে একটি রাস্তার পাশে অন্য আবর্জনার সঙ্গে পড়ে আছে পিপিই৷
ছবি: DW/S. Hossain
সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেছেন, গৃহস্থালির সঙ্গে সংক্রামক বর্জ্য মেশালে সিটি কর্পোরেশন ময়লা সংগ্রহ করবে না৷ সংক্রামক বর্জ্য পৃথকভাবে রাখার জন্য ডিএনসিসি বাসাবাড়িতে তিন লাখ ব্যাগ বিতরণ করবে বলেও জানান তিনি৷