1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘প্রশাসনে অর্ধেক নারী হলে নারীদের অধিকার সংরক্ষিত হবে’’

২৫ জুন ২০২১

বাংলাদেশে লিঙ্গবৈষম্য কি কাঙ্খিত হারে কমছে? সাবেক সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ড. নমিতা হালদার তা মনে করেন না৷ তার মতে, প্রশাসনে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে এখনো অনেক দূর যেতে হবে বাংলাদেশকে৷

ছবি: Samir Kumar Dey/DW

ডয়চে ভেলে : আপনি তো দীর্ঘদিন প্রশাসনে চাকরি করেছেন, প্রশাসনে নারীদের সংখ্যা ১০ বছর আগের তুলনায় কেমন বেড়েছে?

ড. নমিতা হালদার : পরিসংখ্যানটা এই মুহুর্তে বলতে পারবো না। তবে যেভাবে বাড়ার কথা ছিল, সেভাবে বাড়েনি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য যেসব ছোটখাটো সেক্টর আছে ফ্যাক্টরি, কোম্পানি- সেখানে যেভাবে বেড়েছে, সিভিল সার্ভিসে সেভাবে বাড়েনি। 

যতটুকু বেড়েছে এর মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আপনি লক্ষ্য করেছেন?

সচেতনতা বেড়েছে। ভীষণভাবে বেড়েছে। পারিবারিক সচেতনতা ছাড়াও শিক্ষার সুযোগ বেড়েছে। আগে তো মেয়েরা জানতোই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়। যখন পিতা-মাতা বা পরিবারের সদস্যরা জানতে পারলো, তাদের চোখ কান খুলে গেল, তখন থেকে তারা কিন্তু অংশ নিতে শুরু করেছে। 

মানুষের মাইন্ডসেটে কি কোন পরিবর্তন এসেছে?

এখানেই একটু কথা আছে। বড় দুঃখের বিষয়। যে পরিবার মেয়েটিকে এগিয়ে দিচ্ছে সেই পরিবার ছাড়া সত্যিকার অর্থে অন্যদের মেয়েটির এগিয়ে আসাকে স্বাগত জানানোর বিষয়ে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। চিন্তাভাবনায় এখনো রক্ষণশীল।

এখন প্রশাসনে কত শতাংশ নারী আছেন?

১০ শতাংশ তো হবেই না। এরকম, কাছাকাছি হবে।

সম্প্রতি  প্রশাসনে নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার' বলার একটা চল শুরু হয়েছে? ম্যাডাম বা স্যার বলাতে কি কাজের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়ে?

আমি ব্যক্তিগতভাবে স্যার বলার পক্ষে নই। বিভিন্ন ফোরামে আমি এর প্রতিবাদও করেছি। মেয়েরা একটু কপি করার চেষ্টা করে। কিন্তু একটা মেয়ের যে নিজস্ব পরিচয় আছে, সেই পরিচয় নিয়ে চললে তো কোনো বাধা নেই। সে পোশাক পরছে আলাদা, তার আচার-আচরণ আলাদা, তাহলে হঠাৎ করে কেন তাকে ওইভাবে ডাকতে হবে? এটা আমি সমর্থন করি না। প্রশাসনে নারীদের এই প্রবণতা বাদ দিতে হবে। এটা পৃথিবীর কোথাও, এমনকি ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতেও চলে না, তাহলে এখানে হঠাৎ করে আমরা স্যার হয়ে গেলাম? এটা ঠিক হলো না।

প্রশাসনে নারীর সংখ্যা বাড়ার ফলে নারীদের অধিকার বেড়েছে কতটুকু?

কাগজে কলমে যতটুকু আছে। যেহেতু একটা মেয়েকে কেউ আটকাচ্ছে না, সে স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালতে যেতে পারছে। এখানে তার অধিকার অবারিত। কিন্তু যখন অন্য ক্ষেত্রের সঙ্গে তার সম্পদের অধিকারের বিষয় আসে, তখনই সে আটকে যায়। এখানে কারো যদি শুধু মেয়ে সন্তান থাকে, তাহলে তারা বঞ্চিত হয় পিতা-মাতার মৃত্যুর পর। যদি সত্যিকার অর্থেই সম্পদে মেয়েদের অধিকার অর্জিত হতো, তাহলে আমি বলতে পারতাম মেয়েদের সমান অধিকার আছে।

ড. নমিতা হালদার

This browser does not support the audio element.

প্রশাসনে নারীদের সংখ্যা বাড়লেই কি অধিকার বাড়বে?

আইন সংশোধনের জন্য তো বারবার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। সেটা তো এখনো হয়নি। শুধু সংখ্যা বাড়লেই হবে না। আমাদের বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক নামে একটি সংগঠন আছে। তারা তেমনভাবে কোনো দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে পারে না। এই যে মেয়েদের সম্পদে অধিকার নেই, সেই কথাটাও তারা বলে না। নারী ইউএনও'রা গার্ড অব অনার দিতে পারবে না- এটা নিয়েও তারা কোনো প্রতিবাদ করেনি। এই যে মনমানসিকতা. সেটা রয়ে গেছে। আমাদের নীতি নির্ধারকরা যখন এই ধরনের মনোভাব দেখান, তখন সত্যিকারের অসহায় লাগে। আমরা কাদের কাছে যাবো। দেখেন একজন মহিলা নিকা রেজিস্টার পরীক্ষায় প্রথম হলেন। শুধু নারী হওয়ার কারণে তিনি নিকা রেজিস্টার হতে পারবেন না। আদালত থেকেও এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো, যদিও এটা এখনো বিচারাধীন। এই ছোট ছোট জিনিস থেকেই বোঝা যায় নারীদের অধিকার কীভাবে খর্ব করা হচ্ছে। 

প্রশাসনে কাজ করা নারীরা সাধারণ নারীদের অধিকার রক্ষায় কতটুকু ভ‚মিকা রাখেন?

সত্যিকার অর্থে আলাদা করে কোনো ভ‚মিকা রাখছেন না। আমরা যখন গ্রামে কাজ করি তখন কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটা বিষয় হ্যান্ডেল করতে হয়। সাধারণ নারীরা যখন আদালতে আসেন বা জেলা প্রশাসকের কাছে আসেন তখন তারা কী অভিযোগ নিয়ে আসছেন সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখতাম। এখন যেহেতু আমি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য, ফলে আমার চোখ খুলে গেছে। অনেক কিছুই নতুন করে জানছি।

প্রশাসনে কাজ করা নারীরা কতটুকু স্বাধীন?

আমলাতন্ত্রে স্বাধীনতা! আমলাতন্ত্র তো রুলস অব বিজনেজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমি চাইলেই কিছু করতে পারবো না। রুলস আমার জন্য  আছে। আমি যদি কারো জন্য কিছু ভালো করতে চাই, সেই প্যাশন থাকে তাহলে সেটা সম্ভব। আমি যদি মনে করি, আমি ওই পরিবারটিকে প্রতিষ্ঠা, সেটা সম্ভব। এই যে দেখেন প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের ঘর বানিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মতো দেশে এটা তো চিন্তাই করা যায় না। যারা গৃহহীন তারা কিন্তু ইউএনও সাহেবদের দফতরে খুব কমই আসতে পারে। কাউকে ধরে তাদের আসতে হয়। যার মধ্যে প্যাশন থাকে তিনি কিন্তু দরিদ্র মানুষ দেখলেই ডাক দেবেন। কেউ হয়তো ইউএনও অফিসের বারান্দায় ঘুরছেন, তাকে ডেকে বলবেন কেন তিনি ঘুরছেন। জানতে চাইলেই কিন্তু তিনি বুঝতে পারবেন। তিনি হয়ত কোনো সাহায্যের জন্য ঘুরছেন। চাইলেই নারী-পুরুষ সবাই এই ধরনের সাহায্য করতে পারে। এখানে তাদের হাত অনেক বড়। প্রধানমন্ত্রী যাদের ঘর দিয়েছেন কোনো প্রেক্রিপশনের মধ্যে ফেলে কিন্তু তিনি দেননি। প্রধানমন্ত্রী তো বলেননি ওকে দাও আর ওকে দিও না। সবাই ঘর পাবে যাদের ঘর নেই। সেই লোকগুলোকে কিন্তু খুঁজে দিতে হবে ইউএনওদের।

প্রশাসনে কাজ করা নারী কর্মকর্তাদের উপর পুরুষ কর্মকর্তারা কতটা কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করেন?

আমি কর্তৃত্ব বলবো না। ইগনোর করার একটা প্রবণতা আছে। আমরা যখন নতুন চাকরিতে এলাম তখন তো আমাদের গালিই দেওয়া হতো এভাবে, মহিলা অফিসাররা কিছুই পারে না। যেখানে পাঠাই সেখানেই ফাউল করে। একই ধরনের ভুল পুরুষ সহকর্মীরা করলেও গালি দেওয়া হতো শুধু নারী কর্মকর্তাদের। এটা আসলে কর্তৃত্ব না, ব্যাঙ্গাত্মক কমেন্ট। কর্তৃত্ব করার সুযোগ এখন আর নেই। কারণ, মেয়েরা এখন জানে, তাকে কী করতে হবে, কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

দীর্ঘ চাকরি জীবনে নারী কর্মকর্তা হওয়ার কারণে কী ধরণের সংকটে পড়তে হয়েছে?

সত্যিকার অর্থেই নারী হওয়ার কারণে আমি কোনর

 সমস্যায় পড়ি নাই। আমি যখনই কোনো ভালো করতে চেয়েছি, মিটসহকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজটা করেছি। এই যে সর্বশেষ আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করলাম, সেখানে  মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেক নারীকে আমি উদ্ধার করেছি। সব সহকর্মী তখন কিন্তু আমার সঙ্গে ছিলেন। নারী হিসেবে ওরকম কোনো বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়নি। তবে চাকরি জীবনের শুরুতে ১৯৮১ সালে আমি জামালপুরে ছিলাম। তখন ফোন আসলে আমি রিসিভ করার পর ওপ্রান্ত থেকে আমার কণ্ঠ শুনেই বলত, ও বাসায় ভাবী ধরেছেন। স্যার কী আছেন? এরকম পরিস্থিতি ছিল। নারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যখন দায়িত্ব পালন করেছি, তখন দূর দূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসত।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যেসব নারী প্রশাসনে আসেন, তাদের কি কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়?

না, আমি সেটাও দেখিনি। যোগ্যতা এবং দক্ষতা দিয়ে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। 

নারী কোটা থাকা কতটা যৌক্তিক?

মেয়েরা তো পিছিয়ে ছিল। এখনো তো পিছিয়ে আছে। আমি মনে করি, অন্তত ১০ শতাংশ কোটা এখানে থাকা দরকার। কোটাটা তো অসম্মানজনক কিছু না। বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা তো বিশাল পরীক্ষা। এখানে তো পাশ করা লাগে। ভাইবায় গিয়ে যদি সে কোটার আশ্রয় পায় তাহলে তো সমস্যা নেই। পাশ না করলে তো কেউ কোটা পর্যন্ত যেতেই পারে না।

প্রশাসনে কত শতাংশ নারী হলে নারীদের অধিকার সংরক্ষিত থাকবে বলে মনে করেন?

আমি তো মনে করি ৫০ শতাংশ। জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি কী বলে? এসডিজি গোল নম্বর-৫ সেখানে কিন্তু বলা আছে। সংখ্যায় না বাড়লে তাদের পক্ষে ভয়েস রেইজ করবে কে? দু'টো বিষয় নিয়ে আমার উদ্বেগ আছে। একটা হলো, নারী নির্যাতনের বহুমুখিতা। নারী নারীকে নির্যাতন করছে, পুরুষ নারীকে নির্যাতন করছে। ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। তবে আইন দিয়েও গৃহনির্যাতন বন্ধ করা যাচ্ছে না। সিভিল সার্ভিসে একটা ভালো পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্ভিসে চাকরি করা কারো স্ত্রী যদি নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে তিনি সরাসরি জনপ্রশাসনে অভিযোগ করতে পারবেন। তখন এটার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরেকটা হলো, সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা নারীর বোঝা কমাতে চাই, তাহলে নারী-পুরুষ সবাই মিলে গৃহকর্মটা করতে হবে। এটি হলে নারীর জন্য অনেক বেশি সম্মানজনক হবে। বোঝা অনেকটা কমে যাবে। যে নারী সব সময় গৃহে থাকেন তারও কিন্তু সময় সাশ্রয় হবে, একটু প্রশান্তির জায়গা তৈরি হবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ