প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েদের জড়িত থাকার খবরে হতাশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ৷ সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত সাফল্য কারও কাম্য হতে পারে না৷
বিজ্ঞাপন
যে শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ান তাঁরা নিজেদের বাজার বাড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বলে দেন বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্রপতি৷ ‘‘অহন কথা কইলে তো খারাপ কথা কইতে হয়৷ কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে তাঁদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত,’’ বলেন তিনি৷
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ঐ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাঁর ছোটবেলার অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেন৷ সেই সময় নকল করাকে কেমন হেয় চোখে দেখা হতো সেটি বলেন তিনি৷ এখনকার বাবা-মায়েরা সন্তানের সাফল্যের জন্য অসৎ উপায় অবলম্বন করেন বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি৷ ‘‘শোনা যায় এখনকার বাবা-মায়েরা সন্তানদের নকল সাপ্লাই দেন৷ এটা কী করে হয়! এর চেয়ে জঘন্য, লজ্জাকর আর কী হতে পারে,’’ বলেন আব্দুল হামিদ৷ নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত সাফল্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না বলে জানান রাষ্ট্রপতি৷ প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কিছু প্রস্তাবও তুলে ধরেন আব্দুল হামিদ৷
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও প্রোটোকল নিয়ে দুঃখ না পাওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি৷ তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্য যে কোনো পর্যায়ের শিক্ষকদের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেশি সম্মান করে এবং তাঁদের কথা আজীবন মনে রাখে৷ ‘‘আপনারা প্রতিটি ছেলেমেয়ের মনে যেভাবে সারাজীবন থাকবেন এটাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না,’’ প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন রাষ্ট্রপতি৷
জেডএইচ/ডিজি
২০১৬ সালের জুন মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের মর্যাদা
শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কেমন চোখে দেখেন? ঢাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে সেটিই জানতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্ত সাদ
ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী অনন্ত সাদ একজন শিক্ষকের ছেলে৷ তাঁর মতে, ‘‘মাতা-পিতার পরেই যাঁদের স্থান তাঁরাই হলেন শিক্ষক৷ আর এটা আমরা শিখেছি পরিবার থেকেই৷ শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে যতই রাগারাগি করেন না কেন সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করে থাকেন৷ আমার বাবাও একজন শিক্ষক এবং তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে শিক্ষকদের সম্মান করতে হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
কাজী ফয়সাল আরেফিন
তিনিও ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী৷ তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে৷ তাই শুধু ছাত্রদের নয়, সবারই উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোহাম্মদ নাঈম
ঢাকার নটরডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম৷ তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষক হলেন আমাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর৷ সেই শিক্ষকদের যদি সম্মান করা না হয় তাহলে আমাদের উন্নতি সম্ভব নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সুজানা জাহিদ
ঢাকার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুজানা জাহিদ মনে করেন, শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতোই৷ সুজানা জানালেন, বাবা মা-কে যতটা সম্মান করেন, ঠিক ততটাই সম্মান করেন তিনি শিক্ষকদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুনিয়া
ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিয়া শিক্ষকদের পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেই দেখেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সারজিমা হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষার্থী সারজিমা হোসেন তৃমার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের সমাজে বর্তমানে শিক্ষকদের সম্মান অনেক কমে গেছে৷ তবে আমরা সবসময়ই শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিয়ে থাকি৷ আরেকটা বিষয় হলো, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষদের অনেক হেয়, অসম্মান করা হয় যেটা বন্ধ হওয়া উচিত৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মেহনাজ জাহান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের আরেক শিক্ষার্থী মেহনাজ জাহান বলেন, ‘‘শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন৷’’ তাঁর মতে, শিক্ষকরা একেকজন পিতা-মাতা৷ সুতরাং তাঁরা যদি কোনো ভুলও করে থাকেন সেজন্য তাঁদের কোনোভাবেই অসম্মান করা যাবে না৷ ‘‘আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সামান্য কিছু হলেও আমরা তাঁদের কাছে শিখেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইফতেখার ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের হাত ধরে এতদূর এসেছি, তাঁরাই হলেন আমাদের শিক্ষক৷ তাই তাঁদের সম্মান সবার আগে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মাহবুবুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান৷ তাঁর মতে, বাবা-মা কোনো ভুল করলে যেমন আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা, তেমনি শিক্ষকরাও ভুল করলে তাঁদের অসম্মান করতে পারিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
তাহমিদ ইবনে আলম
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, শিক্ষকরা হাতে ধরে সবকিছু শিক্ষা দেন, সুতরাং তাঁদের সম্মান সবার আগে৷ কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত হবে না শিক্ষকদের অসম্মান করা৷