বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ২২ জনের আম্পায়ার-ম্যাচ অফিসিয়াল প্যানেলে আইসিসি’র এলিট প্যানেলের ১২ জনই আছেন৷ আছেন টপরেটেড ইমারজিং আম্পায়াররাও৷ আছে সর্বশেষ প্রযুক্তি৷ তাতেও প্রশ্নমু্ক্ত হবে কি আম্পায়ারিং?
বিজ্ঞাপন
গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচটি কে ভুলতে পারবে? ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে রুবেল হোসেনের ফুলটস বলটি রোহিত শর্মার কোমরের নীচে থাকলেও, লেগ আম্পায়ার আলিম দারের পরামর্শে ‘নো বল' ডাকেন ইয়ান গোল্ড৷ শুধু ঐ সিদ্ধান্তের কারণেই হোক বা না হোক, শেষ চারের টিকিট আর পাওয়া হয় না টাইগারদের৷
ওই ‘নো বল'টি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দগদগে ঘা৷ তবে বিশ্বকাপ বা ক্রিকেটের বড় আসরে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের সিদ্ধান্ত নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ একটা সময়ে তো এমনও ছিল যে, এক দেশ আরেক দেশে গিয়ে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে নাক-চোখের পানি এক হয়ে যেতো৷ কারণ, স্বাগতিক দেশের আম্পায়াররা থাকতেন দায়িত্বে৷ তাইতো পরে নিরপেক্ষ দেশের আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি৷
সাবেক অধিনায়কদের চোখে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ
এবারের বিশ্বকাপ কেন আলাদা? কার ব্যাটে উঠবে ঝড়? কোন বোলার ত্রাস ছড়াবেন? সেরা অধিনায়কই বা কে হবেন? কতদূর যাবে বাংলাদেশ? কে নিতে পারে ট্রফি? এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়করা৷
ছবি: Getty Images/Graham Chadwick/ALLSPORT
হাবিবুল বাশার
ফরম্যাটের কারণে এবারের বিশ্বকাপ জমজমাট হবে৷ কারণ, প্রথমত, কোনো দুর্বল দল এই আসরে খেলার সুযোগ পায়নি৷ দ্বিতীয়ত, সব দলকে সবার সাথে খেলতে হবে৷ ফেভারিট হিসেবে ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখবো৷ বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে, তবে আমার বিশ্বাস পঞ্চম হতে পারে৷ আলোচনায় না থাকলেও, চমক দেখাতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ তবে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকেই এগিয়ে রাখবো, কারণ, তার ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতা৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু
সাম্প্রতিক ফর্ম এবং হোম কন্ডিশন বিবেচনায় আমি ইংল্যান্ডকেই ফেভারিট মনে করি৷ অস্ট্রেলিয়ারও ভালো সম্ভাবনা আছে৷ তবে বড় আসরে পাকিস্তান সব সময়ই চমক দেখিয়ে থাকে৷ এবারের আসরে বাংলাদেশ দল নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী৷ আমার বিশ্বাস, নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে টাইগাররা সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা রাখে৷ মুশফিকের ব্যাটিং সবার নজর কাড়তে পারে৷ মাশরাফির অধিনায়কত্ব বাংলাদেশ দলের সাথে বাকি দল গুলোর ব্যবধান গড়ে দিতে পারে৷
ছবি: Ratan Gomes
মোহাম্মদ আশরাফুল
সেরা ১০ দল খেলবে এবারের বিশ্বকাপে, এই কারণে লড়াইটা বেশি হবে৷ আগের আসরগুলোতে গ্রুপে এক বা দুটি তুলনামুলক দুর্বল দল সুযোগ পেতো৷ এবার সেটা হচ্ছে না৷ ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ রেকর্ড সন্তোষজনক না হলেও, এবারের দলটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে৷ ইংলিশদের শিরোপা জয়ের অপেক্ষার অবসান হতে পারে বলে আমি মনে করি৷ আফগানিস্তান বাকি দলগুলোর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকেই এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: privat
আমিনুল ইসলাম বুলবুল
টি টোয়েন্টির কারণে ক্রিকেটে অনেক গতি এসেছে৷ তাই ব্যাটসম্যানরাই শাসন করবে এবারের আসর৷ সম্ভাবনা অনেকের থাকলেও ইংল্যান্ডের জস বাটলারকেই এগিয়ে রাখবো৷ এই ইংলিশ রয়েছেন দারুণ ছন্দে৷ বাটলার ছন্দে থাকলে এবারের আসরে তাঁর দল ইংল্যান্ড অনেক দূর যাবে৷ আর বল হাতে রশিদ খানের চমক দেখার অপেক্ষায় আছি৷ বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মঞ্চে এই লেগ স্পিনার ব্যাটসম্যানদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন৷
ছবি: Ratan Gomes
খালেদ মাহমুদ সুজন
আমি পুরো আসরে বাংলাদেশের চমক দেখার অপেক্ষায়৷ আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাবে৷ সাকিবের এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ ঘূর্ণি বোলিংয়ের সাথে তার অভিজ্ঞতা যে কোনো দলের বিপক্ষেই ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা রাখে৷ নিজের সেরাটা খেলতে পারলে শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের তালিকায় আশা করি তামিমকে৷ আর অধিনায়ক মাশরাফি যে ছন্দে আছে তা আমাকে আরো আশাবাদী করে তুলছে বাংলাদেশকে নিয়ে৷
ছবি: privat
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু
ইংল্যান্ডের পরই ভারত শিরোপার অন্যতম দাবীদার৷ এই দলে আছে কোহলি, ধোনির মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, বুমরার মতো বোলার৷ সব মিলে ভারত শিরোপা জিতলে মোটেও অবাক হবো না৷ ইংল্যান্ড হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আবেগের জায়গা৷ কারণ এখানে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের৷ বাংলাদেশকে বলতে চাই, আসরের ডার্ক হর্স, যে দলটা তিন বা চারটা জয় পেতে পারে৷ তবে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার অধিনায়কত্বে পাল্টে যেতে পারে অনেক কিছুই৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
খালেদ মাসুদ পাইলট
ফেভারিটের তালিকায় সবার আগে ইংল্যান্ডকে রাখলেও আমার নজর থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর৷ এই দলটা বিশ্বকাপে এসে চোকার হয়ে যায়৷ আমার বিশ্বাস, এবার তারা কাউকে সুযোগ দেবে না৷ কঠিন হলেও বাংলাদেশের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা দেখছি৷ কন্ডিশন পেসারদের অনুকুলে হলেও বল হাতে নজর কাড়বে যে কোনো লেগ স্পিনার৷ আর ব্যাট হাতে ওয়ার্নার ও কোহলি শাসন করবে বলে আমার বিশ্বাস৷ অধিনায়কদের তালিকায় মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকেই এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
আকরাম খান
ফরম্যাটের কারণেে এবার দল গুলোর ব্যবধান খুবই কম৷ সবার সমান সুযোগ থাকবে৷ তাই বাংলাদেশকেই আমি এগিয়ে রাখবো৷ অন্য দলগুলোর তুলনায় অভিজ্ঞতায় আমরা অনেক এগিয়ে৷ আর দলের তরুণ ক্রিকেটাররাও রয়েছে দারুণ ছন্দে৷ সম্প্রতি শেষ হওয়া তিন জাতির সিরিজের ট্রফি জয় আমাকে আরো বেশি আশাবাদী করে তুলছে৷ জাসপ্রিত বুমরা যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ আর ব্যাটসম্যানদের তালিকায় কোহলিকে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
8 ছবি1 | 8
শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির অগ্রসরতা আম্পায়ারিংকে আরো নিখুঁত ও খেলোয়াড়-বান্ধব করেছে৷ দলগুলো আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারছে৷ আম্পায়াররা থার্ড আম্পায়ারের সহযোগিতা নিতে পারছেন৷ এতে আগের চেয়ে খেলার সার্বিক মান বেড়েছে, তা মানতেই হবে৷ কিন্তু ক্রিকেট কি বিতর্কের উর্ধ্বে যেতে পেরেছে? অনেকটা পেরেছে৷ কিন্তু পুরোপুরি পারেনি৷ রুবেল-রোহিত শর্মার ঘটনাটি এর বড় উদাহরণ৷
২০১৮ সালের শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি কিংবা আরব আমিরাতে এশিয়া কাপেও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হয়েছিল বাংলাদেশ৷ নিদাহাসের ফাইনালের আগের ম্যাচে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের৷ প্রথম দুই বলে টানা দু'টি বাউন্সার দেন শ্রীলঙ্কান পেসার উদানা৷ তারপরও ‘নো বল' দেননি আম্পায়ার৷ শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এক বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷
এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা লিটন দাশের স্টাম্পিং নিয়েও রয়েছে বিতর্ক৷ থার্ড আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার রড টাকারের কাছে যাবার পরও তিনি ব্যাটসম্যানকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট' দেননি, যা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে৷
শুধু বাংলাদেশই নয়, বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নয়, বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েছে আইপিএলের মতো বিখ্যাত টুর্নামেন্টও৷
এবারের আইপিএলে লাসিথ মালিঙ্গার পরিষ্কার নো বলটি এড়িয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন আইসিসি'র আম্পায়ারদের এলিট সদস্য ভারতের সুন্দারাম রবি৷ বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলি সরব হয়ে ওঠেন৷ এলিট প্যানেলের ১২ জন সদস্যের মধ্যে পারফরম্যান্সের দিক থেকে রবি সবার নীচেই ছিলেন৷ তাই বিশ্বকাপের পর এলিট প্যানেল থেকে ছিটকে পড়তে পারেন তিনি৷ বিশ্বকাপের আম্পায়ারিংয়ের ২২ জনের প্যানেলে তিনিই একমাত্র ভারতের প্রতিনিধি৷
আধুনিক যুগে এসে প্রযু্ক্তির কল্যাণে এগুলো অনেক কমে গেলেও, বন্ধ হয়নি৷ হট স্পট, হক আই, এলইডি লাইটিং, স্পাইডার ক্যাম, বল স্পিড মেজারমেন্ট—প্রযুক্তির এসব সুবিধা নিয়েও এখনো অনেকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন৷
কখনো কখনো প্রশ্ন ওঠে আম্পায়ারদের ‘নৈতিকতা' নিয়েও৷ বিশেষ করে বড় বড় দলগুলোর পক্ষে আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন, এমন একটি ধারণা চালু আছে বহুদিন ধরে৷ এই ধারণার প্রাবল্য কমলেও অস্তিত্ব আছে এখনো৷ সমস্যা সেখানেই৷
নৈতিকতার প্রশ্নে আম্পায়াররা বিদ্ধ হবেন না, উতরে যাবেন, সেই প্রত্যাশা থাকলো৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো আসরে, প্রচণ্ড চাপ থাকে৷ সেই চাপ নিয়েই আম্পায়াররা আম্পায়ারিং করেন, যা অত্যন্ত কঠিন৷ সেই কঠিন কাজটি করতে গিয়ে ভুল হতেই পারে৷ কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, সেই ভুলটা যেন অনিচ্ছাকৃত হয়৷ যে কোনো দলই, হোক সে ‘ছোট' কিংবা ‘বড়'—বাড়তি সুবিধা বা অসুবিধা কেউ পাবেন না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷