1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্নফাঁস কারা করে, কিভাবে করে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ জানুয়ারি ২০১৯

অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রশ্নফাঁসের মূল দু'টি চক্রকে আটকের দাবি করে প্রশ্নফাঁসের পদ্ধতির কথা প্রকাশ করেছে৷ তারা জানিয়েছে, সরাসরি প্রেস থেকে ও পরীক্ষার হল থেকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস করা হয়৷

ছবি: picture-alliance/landov

সিআইডি প্রশ্নফাঁসকারীদের ধরতে ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে আসছিল৷ এ পর্যন্ত চক্র দু'টির হোতাসহ মোট ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি৷ তাদের মধ্যে, শিক্ষক, ছাত্র, প্রেস কর্মচারী, ব্যাংকের কর্মকর্তা রয়েছেন৷ দুই চক্রের শীর্ষ ৬ জনের ৩০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজও পাওয়া গেছে৷ প্রতিটি প্রশ্ন বিক্রি হতো ৫ লাখ টাকায়৷ প্রশ্নফাঁসকারী চক্র এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতো বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন সিআইডি'র বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম৷

গত কয়েকদিনের অভিযানে তারা ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে৷ জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হাফিজুর রহমান হাফিজ, অগ্রণী ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান রমিজ, তৃতীয় বর্ষের সাইদুর রহমান সাইদ এবং চতুর্থ বর্ষের মুহাইমিনুল ইসলাম, গ্রীণ ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিমন হোসেন, ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্র অসীম বিশ্বাস ও পিওন মোশারফ হোসেন এবং মাসুদ রহমান তাজুল৷ এর মধ্য দিয়ে ঢাকায় প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের মূলোৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে সিআইডি৷

যেভাবে প্রশ্নফাঁস করা হয়:

মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ‘‘দুইভাবে প্রশ্নফাঁস করা হয়৷ একটি পদ্ধতি হলো ডিজটিাল ডিভাইস ব্যবহার করে৷ এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনেটর মধ্যেই হল থেকে বাইরে প্রশ্ন পাঠানো হয়৷ আর ওই প্রশ্নের উত্তর একই ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ দ্রুত বাইরে প্রশ্ন পাঠাতে চক্রকে পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনো কর্মচারী বা শিক্ষক সহায়তা করতেন৷ আর পরে বাইরে থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর পাঠানো হতো৷’’ পদ্ধটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে আগেই পরীক্ষার্থীতের চুক্তি হয়৷ সেই অনুযায়ী যত জন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে চুক্তি হয়, তত জনের আন্ডারওয়্যারের ভিতরে ডিভাইসটি দিয়ে দিত৷ এটি ব্লুটুথের মাধ্যমে কানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকত৷ আর ওই ডিভাইসের সঙ্গে বাইরের চক্রও সংযুক্ত থাকত৷ তারা প্রশ্ন পেয়ে তার উত্তর তৈরির পর ডিভাইসে কল দিয়ে তা পড়ে শোনাতো৷ পরীক্ষার্থীর ডিভাইসে কল সয়ংক্রিয়ভাবে রিসিভ হতো৷ পরীক্ষার হলে থাকা পরীক্ষার্থীরা তা তাদের ডিভাইসে শুনে উত্তর লিখত৷ প্রশ্ন যেহেতু এমসিকিউ পদ্ধতি ( ইয়েস নো/ অপশন) তাই এটা সহজেই তারা করতে পারত৷’’

দুইভাবে প্রশ্নফাঁস করা হয়: মোল্যা নজরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে সরসারি প্রশ্নফাঁস হতো প্রেস থেকে৷ প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে প্রেসের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর যোগসাজশে এটা সম্ভব হতো৷ চক্রটি প্রশ্নফাঁসের পর যেসব পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বিক্রির চুক্তি করত, তাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যেত৷ তাদের হাতে প্রশ্ন দিতো না৷ তারা পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাতো৷ মোল্যা নজরুল বলেন, ‘‘এটা চক্রের ব্যবসায়িক কৌশল, কারণ, প্রশ্ন দিয়ে দিলে তা আবার তারা বিক্রি করতে পারত, এই আশঙ্কায় তারা এভাবে কাজ করত৷’’

কারা জড়িত?

সিআইডি দাবি করেছে, এই প্রশ্নফাঁসের দুই পদ্ধতির চক্রও দু'টি৷ সরসরি প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতা রাকিবুল হাসান এহসামী৷ আর ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস চক্রের হোতা ৬ জন৷ এরা হলেন, অলিপ কুমার বিশ্বাস. ইব্রাহিম মোল্যা, হাফিজুর রাহমান হাফিজ, মাসুদুর রহমান তাজুল, মোস্তফা কামাল এবং আয়ুব আলি বাঁধন৷ এদের সবাইকেই আটক করা হয়েছে৷

রাকিবুল হাসান এহসামী নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা৷ তিনি পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার অতিরিক্তি দায়িত্বেও ছিলেন৷ অলিপ কুমার বিশ্বাস বিকেএসপির সহকারি পরিচালক, ইব্রাহীম মোল্যা ৩৮-তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত৷ মোস্তফা কামাল বিএডিসির সহকারি পশাসনিক কর্মকর্তা৷ 

সিআইডি জানায়, এদের প্রত্যেকের অধীনে আলাদা গ্রুপ আছে৷ ওইসব গ্রপের আবার সাব গ্রুপ আছে৷ পরীক্ষার সময় সাময়িকভাবেও কেউ কেউ যুক্ত হন৷ ঢাকান্দ্রিক বিভিন্ন গ্রুপে শতাধিক সদস্য আছে৷ আবার প্রশ্ন সলভ করার জন্য মেধাবীদের ভাড়াও করা হয়৷ সিআইডি কর্মকর্তা নজরুল  ইসলাম মোল্যা জানান, ‘‘গড়ে একটি প্রশ্নপত্র ও উত্তর ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হতো৷ আর এই চক্রের শীর্ষ ৬ জনের নগদ টাকাসহ ৩০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ আমরা পেয়েছি৷’’

সিআইডি সদরদপ্তরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নফাঁসে ব্যবহৃত শতাধিক ডিজিটাল ডিভাস দেখানো হয়৷ জানানো হয়, এগুলো ভারত থেকে এনেছে চক্রের সদস্যরা৷ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ পর্যন্ত ৪৬ জনকে আটক করে মামলা দেয়া হলেও আসামির সংখ্যা শেষ পর্যন্ত শতাধিক হবে৷

মোল্যা নজরুল জানান, ‘‘এই চক্রের সঙ্গে শিক্ষকরাও জড়িত৷ আমরা একজন শিক্ষককেও গ্রেপ্তার করেছি৷’’

এক সাংবাদিক, একটি টিভি অনুষ্ঠান:

প্রশ্নফাঁনের এই চক্রগুলোকে চিন্তিত করে আইনের আওতায় আনতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪-এর অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘সার্চ লাইট' এবং তার প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ আল ইমরান৷ এ কারণে ইমরানকে সিআইডি বৃহস্পতিবার ‘আউটস্ট্যান্ডিং জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড' দিয়েছে৷

ইমরান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি আমার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে চক্রগুলোকে চিহ্নিত করার পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের কাজ করে৷ এসব প্রক্রিয়ায়ও পুলিশ আমার কাছে থেকে তথ্যগত সহায়তা নিয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘গত বছর অনুসন্ধান করতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীর খোঁজ পাই যে ভর্তি পরীক্ষায় ৪৮ তম হয়েছে৷ সে প্রশ্ন আগে পেয়েছে৷ কিন্তু ইউনিট তো একাধিক৷ তার নামও জানা নেই৷ আমি নানা কৌশল অবলম্বন করে তাকে চিহ্নিত করি৷ এরপর পুরান ঢাকায় তার কাছে গেলে এক পর্যায়ে সে সব কিছু স্বীকার করে৷ সেখান থেকেই আমি একটার পর একটা প্রশ্নফাঁস চক্রের সন্ধান পাই৷ এবং তা প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে থাকি৷’’

ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনা হয়: ইমরান

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ভারতের মুম্বাইসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আনা হয়৷ ১০ হাজার টাকা দাম পড়ে৷ তবে এটা দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস নয়, পরীক্ষার্থীদের হলে উত্তর পাঠানো হয়৷ পরীক্ষার ৫-১০ মিনিট আগে  অথবা পরীক্ষা শুরুর পরপরই প্রশ্ন ফাঁস হয় পরীক্ষার হল থেকে৷ আর তার উত্তর তৈরি করার জন্য বাইরে চক্রের টিম প্রস্তুত থাকে৷ ডিভাইসটি অনেক ছোট, যা  কানে থাকে৷ ওই ডিভাইসের একটা নাম্বার থাকে, সেই নাম্বারে বাইরে থেকে ফোন কল দিয়ে উত্তর পড়ে শোনানো হয়৷ প্রতিটি উত্তর তিনবার করে পড়া হয়৷’’

সরাসরি প্রশ্নফাঁস বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরাসরি প্রশ্নফাঁস হয় সাধারণত বাইরের প্রেস থেকে৷ যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ছাঁপা হতো৷ আমি দেখেছি, সেখান থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে৷ পরীক্ষার ২-৩ দিন আগে ফাঁস হয়৷ আমি অনুসন্ধানে দেখিয়েছিলাম, একজন প্রেস কর্মচারী ও বিকেএসপি'র  একজন কর্মকর্তা কিভাবে প্রশ্ন ফাঁসের পর পরীক্ষার্থীদের একটি কক্ষে রেখে উত্তর মুখস্থ করিয়ে হলে পাঠায়৷ তারা সরাসরি প্রশ্ন দেয় না৷ কিন্তু একজন পরীক্ষার্থী যে-কেনোভাবে প্রশ্ন হাতে লিখে নিয়ে যাওয়ায়, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তখন ভাইরাল হয়৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মূল হোতারা একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা পায়৷ তাদের অধীনে ৭০ থেকে ১০০ জন পরীক্ষার্থী থাকে৷ পরের টায়ারে টাকা বাড়ে, কিন্তু পরীক্ষার্থী কমে৷’’

২০১৭ সালের মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ